Thikana News
১৪ মার্চ ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নুসরাতের অনন্য রেকর্ড

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নুসরাতের অনন্য রেকর্ড
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আদালতের বিচারক নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নুসরাত জাহান চৌধুরী। 
তিনি নিউইয়র্কের (ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্ট) পূর্বাঞ্চলীয় আদালতের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। নুসরাতকে নিয়োগ দেওয়ার এই প্রস্তাব ১৫ জুন বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে ৫০-৪৯ ভোটে পাস হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রথম বাংলাদেশি মুসলিম নারী হিসেবে মার্কিন আদালতের ফেডারেল বিচারক হওয়ার অনন্য রেকর্ড গড়েছেন নুসরাত।
নুসরাতের ডিস্ট্রিক্ট জজ হওয়ার খবরটি নিশ্চিত করে টুইট করেন নিউইয়র্কের ডেমোক্রেটিক সিনেটর চাক শুমার। তিনি বলেন, নুসরাতকে নিয়োগের সুপারিশ করতে পেরে আমি গর্বিত। নুসরাত প্রথম বাংলাদেশি মার্কিন নাগরিক ও প্রথম মুসলিম নারী হিসেবে ফেডারেল বিচারক হয়ে ইতিহাস গড়েছেন।
২০২২ সালের জানুয়ারিতে নুসরাতকে ফেডারেল বিচারক হিসেবে মনোনয়ন দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। নিউজার্সিতে কর্মরত যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম মুসলিম ডিস্ট্রিক্ট জজ জাহিদ কুরাইশি জানান, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের অঙ্গীকার পূরণ করতে এবং মার্কিন বিচার বিভাগে বৈচিত্র্য আনার লক্ষ্যে নুসরাতসহ সাতজনকে ফেডারেল বিচারক পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। প্রেসিডেন্টের এ মনোনয়নে সমর্থন জানায় কয়েকটি সামাজিক ন্যায়বিচার, নাগরিক স্বাধীনতা এবং মুসলিম অধিকার সংস্থা।
নুসরাত নিউইয়র্কের ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্ট আদালতের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। এটি যুক্তরাষ্ট্রের ব্যস্ততম আদালতগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই আদালতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে, বেশ কিছু বিচারাধীন রয়েছে। সম্প্রতি নিউইয়র্কের রিপাবলিকান নেতা জর্জ সেন্তোসের অর্থ আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের মামলাটিও এ আদালতে বিচারাধীন ছিল।
নুসরাতের নিয়োগটি যুক্তরাষ্ট্রের বিচারিক ব্যবস্থায় একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। অনেকের মতে, দেশটির বিচারিক ব্যবস্থায় মুসলিম সম্প্রদায় বৈষম্য ও নাগরিক স্বাধীনতার ক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার হয়। নুসরাতের ফেডারেল বিচারক হওয়ার মনোনয়নকে স্বাগত জানিয়ে গত বছর কয়েকটি সংস্থা সিনেটর ডিক ডারবিনের কাছে একটি চিঠি লিখেছিল। ওই চিঠিতে সংস্থাগুলো বলেছিল, নুসরাত যে নিউইয়র্কে দায়িত্ব পালন করবেন, সেখানে বাংলাদেশি আমেরিকান ও মুসলিম সম্প্রদায়ের অনেক মানুষ বসবাস করেন। চিঠিতে আরও বলা হয়েছিল, নুসরাতের মনোনয়ন চূড়ান্ত হলে আদালতে ব্যক্তিগত এবং পেশাদারত্বে বৈচিত্র্য আসবে, যা বিচারিক ব্যবস্থার ওপর মানুষের বিশ্বাস বাড়ানোর জন্য এবং আদালতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য খুবই প্রয়োজন। এদিকে নুসরাত ফেডারেল বিচারক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সব মুসলিম সংস্থা।
গত বছরের ১৯ জানুয়ারি হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে বিচার বিভাগীয় মনোনীতদের তালিকা প্রকাশ করে। তিনি ফেডারেল সরকারের নো ফ্লাই লিস্ট এবং নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের শহরের মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর নজরদারির বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করে মামলাসহ অসংখ্য নাগরিক অধিকারের মামলায় জড়িত ছিলেন। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ডেমোক্র্যাটিক সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা চাক শুমার আনুষ্ঠানিকভাবে নুসরাত চৌধুরীকে নিউইয়র্কের ফেডারেল বেঞ্চে নিয়োগ দেওয়ার জন্য সুপারিশ করেছিলেন এবং তাকে ‘নাগরিক অধিকার ও স্বাধীনতার বিশেষজ্ঞ’ বলে অভিহিত করেছিলেন।
নুসরাত জাহান চৌধুরী ১৯৯৮ সালে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ২০০৬ সালে বিশ্বখ্যাত ইয়েল ল’ স্কুল থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। প্রিন্সটন স্কুল অব পাবলিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স থেকেও গ্র্যাজুয়েশন করেন। সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নে যোগদানের আগে তিনি নিউইয়র্ক সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের ক্লার্ক এবং সেকেন্ড সার্কিট ইউএস কোর্ট অব আপিলের বিচারক ব্যারিংটন পার্কারের সঙ্গেও কাজ করেছেন।
নুসরাত চৌধুরীর জীবনী সম্পর্কে জানা গেছে, তিনি ইলিনয়ের এসিএলইউর আইনি পরিচালক। তিনি ইলিনয়জুড়ে নাগরিক অধিকার এবং নাগরিক স্বাধীনতাকে অগ্রসরকারী ২০টিরও বেশি কর্মীদের একটি আইনি দলের তত্ত্বাবধান করেন। ইলিনয়ের এসিএলইউতে যোগদানের আগে তিনি ১১ বছরেরও বেশি সময় (২০০৮-২০২০) জাতীয় এসিএলইউতে জাতিগত বিচার কর্মসূচির উপপরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন।
নুসরাত চৌধুরীর অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানা গেছে, তিনি দুই ডজনেরও বেশি ফেডারেল কেস, আটটি ক্লাস অ্যাকশন পরিচালনা করেছেন এবং ১৬টি ক্ষেত্রে প্রধান পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি স্টেট ও ফেডারেল উভয় স্তরেই কাজ করেছেন এবং ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট ও আপিল উভয় ক্ষেত্রেই আরগু করেছেন। তিনি নাগরিক অধিকার থেকে শুরু করে ফৌজদারি বিচার সংস্কার, প্রথম সংশোধনী সমস্যাসহ আরও অনেক কিছু সামলেছেন। তিনি প্রবীণ এবং অভিবাসীদের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। মিলওয়াকি থেকে শিকাগো-বোস্টন পর্যন্ত শহরগুলোতে পুলিশিং অনুশীলনের উন্নতি করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে কাজ করেছেন।
২০১৭ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত নুসরাত চৌধুরী আমেরিকান বার অ্যাসোসিয়েশনের নাগরিক অধিকার এবং সামাজিক ন্যায়বিচার বিভাগের সদস্য ছিলেন। সেই সঙ্গে আমেরিকান বিচারব্যবস্থায় পাবলিক ট্রাস্ট তৈরির প্রেসিডেন্ট টাস্কফোর্সের সদস্য ছিলেন। তিনি হুইসেলব্লোয়ার এইডের পরিচালনা পর্ষদেও কাজ করেছেন। তিনি গ্রেটার শিকাগোর এশিয়ান আমেরিকান বার অ্যাসোসিয়েশন, ইলিনয় স্টেট বার অ্যাসোসিয়েশন এবং শিকাগোর দক্ষিণ এশিয়ান বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য।
৪০ বছর আগে নুসরাতের বাবা বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। তারা শিকাগোতে থাকতে শুরু করেন। বাবা পেশায় চিকিৎসক হলেও নুসরাত আইনকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। ২০১৬ সালে মিশেল আর্লি নামের মার্কিন নাগরিককে বিয়ে করেন নুসরাত।
এর আগে ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম মুসলিম ফেডারেল বিচারক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত জাহিদ কোরাইশি। তবে কোনো মুসলিম নারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আদালতের বিচারক হলেন বাংলাদেশি নুসরাত চৌধুরী।          

 

কমেন্ট বক্স