প্রবাসের আমব্রেলা সংগঠন বাংলাদেশ সোসাইটির বিশেষ সাধারণ সভায় উপস্থিত আজীবন ও সাধারণ সদস্যরা গঠনতন্ত্রের বেশকিছু সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন করেছেন। অধিকাংশ প্রস্তাবই ছিল নির্বাচনকেন্দ্রিক এবং এসব প্রস্তাব নিয়ে সভায় পক্ষে-বিপক্ষে মত তুলে ধরেন সদস্যরা। তবে সদস্যরাই যে একটি সংগঠনের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী তা প্রমাণিত হয়েছে বাংলাদেশ সোসাইটির এই বিশেষ সাধারণ সভায়।
৫ জুন সোমবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কের উডসাইডের কুইন্স প্যালেসে অনুষ্ঠিত বিশেষ সাধারণ সভায় তিন শতাধিক সদস্য উপস্থিত ছিলেন। আজীবন সদস্য এবং যাদের বার্ষিক চাঁদা হালনাগাদ তারাই বিশেষ সাধারণ সভায় যোগদানের সুযোগ পেয়েছেন।
বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রব মিয়া সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন। সভা সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. রুহুল আমিন সিদ্দিকী। তাকে সহযোগিতা করেন সিনিয়র সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন দেওয়ান, সহ-সভাপতি ফারুক চৌধুরী এবং প্রচার ও গণযোগ সম্পাদক রিজু মোহাম্মদ।
গঠনতন্ত্র সংশোধনের লক্ষ্যে বিশেষ সাধারণ সভা আহ্বান করা হয়। এজন্য সদস্যদের মধ্য থেকে সংশোধন, সংযোজন ও বিয়োজনের প্রস্তাব আহ্বান করা হয়েছিল। এ লক্ষ্যে গঠিত হয় গঠনতন্ত্র সংশোধন কমিটি। নির্ধারিত ২৭ মে’র আগ পর্যন্ত যেসব প্রস্তাব জমা পড়ে, সেখান থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রস্তাব সাধারণ সভায় উপস্থাপন করেন কমিটির চেয়ারম্যান ও সংগঠনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক একেএম ফজলে রাব্বী। তবে কতজন সংশোধনী প্রস্তাব এনেছেন এবং কাদের প্রস্তাব উত্থাপনের জন্য গৃহীত হয়েছে তা সভায় উল্লেখ করা হয়নি।
গঠনতন্ত্র সংশোধন কমিটি একেএম ফজলে রাব্বী একে একে প্রস্তাবগুলো সভায় অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করেন। এরপর এ নিয়ে সদস্যরা পক্ষে-বিপক্ষে মত দেন। এরপর তা কণ্ঠে ভোটে দেওয়া হয়। বেশিরভাগ প্রস্তাবই কণ্ঠভোটে পাস হয়েছে। তবে নাকচ হয়ে গেছে আজীবন সদস্যপদের ফি বাড়ানোর প্রস্তাব। এটি ৫০০ ডলারের পরিবর্তে আজীবন সদস্য ফি ৮০০ ডলার করার প্রস্তাব ছিল। আগে কার্যকরী পরিষদ ফি নির্ধারণ করতো। এখন থেকে গঠনতন্ত্রে উল্লেখ থাকবে এ বিষয়টি। যেসব সভায় যেসব সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন পেয়েছে তার মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক আয়োজনে সম্পৃক্ত হতে পারবে না বাংলাদেশ সোসাইটি। তবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, প্রধান বিচারপতি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাতে পারবে সংগঠনটি। ট্রাস্টি বোর্ডের অনুমোদন ছাড়া কার্যকরী কমিটি সর্বোচ্চ ২৫ হাজার ডলার ব্যয় করতে পারবে, যা আগে ছিল ১০ হাজার ডলার। নির্বাচনের পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার বা তার অনুপস্থিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে দ্বিতীয় রোববারের আগে বা পরে নতুন কার্যকরী কমিটি শপথ নেবে। কার্যকরী কমিটি দুই বছরের জন্য ট্রাস্টি বোর্ড নির্বাচন করবে। তাদের মেয়াদ হবে ১ জুন থেকে ৩১ মে পর্যন্ত। এছাড়া ট্রাস্টি বোর্ডের কোনো সদস্যকে পরিবর্তন এবং স্থলাভিষিক্ত করতে হলে কার্যকরী কমিটির দুই তৃতীয়াংশের অনুমোদন লাগবে এবং অবশ্যই তা কার্যকরী কমিটির শপথের ৯০ দিনের মধ্যে করতে হবে।
সংগঠনের কাঠামোগত পরিবর্তন আনতে হলে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে তা ব্যালটে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। শতকরা ৫১ শতাংশ ভোটে তা পাস হতে হবে। সাধারণ সভায় গঠনতন্ত্রে নতুন আটটি ধারা সংযোজিত হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- কার্যকরী কমিটি নির্বাচন কমিশনের বাজেট অনুমোদন করবে। বোর্ড অব ট্রাস্টির কোনো সদস্য নির্বাচন কমিশনের সদস্য হতে পারবেন না। এক্ষেত্রে পদত্যাগ করলে পরবর্তী বছরে নির্বাচন নির্বাচন কমিশনের সদস্য হতে পারবেন। একই নিয়মে বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যানসহ যে কোনো সদস্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং কোনো প্যানেল বা প্রার্থীর প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না। নির্বাচন বিধিমালায় কোনো বিষয় অস্বচ্ছ ও অগ্রহণযোগ্য মনে হলে নির্বাচন কমিশন প্রয়োজনে তা সংশোধনের অধিকার রাখে। মনোনয়নপত্রে বড় কোনো ভুল, বিশেষ করে অসম্পূর্ণ মনোনয়নপত্র বতিল করার ক্ষমতা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের। এক্ষেত্রে মনোনয়ন ফি অফেরতযোগ্য থাকবে। প্রত্যেক প্রার্থীর মনোনয়নপত্র নোটারি করা বাধ্যতামূলক।
সংশোধনীর পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনায় অংশ নেন মূলধারার রাজনীতিক ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী গিয়াস আহমেদ, বাংলাদেশ সোসাইটির প্রধান নির্বাচন কমিশনার জামাল আহমেদ জনি, ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ওয়াসি চৌধুরী, নির্বাচন কমিশনার রুহুল আমিন সরকার, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবুলফজল দিদারুল ইসলাম, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান সেলিম, সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক বাবুল চৌধুরী, রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী মইনুল ইসলাম, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিক সাখাওয়াত বিশ্বাস, মোহাম্মদ আবুল কাশেম প্রমুখ।
বিশেষ সাধারণ সভায় সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন বাংলাদেশ সোসাইটির কার্যকরী কমিটির কর্মকর্তা ও সদস্যরা।