ভারত সরকারের ভিসানীতি অপেক্ষাকৃত সহজ করা হলেও ভিসাপ্রার্থীদের দুর্ভোগের অবসান হয়নি। বয়স্ক ছাড়াও মেডিকেল ভিসা, ভ্রমণের জন্য বিজনেস ভিসাপ্রার্থীদের দীর্ঘ সময় নিয়ে স্বল্প সময়ের জন্য ভিসা দেওয়া হয়। এত বিপুলসংখ্যক ভিসাপ্রার্থীর আবেদন পড়ে যে, ঢাকাস্থ ভারতীয় ইমিগ্রেশন কর্মীদের রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়। এ অবস্থার অবসানে বাংলাদেশ থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি তুলেছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ৬৫ বছর ও তার বেশি বয়স্কদের পাঁচ বছরের জন্য ভিসা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে সহজ শর্তে দীর্ঘমেয়াদি ভিসা ও মাল্টিপল ভিসা ইস্যু করা, কোনো চেকপোস্ট নির্দিষ্ট না করে যেকোনো চেকপোস্ট দিয়ে যাতায়াতের সুবিধাসহ আরও কিছু প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের প্রস্তাব বিবেচনায় নেওয়ার কথাও জানিয়েছে। দুই দেশের মধ্যে শিগগিরই নতুন ভ্রমণ চুক্তি ও ভিসা প্রসেসিং সহজতর করা হবে। ভ্রমণ চুক্তি হলে দুই দেশের মধ্যে যাতায়াতে বিদ্যমান সমস্যাগুলো কেটে যাবে, ভিসাপ্রাপ্তি সহজতর হবে।
বাংলাদেশ থেকে ভিসার জন্য আবেদনকারীদের বড় অংশই উন্নত চিকিৎসার জন্য আবেদন করেন। চেন্নাই, নয়াদিল্লি, বেঙ্গালুরু, কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতালে তারা চিকিৎসা নেন। বর্তমান ব্যবস্থায় একজন যাত্রী যে চেকপোস্ট দিয়ে দেশ থেকে বের হন, তাকে সেই চেকপোস্ট দিয়েই দেশে ফিরতে হয়। প্রস্তাবিত ব্যবস্থায় চিকিৎসার জন্য আবেদনকারীসহ ট্যুরিস্ট ভিসা দেখিয়েও যেকোনো চেকপোস্ট দিয়ে যাতায়াত করা যাবে। রোগীকে নির্দিষ্ট হাসপাতালেই চিকিৎসা নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ভিসায় হাসপাতালের নামও উল্লেখ করা হয়। তাকে ভারতেরই অন্য কোনো হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয় না। এ অবস্থার অবসান ঘটাতে বলা হয়েছে, যাতে একজন রোগী তার প্রয়োজনমাফিক ভারতীয় কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি ছাড়া অন্য একাধিক হাসপাতালে ভর্তি হতে ও চিকিৎসা নিতে পারেন। বয়স্ক ব্যক্তিদের পাঁচ বছরের জন্য ভিসা দিতে বাংলাদেশ প্রস্তাব করেছে। ৭৫ বছরের বেশি বয়স্কদের পাঁচ বছরের জন্য ভিসা ব্যবস্থা ইতিপূর্বে চালু ছিল। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ পরে তা রহিত করে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সহজ শর্তে দীর্ঘমেয়াদি ভিসা, মাল্টিপল ভিসা ইস্যু করা, অনলাইনে ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর আবেদনের সুযোগ প্রদান এবং দ্রুত ভিসা প্রসেসিং করার জন্য বাংলাদেশের প্রস্তাব ভারত সরকার বিবেচনার কথাও জানিয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সহজে যাতায়াতের জন্য প্রথম ভিসা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভিসা দেওয়ার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। চুক্তিটি সর্বশেষ নবায়ন করা হয় ২০১৩ সালে। চিকিৎসা, ভ্রমণ, বাণিজ্যসহ বহুবিদ কারণে যাত্রীসংখ্যা ব্যাপকভাবে বাড়ায় যাত্রীদের সমস্যা, হয়রানিও বেড়েছে। ভারতীয় সংশ্লিষ্ট কর্মীদের ওপর চাপও অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। বাংলাদেশ থেকে বছরে সাত লক্ষাধিক মানুষ ভারতে যায়। ভারত থেকে প্রায় দুই লাখ ভারতীয় বাণিজ্য, ভ্রমণ ভিসায় বাংলাদেশে আসেন। ভিসা পেতে তাদেরও যথেষ্ট হয়রানি পোহাতে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। নতুন ব্যবস্থা প্রবর্তিত হলে এর অবসান হবে বলেই আশা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ নিয়ে ভারতকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেওয়ার পর স্বল্প সময়ের মধ্যেই নতুন চুক্তি করার সম্ভাবনা রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, এ বছরের শেষার্ধেই চুক্তি হবে।