Thikana News
০৪ জুলাই ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪
ইউনূসে নয়া ফের ► মার্কিন-চীন স্টাডিতে সরকার ‘

ইন্ডিয়া আউট’  অ্যাজেন্ডায় ঘুরপাক

ইন্ডিয়া আউট’  অ্যাজেন্ডায় ঘুরপাক
ঘটনার ফের আবার নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসে। শেষ হয়েও না হওয়ার মতো। শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে দেওয়া সাজা ও দণ্ডের বিরুদ্ধে করা আপিলে স্থায়ী জামিন পেতে না পেতেই অর্থ আত্মসাৎ মামলায় তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সরকার পিছু হটছে না, আবার ইউনূসও হাল ছাড়ছেন না। তার বিরুদ্ধে হেন কথা নেই, যা না বলা হচ্ছে সরকারের দিক থেকে। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের  আইনজীবীই দুদকের আইনজীবী। নিজেকে সরকারপক্ষের নন দাবি করে তিনি বলেছেন, এ মামলায় সরকারের কোনো হাত নেই। আর ড. ইউনুসের প্রশ্নÑকলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তর কি সরকারি প্রতিষ্ঠান নয়? তবে এসবে বিচলিত নন বলেও জানান তিনি।
ড. ইউনূসের বিদেশি বন্ধুরা তার এমন হয়রানিতে এবার নীরব কেনÑএ প্রশ্নের মাঝেই এল শতাধিক নোবেলজয়ীর চিঠি। তার মামলা পর্যালোচনায় বিশেষজ্ঞ দল পাঠানোর প্রস্তাব তো রয়েছেই। এই নোবেলজয়ীর শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলার রায় এবং দুদকের মামলা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলাচিঠি পাঠিয়েছেন শতাধিক নোবেল বিজয়ীসহ বিশ্বে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্বস্থানীয় ২৪২ ব্যক্তি। চিঠিতে স্বাক্ষরদাতাদের মধ্যে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুনও রয়েছেন। স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে নোবেলজয়ী রয়েছেন ১২৫ জন। আছেন তাওয়াক্কুল কারমান, নাদিয়া মুরাদ, মারিয়া রেসা, হুয়ান ম্যানুয়েল সান্তোসসহ ১৬ জন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী। সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী রয়েছেন ৬ জন। তাদের মধ্যে ওরহান পামুক ও জে এম কোয়েটজি রয়েছেন। জোসেফ স্টিগলিৎজসহ অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী আছেন ১২ জন। রসায়নে ৩৬ জন নোবেল বিজয়ী, চিকিৎসাশাস্ত্রে ২৯ জন নোবেল বিজয়ী এবং পদার্থবিজ্ঞানে ২৬ জন নোবেল বিজয়ী রয়েছেন।
এর আগে ড. ইউনূসের সঙ্গে আচরণ নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে গত বছর প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিলেন ৪০ বিশ্বনেতা। এর জবাবে সংবাদ সম্মেলনে ড. ইউনূসের মামলা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘যার বিরুদ্ধে মামলা, তার সব দলিল-দস্তাবেজ তারা খতিয়ে দেখুক। সেখানে কোনো অন্যায় আছে কি না, তারা নিজেরাই দেখুক।’ এবারের চিঠিতে সেই প্রস্তাব বা অভিপ্রায় লুফে নেওয়া হয়েছে। তাদের চিঠিতে বলা হয়, ‘আমরা একজন জ্যেষ্ঠ আন্তর্জাতিক আইনজীবীর নেতৃত্বে স্বাধীন আইন বিশেষজ্ঞদের একটি দল পাঠানোর প্রস্তাব দিচ্ছি। আমরা দ্রুতই এটা শুরু করতে চাই। সেই সঙ্গে পর্যালোচনা চলাকালে ড. ইউনূস ও তাঁর সহকর্মীদের বিরুদ্ধে কারাদণ্ডের রায় স্থগিত রাখার আহ্বান জানানো হয়। চিঠিতে মনে করিয়ে দেওয়া হয়, শান্তিতে নোবেল পুরস্কার, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম ও কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল পাওয়া বিশ্বের মাত্র সাতজন ব্যক্তির একজন হচ্ছেন ড. ইউনূস।
চিঠি বা নোবেল লরিয়েট নন, এর পেছনে মার্কিন হাতের সরাসরি ছোঁয়া দেখছে সরকার। মার্কিনিদের মতিগতি নতুন করে স্টাডিতে নেমেছে সরকার। এ স্টাডিতে সরকারকে সরাসরি নার্সিং দিচ্ছে ভারত ও চীন। তাদের কূটবুদ্ধিতে বিগত কয়েক মাসের মতো একদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে গালাগাল, আরেকদিকে তলে তলে আপসরফার চেষ্টাও। এর বিপরীতে তলের খেলায় মার্কিনিরা কী করে, তা আগে জানা দুনিয়ার অনেকের পক্ষেই অসম্ভব। ভিয়েতনাম, লাওস ও কম্বোডিয়ায় পয়লা নভেম্বর ১৯৫৫ থেকে ৩০ এপ্রিল ১৯৭৫ পর্যন্ত পরাজয়ের পর প্রায় গোটা ধারণা জন্মেছিল মার্কিনিরা আর কখনো উঠে দাঁড়াতে পারবে না। একই অবস্থা হয়েছিল দক্ষিণ এশিয়ায়। একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং পাক-ভারত যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে সমর্থন দেয়। এ বছরের ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে পাকিস্তানের পক্ষে সপ্তম নৌবহর পাঠানোর কথা বলে পিছিয়ে যায় তারা। সবার ধারণা ছিল মার্কিনিরা বোধ হয় এ মুলুকে আর আসার সুযোগ পাবে না। কিন্তু দেখা গেল উল্টোটা। বাহাত্তরের মার্চে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পরের মাস এপ্রিলের ৪ তারিখেই সবাইকে অবাক করে স্বাধীন বাংলাদেশকে কেবল স্বীকৃতি নয়, ৩০০ মিলিয়ন ডলার সাহায্যের প্রতিশ্রুতিও দেয়। হালে বাংলাদেশ প্রশ্নে মার্কিনি মতিগতিও কিছুটা সে রকমেরই।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও অনেক বেশি গভীর হয়। ১৯৯১ সালের ২৬ ডিসেম্বর সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হ‌ওয়ার পর প্রথম স্নায়ুযুদ্ধ শেষে সোভিয়েতের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ভারত রাতারাতি স্নায়ুযুদ্ধে বিজয়ী যুক্তরাষ্ট্রের কোলে উঠে পড়ে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে আঞ্চলিক শক্তি হ‌ওয়া এবং এক‌ই সঙ্গে বাংলাদেশের ওপর আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা বাড়াতে থাকে। ভারতের চেষ্টা সফল হয় ওয়ান ইলেভেনের পর। এরপর বাংলাদেশকে নিয়ে আর পেছনে তাকাতে হয়নি ভারতকে। ঢাকায় আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাসীন রাখতে অবিরাম সফল হয়ে চলছে দিল্লি। সঙ্গে যোগ হয়েছে চীন। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ তথা আঞ্চলিক রাজনীতিতে মোটামুটি কোণঠাসা। কিন্তু দমেনি। গোলমাল পাকছে আরও কিছুতে। ড. ইউনূস প্রশ্নে তা প্রকাশ্যে।
ঘটনার পরম্পরায় নির্বাচনের আগমুহূর্তে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে একটি শ্রম আদালত ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং জরিমানার রায় হয়। এই বিচার বন্ধ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা চিঠি লিখেছেন, শতাধিক বিশ্ববরেণ্য নেতার বিবৃতি মার খেয়েছে। তা এখন আবার নতুন করে দৃশ্যপটে। বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো যুক্তরাষ্ট্রের উভয় দলের ১২ জন সিনেটরের যৌথ স্বাক্ষরিত চিঠিও এসেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে। এখন আবারও বিবৃতি। সেই সঙ্গে ভারতবিরোধী সেন্টিমেন্টে টোকা। তা ছোট দেশ মালদ্বীপেও। মালদ্বীপের ধাঁচে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের হস্তক্ষেপের প্রতিবাদ বেশ জোরালো। বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের ভারতবিরোধিতা লুফে নিচ্ছে বিরোধী কয়েকটি পক্ষ। এরই মধ্যে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ঢেকুরও তোলা হচ্ছে। তা বেশি জোরদার সোশ্যাল মিডিয়ায়। ‘ইন্ডিয়া আউট’ শিরোনামের এ চিকন কৌশলের নেপথ্যে মার্কিনি সম্পৃক্ততা দেখছে সরকার। বাণিজ্যিক স্বার্থগত চিন্তা ও স্বভাবগত ঐতিহ্যে সন্দেহের তীর চীনের দিকেও। মালদ্বীপের নির্বাচনের আগে মোহাম্মদ মুইজ্জুকে দিয়ে তা করেছিল চীন। প্রতিবছর বাংলাদেশে ভারতের অন্তত ১৪০০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি চীনের জন্য ঈর্ষার। এখানে চীনকেও স্টাডি করার বিষয়। তা ভারত-বাংলাদেশ উভয়ের জন্যই।

কমেন্ট বক্স