প্রথম ইনিংসে ১৯০ রানের লিড নেওয়া ভারতের পক্ষেই কথা বলছিল পরিসংখ্যান। নিজেদের মাঠে প্রথম ইনিংসে ১০০ বা তার বেশি রানের লিড নিয়ে ভারত কখনোই টেস্টে হারেনি। তবে সব সময় তো পরিসংখ্যান মেনে সবকিছু হয় না। শেষ পর্যন্ত হায়দরাবাদের রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্টে ভারতকে ২৮ রানে হারিয়েছে ইংল্যান্ড।
২৩১ রানের লক্ষ্যে শুরুটা অবশ্য দারুণ করেছিল ভারত। ৭০ বলে ৪২ রানের জুটি গড়েন রোহিত শর্মা ও যশস্বী জয়সওয়াল। ১২তম ওভারের চতুর্থ বলে জয়সওয়ালকে ফিরিয়ে উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন টম হার্টলি। ৩৫ বলে ২ চারে জয়সওয়াল করেন ১৫ রান। একই ওভারের শেষ বলে শুভমান গিলকে ফেরান হার্টলি। দুটি উইকেটেই ক্যাচ ধরেন ওলি পোপ। জয়সওয়ালের ক্যাচ ধরেন শর্ট লেগে আর সিলি পয়েন্টে ধরেন গিলের ক্যাচ। মুহূর্তেই ভারতের স্কোর হয়ে যায় ১২ ওভারে ২ উইকেটে ৪২ রান।
২ উইকেট পড়ার পর ব্যাটিংয়ে নামেন লোকেশ রাহুল। তবে ওপেনার রোহিত তৃতীয় উইকেটে তার (রাহুল) সঙ্গে জুটি বড় করতে পারেননি। ১৮তম ওভারের পঞ্চম বলে হার্টলির বলে এলবিডব্লু হয়ে ফেরেন রোহিত। তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে ভারতীয় অধিনায়ক যখন আউট হয়েছেন, তখন তাদের স্কোর ৬৩। স্বাগতিকদের অধিনায়ক ৫৮ বলে ৭ চারে করেন ৩৯ রান। এরপর ব্যাটিং অর্ডারে ৫ নম্বরে উঠিয়ে আনা হয় অস্কার প্যাটেলকে। রাহুলের সঙ্গে জুটিটা ভালোই জমে গিয়েছিল। এমন সময় নিজের উইকেটটা যেন বিলিয়েই দিয়েছেন। ৩০তম ওভারের চতুর্থ বলে প্যাটেলকে কট অ্যান্ড বোল্ড করেন হার্টলি। ৪২ বলে ৩ চারে ১৭ রান করেন প্যাটেল। স্বাগতিকদের স্কোর তাতে হয়ে যায় ৪ উইকেটে ৯৫ রান।
শুরুর ৪ উইকেট নেওয়া হার্টলির সঙ্গে আক্রমণে যোগ দেন জো রুট ও জ্যাক লিচ। একই সঙ্গে ইংল্যান্ডের ফিল্ডিংও হচ্ছিল দুর্দান্ত। তাতেই চোখে সরষে ফুল দেখতে থাকে ভারত। ৩৩তম ওভারের চতুর্থ বলে রাহুলকে এলবিডব্লু করেন জো রুট। এরপর ৩৯তম ওভারের প্রথম বলে রুটকে মিডঅনে ঠেলে সিঙ্গেল নিতে যান জাদেজা। মিড অন থেকে দুর্দান্ত এক থ্রোতে নন-স্ট্রাইকের স্টাম্প ভেঙে দেন বেন স্টোকস। জাদেজা রান আউটের ফাঁদে কাটা পড়েন। ভারতীয় অলরাউন্ডারের সঙ্গী শ্রেয়াস আইয়ারও দ্রুত বিদায় নিয়েছেন। ৪১তম ওভারের দ্বিতীয় বলে আইয়ারের উইকেট তুলে নেন লিচ। দ্রুত ৩ উইকেট হারিয়ে মুহূর্তেই ভারতের স্কোর হয়ে যায় ৭ উইকেটে ১১৯।
খাদের কিনারায় পড়ে যাওয়া ভারতের হাল ধরেন উইকেটরক্ষক শ্রীকর ভরত ও রবিচন্দ্রন অশ্বিন। বেশ সাবধানে এগোতে থাকেন তারা। অষ্টম উইকেটে ১৩০ বলে ৫৭ রানের জুটি গড়েন। ৬২তম ওভারের শেষ বলে ভরতকে অসাধারণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড করেন হার্টলি। ৫৯ বলে ৩ চারে ২৮ রান করেন ভরত। এক ওভার বিরতিতে এসে এবার হার্টলি ফেরান অশ্বিনকে। বলা যায়, অশ্বিন নিজের উইকেটটাই বিলিয়ে দিয়ে এসেছেন। ৬৪তম ওভারের দ্বিতীয় বলে হার্টলিকে উইকেট থেকে বেরিয়ে খেলতে যান অশ্বিন। ইংল্যান্ডের উইকেটরক্ষক বেন ফোকস সহজেই স্টাম্পিং করে ফেলেন।
১৭৭ রানে ৯ উইকেট পড়ার পর ভারতের পরাজয় ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র। সেখানে ইংল্যান্ডের প্রায় প্রতিটি বলেই যেন মনে হচ্ছিল, এই বুঝি উইকেট গেল। এমন পরিস্থিতিতে মোহাম্মদ সিরাজ আর জসপ্রীত বুমরার ব্যাটিং হয়তো হায়দরাবাদে থাকা ভারতীয় সমর্থকদের মনে কিঞ্চিৎ আশা জাগিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তা আর সম্ভব হয়নি। ৭০তম ওভারের দ্বিতীয় বলে সিরাজকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলে ভারতের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেন হার্টলি। ভারত অল আউট হয়ে যায় ২০২ রানে। স্বাগতিকদের ইনিংসে সর্বোচ্চ ৩৯ রান করেন রোহিত। অন্যদিকে ইংল্যান্ডের বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৭ উইকেট নেন হার্টলি। একটি করে উইকেট নিয়েছেন রুট ও লিচ।
প্রথম ইনিংসে ১০০ বা তার বেশি রানের লিড নিয়ে তৃতীয়বার হারল ভারত।২০১৫ সালে গলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আর ২০২২ সালে এজবাস্টনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে—এর আগে এই দুই টেস্ট এমন পরিস্থিতিতে (প্রথম ইনিংসে ১০০ বা তার বেশি রান) হেরেছিল ভারত।
দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেটে ৩১৬ রানে হায়দরাবাদে রোববার চতুর্থ দিনের খেলা শুরু করেছিল ইংল্যান্ড। যেখানে ২৭৫ রানেই ইংল্যান্ড হারিয়ে ফেলেছিল ষষ্ঠ উইকেট। সেখানে তৃতীয় দিনেই সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া পোপ টেলএন্ডার ব্যাটারদের নিয়ে দারুণ খেলতে থাকেন। সপ্তম ও অষ্টম উইকেটজুটিতে রেহান আহমেদ ও হার্টলির সঙ্গে ৬৪ ও ৮০ রানের দুটি জুটি গড়তে অবদান রাখেন পোপ। জুটি দুটি করতে লেগেছে ৯৫ ও ১০৬ বল। শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ড অল আউট হয়েছে ৪২০ রানে। পোপ শেষ ব্যাটার হিসেবে যখন আউট হয়েছেন, তখন তিনি টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি থেকে ৪ রান পেছনে। ২৭৮ বলে ১১ চারে ১৯৬ রানের ইনিংস খেলে তিনিই অবশ্য জেতেন ম্যাচসেরার পুরস্কার।
টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক স্টোকস। সফরকারীরা প্রথম ইনিংসে ২৪৬ রানে অলআউট হয়েছে। ৮৮ বলে ৬ চার ও ৩ ছক্কায় ৭০ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক। এরপর ভারত তাদের প্রথম ইনিংসে অল আউট হয়েছে ৪৩৬ রানে। ইনিংস সর্বোচ্চ ৮৭ রান করেন রবীন্দ্র জাদেজা। এ ছাড়া রাহুল ও জয়সওয়াল খেলেন ৮৬ রান ও ৮০ রানের দুটি গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস। ইংল্যান্ডের বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নিয়েছিলেন জো রুট।
ঠিকানা/এনআই