নিউইয়র্কের জ্যামাইকায় বাংলাদেশি একটি পিৎজা রেস্টুরেন্টের মালিকের ছেলেকে রক্তাক্ত জখম করেছে একদল দুর্বৃত্ত। ৯-১০ জনের সংঘবদ্ধ দলটি ফিল্মি স্টাইলে ওই রেস্টুরেন্টের সামনে তাকে মারধর করে টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। গত ২০ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাত আনুমানিক ১০টার দিকে জ্যামাইকার ১৭১-১৬-এ হিলসাইড অ্যাভিনিউয়ের কয়লা পিৎজা অ্যান্ড গ্রিল রেস্টুরেন্টে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি স্থানীয় গোয়েন্দা পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
জানা গেছে, ঘটনার রাতে কয়লা পিৎজা অ্যান্ড গ্রিলের মালিক এম জাকির হোসেনের ছেলে দৌলত জাহান জাকির গাড়িযোগে একটি ডেলিভারি অর্ডার নিয়ে বের হন। রাস্তায় বের হওয়ার তিন-চার মিনিটের মাথায় একটি বিএমডব্লিউ ও একটি ইনফিনিটি সিডান কার ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে দৌলতের গাড়িটিকে দুই পাশ দিয়ে ঘিরে মাঝে ফেলে চাপ দিয়ে থামানোর চেষ্টা করে। দৌলত বিষয়টি বুঝতে পেরে গাড়ি নিয়ে দ্রুত সরে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু গাড়ি দুটিতে থাকা ছিনতাইকারীরা চিৎকার করে দৌলতকে গাড়ি থামিয়ে নামতে বলে। তা না হলে গুলি করবে বলে হুমকি দেয়। এ অবস্থায় প্রচণ্ড ভয় পেয়ে দৌলত জাকির ডেলিভারি বন্ধ রেখে রেস্টুরেন্টে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু দুর্বৃত্তরা দৌলতের পিছু নিয়ে কয়লা পিৎজা অ্যান্ড গ্রিল পর্যন্ত ছুটে যায়। দৌলত নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য রেস্টুরেন্টে ঢোকার আগেই গাড়ি দুটি থেকে ৯-১০ জন বের হয়ে তাকে বেদম মারধর শুরু করে। তারা দৌলতের নাক-মুখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি ও লাথি মারে। এতে তার নাক ও মুখ ফেটে রক্ত বের হয়। এরপর গাড়ি নিয়ে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।
পরে রক্তাক্ত অবস্থায় দৌলতকে উদ্ধার করে এলআইজে লং আইল্যান্ড হসপিটালে ভর্তি করা হয়। সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার এক্স-রে ও এমআরআই করে তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেন। এখনো তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এ ব্যাপারে দৌলত জাহান জাকির বলেন, অর্থ ছিনতাই ও তাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়। বিষয়টি তিনি স্থানীয় গোয়েন্দা পুলিশকে অবহিত করেছেন। তবে পুলিশের পদক্ষেপে তিনি সন্তুষ্ট নন। তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তিনি আরও বলেন, এ দেশে সবার ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার আছে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। ন্যায়বিচারের জন্য তিনি শেষ পর্যন্ত লড়ে যাবেন। এ জন্য তিনি বাংলাদেশি কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ ও সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেন।
কয়লা পিৎজা অ্যান্ড গ্রিলের মালিক এম জাকির হোসেন বলেন, যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা বাংলাদেশি। তাদের পরিচয়, ফোন নম্বর, ফেসবুক আইডিসহ সব ধরনের ইনফরমেশন আমরা জোগাড় করেছি। ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের চেহারা চিহ্নিত করা হয়েছে। বিভিন্নজনের সহায়তায় তাদেরকে চিহ্নিত করা হয়। তাদেরকে অনেকেই চেনেন। আমরা সবকিছু পুলিশের কাছে দিয়েছি। আমরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই ও বিচার চাই।
তিনি আরও বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি কুইন্স ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির অফিসেও যোগাযোগ করব এবং তার অফিসে পুরো বিষয়টি জানাব। জ্যামাইকায় এই সংঘবদ্ধ চক্রটি বিভিন্নভাবে মানুষের ক্ষতি করছে। তাদেরকে প্রতিহত ও প্রতিরোধ করতে হবে। এলাকার ইয়ং জেনারেশনকে এদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। বিষয়টি নিয়ে আমাদের কমিউনিটির নেতাদের সঙ্গেও কথা বলব। কারণ এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। আরও বলব, যেসব পরিবারের সন্তানেরা এ ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাদের পরিবারেরও উচিত সন্তানদের বিষয়ে খোঁজখবর রাখা। এ ধরনের গ্যাং দিনে দিনে অপরাধের মাত্রা বাড়াতে থাকলে আমাদের কমিউনিটির সুনাম নষ্ট হবে।
তিনি বলেন, আমার ছেলেকে যারা মারধর করেছে, তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো শত্রুতা নেই। ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যেই তারা এমনটি করেছে। এটি আমাদের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান। আমি, আমার স্ত্রী ও আমার ছেলে সেখানে কাজ করে। আমার ছেলেই মূল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করে। দোকানের সব রেসিপি তারই দেওয়া।


ঠিকানা রিপোর্ট


