Thikana News
০৪ জুলাই ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪

ঢাকা-দিল্লিকে লুর লাল বার্তা

ঢাকা-দিল্লিকে লুর লাল বার্তা
পরাশক্তিগুলোর স্নায়ুযুদ্ধ ও বিশ্বায়নের গোলমালে আরও ক্ষত-বিক্ষত হতে চলেছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো। বাংলাদেশ-ভারত ঢুকে পড়ছে কঠিন থেকে কঠিন সমীকরণে। রোহিঙ্গা সংকট ও মিয়ানমারে চলমান অস্থিরতার জেরে বাংলাদেশ-ভারতে ভয়াবহ পরিস্থিতির আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। এ বিষয়ে ভারত ও বাংলাদেশকে সতর্ক করেছেন তিনি। মিয়ানমার পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না- বার্তা দিয়ে লু বলেছেন, সামনের দিনগুলোতে এই সংকট আরও জটিল হবে। এ-ও বলেছেন, সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পাশে আছে। অস্থিতিশীলতা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশকে সমর্থন করবে ওয়াশিংটন।শব্দে শব্দে, বাক্যে বাক্যে জটিল কূটনীতি ডোনাল্ড লুর বার্তায়। পারিপার্শ্বিক আলামতেও স্পষ্ট, জান্তার পতন হলেও মিয়ানমারে বিদ্রোহীদের মধ্যে স্থিতিশীলতার সম্ভাবনা নেই। বিদ্রোহীদের মধ্যে অনেক দল-কোন্দল। চীন তাদের নিয়ে খেলছে। সব দলকেই মদদ দিচ্ছে। সুদূর থেকে টোকা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রও। প্রকাশ্যে মিয়ানমারের জন্য বার্মা অ্যাক্ট করেই রেখেছে। বাংলাদেশকে নিয়েও অ্যাজেন্ডার শেষ নেই। কাউন্টার অ্যাক্ট করছে বাংলাদেশও। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন-মার্কিন দুই দিকেই মুখ রাখছেন। ভারতের জন্য এটি অস্বস্তির। তাদের সমীকরণে মার্কিনিদের পরবর্তী যুদ্ধক্ষেত্র হবে মিয়ানমার। উদ্দেশ্য চীনকে ভারত ও আরব সাগরে নামতে ঠেকানো। তা বুঝেশুনে বাংলাদেশকে হ্যান্ডেলিং করছে ভারত। বাংলাদেশের আত্মনির্ভরতা ছাড়া পণ্য বয়কটের ডাক আপাতত ছোট ধাক্কা মনে করলেও দীর্ঘ মেয়াদে একে ভাবনার বিষয় হিসেবে রাখছে ভারত। দেশটির গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে, পণ্য বয়কটের হুজুগ চলে যাবে মাস কয়েকের মধ্যে। কারণ, বাংলাদেশ বিকল্প ও কম দামে ভালো পণ্য তৈরি করতে পারছে না। এতে এমনিতেই ভারতীয় পণ্য বাংলাদেশের মার্কেট দখলে রাখবে।
এদিকে মিয়ানমার প্রশ্নেও স্বস্তিতে নেই বাংলাদেশ। একজন রোহিঙ্গাকেও এখনতক ফেরত পাঠানো না গেলেও আদরে-সমাদরে ফেরত পাঠানো গেছে মিয়ানমার সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনীর (বিজিপি) সদস্যসহ ৩৩০ জনকে। প্রায় একই আপদে আক্রান্ত ভারত কিন্তু এত সাদামাটা তা করেনি। ওখানে আশ্রিতদের ফেরত পাঠানোর আগে জবানবন্দিসহ যাবতীয় তথ্যাদি নিয়ে রেখেছে তারা। বাংলাদেশ তা করেনি। রাষ্ট্রের কয়েকটি বাহিনী ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের তাগিদ ছিল, ফেরত পাঠানোর আগে বিজিপি সদস্যদের কাছ থেকে জান্তাদের তথ্য নিয়ে রাখার। কারণ ঘটনাচক্রে তাদের কাছ থেকে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর নানা অপকর্মের তথ্য-তালাশের একটি সুযোগ তৈরি হয়েছিল।
এবার বাংলাদেশের স্পষ্ট ঘোষণা ছিল- মিয়ানমারের আর একজনকেও বাংলাদেশে ঢুকতে বা অনুপ্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। কিন্তু ঘটনার অনিবার্যতায় দিতে হয়েছে। তাও রোহিঙ্গাদের মতো নিরস্ত্র-নিরন্ন গোবেচারা কাউকে নয়, একেবারে অস্ত্রধারীদের। আরাকান আর্মির ধাওয়ায় প্রাণে বাঁচতে পালিয়ে আসা জান্তা সদস্যদের মধ্যে মূলত বার্মিজ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) সদস্যই সর্বাধিক। এই বিজিপিসহ পুরো বাহিনীটাই বার্মিজ সামরিক জান্তার অধীন এবং জান্তা দ্বারা পরিচালিত। এরা সম্মিলিতভাবেই অংশ নিয়েছিল রোহিঙ্গা নিধনে। সেই সঙ্গে চালিয়েছিল গণহত্যা। ২০১৭ সালে তাদের ক্রিয়াকর্মের জেরেই বাংলাদেশের ঘাড়ে চেপে আছে ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। ফেরত পাঠানো এই বিজিপি সদস্যরা রোহিঙ্গা নিধন ও তাড়ানোতে শরিক ছিল। অথবা সবাই ওই কুকর্মে না থাকলেও তারা জানত, কারা অংশ নিয়েছিল ওই গণহত্যা ও নিধনে। ঘটনার পরম্পরায় এবার ধেয়ে আসা দেশটির ফৌজি সদস্যরা তখন রোহিঙ্গা হত্যা ও নিধনে কে কতটুকু জড়িত ছিল, তা শনাক্তের একটি মোক্ষম সুযোগ তৈরি হয়। তাদের মধ্যে লুকিয়ে থাকতে পারে বার্মিজ সামরিক জান্তার গুপ্তচরও। তাই তাগিদ ছিল ফেরত পাঠানোর আগে তাদের কাছ থেকে কিছু তথ্য-সাবুদ আদায় করে রাখার; তাদের ২০১৭ সালের ২৪ ও ২৫ আগস্টের ভূমিকা খতিয়ে দেখে নোট রাখা, যা সরকার প্রয়োজনে জাতিসংঘ অথবা আইসিজে বা আইসিসির কাছে হস্তান্তর করতে পারে। ভারত ঠিকই তা করেছে।
এমন এক ঘনঘটার সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ভারত ও বাংলাদেশকে ইন্দো-প্যাসিফিক ইস্যুতে ‘ক্রমবর্ধমান’ বিষয়ে সতর্ক করেছে। ডোনাল্ড লু ভারতের মতো অংশীদারের সঙ্গে সহযোগিতায় ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের সাফল্যের উদাহরণ হিসেবে শ্রীলঙ্কাকে স্বাগত জানিয়েছেন, তবে দিল্লি ও ঢাকা উভয়কেই সতর্ক করেছেন। এর বিপরীতে মিয়ানমারে চীন ক্ষমতাসীন এবং বিদ্রোহীদের সঙ্গে সমানতালে সম্পর্ক বজায় রেখে চলছে। ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক কারণে মিয়ানমারে চীনের পক্ষে যা করা সম্ভব, তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে করা তত সহজে সম্ভব নয়। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল ভিয়েতনাম যুদ্ধে, যেখানে ন্যক্কারজনকভাবে মার্কিনিরা পরাজিত হয়েছিল। সময়ের ব্যবধানে হাল প্রেক্ষাপটে ডোনাল্ড লুর দিল্লি-ঢাকা উভয়ের নিরাপত্তা বিষয়ে উদ্বেগের মাঝে কূটনীতির বহু রসদ দেখছেন অনেকে। সমীকরণটি বড় জটিল। এই জটিলতার মাঝেই ছুটে চলছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জার্মানিতে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের ফাঁকে বৈঠক করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ রাশিয়া। ঢাকাস্থ রুশ রাষ্ট্রদূতের এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া মারাত্মক ঝাঁজালো।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের পর টুইট করে বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এক্স হ্যান্ডলে এক পোস্টে ভিডিও শেয়ার করে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ‘ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতার প্রতি সমর্থন দেওয়ায় বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। আমরা শান্তি ফর্মুলার ওপর ভিত্তি করে একটি ন্যায়সংগত শান্তির জন্য ইউক্রেনের দৃষ্টিভঙ্গি, সেই সঙ্গে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেছি। বাংলাদেশকে ফর্মুলা বাস্তবায়নে অংশগ্রহণ এবং বৈশ্বিক শান্তি সম্মেলনে যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছি।’
একই দিনে একই সময়ে ‘অপারেশন ইউক্রেন : আমেরিকার আঙুলের ছাপ। ইউক্রেনীয় জাতীয়তাবাদ কে সমর্থন করে?’ শিরোনামে রাশিয়ার বাংলাদেশস্থ দূতাবাস ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জানিয়েছে, ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং তারপর রাশিয়ার বিরুদ্ধে একসঙ্গে কাজ করার জন্য হিটলারের প্রাক্তন সহযোগীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। তাদের কাজ ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে আলাদা করার প্রয়াসে ইউক্রেনের ভূখণ্ডে পারমাণবিক প্ল্যান্ট এবং বাঁধ ধ্বংস করা।’
এর আগের দিন আরেকটি পোস্টে বাংলাদেশকে রাশিয়া মনে করিয়ে দেয়, ‘রূপপুর এনপিপি নির্মাণ বাংলাদেশের জন্য উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক সুযোগ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, প্রযুক্তি স্থানান্তরকে উৎসাহিত করা এবং স্থানীয় শিল্পকে উদ্দীপিত করার কথা। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর ফেসবুক পোস্ট দিয়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের বক্তব্য শেয়ার করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘আজ, কিয়েভ স্বাধীন এবং শক্তিশালী। সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার মৌলিক নীতিগুলোকে রক্ষা করতে এবং একটি মুক্ত ও গণতান্ত্রিক জনগণকে বশীভূত করা থেকে সাম্রাজ্যবাদী কর্তৃত্ববাদীকে থামাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বের সঙ্গে বিশ্ব একত্রিত হয়েছে। কোনো ভুল করবেন না, পুতিনের যুদ্ধ ইতিমধ্যে রাশিয়ার জন্য সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।’
রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধ শুরু হ‌ওয়ার পর ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বের প্রতি সমর্থন দিয়ে বাংলাদেশ কথা বলল। রাশিয়া এই পরিস্থিতিতে কী ভূমিকা রাখে, তা দেখার বিষয়। এর মাত্র কদিন আগে বাংলাদেশ সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রকে চটিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়।

কমেন্ট বক্স