রান্না করা টাটকা খাবার সবসময়ই মজাদার। সেটা বাসাতেই হোক কিংবা কোনো অনুষ্ঠানে। তবে ডায়েট করতে গিয়ে কিছু খাবার বাদ দেওয়ার পদ্ধতির চাইতে ‘মেডিটেরিনিয়ান ডায়েট’ অনুসরণ করা বেশি ফলপ্রসু। এই সময়ের খাদ্যবিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, প্রতিদিন হাঁটা আর সাথে খাবার হিসেবে অল্প মাংস বা মিষ্টান্নের পাশাপাশি টাটকা ফল, সবজি, পূর্ণ বা অপরিশোধিত শস্য, বাদাম ও বীজ খাওয়ার মাধ্যমে পুষ্টির চাহিদা মিটিয়ে ডায়েট ছাড়াই স্বাস্থ্যকর ওজন ধরে রাখা যায়।
এই বিষয়ে সিএনএন ডটকম’য়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের ‘অ্যাকাডেমি অফ নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়েটেটিকস’য়ের মুখপাত্র ও নিবন্ধিত খাদ্য-বিশেষজ্ঞ রাহাফ আল বচি বলেছিলেন, “একে মেডিটেরিনিয়ান ডায়েট বলা হলেও এটা ডায়েট নয়, আসলে জীবন পদ্ধতি।”
“এটা আপনাকে বলবে না ‘এটা খান’ ‘ওটা খেয়েন না’। বরং এই জীবন পদ্ধতিতে সব বিভাগের খাবার খেতে বলা হয়। যেখান থেকে সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যোপকারিতা মিলবে”- মন্তব্য করেন এই বিশেষজ্ঞ।
আর মেডিটেরিনিয়ান ডায়েট নিয়ে করা বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে- এটা ডায়াবেটিস, উচ্চ কোলেস্টেরল, হৃদরোগ, স্ট্রোক, স্মৃতিভ্রংশ ও বিষণ্নতার ঝুঁকি কমাতে পারে।
তাই ২০২৪ সালে মেডিটেরিনিয়ান পদ্ধতি হতে পারে জীবনের অংশ।
পূর্ণ শস্য উপকারী
সবচেয়ে সহজে মেডিটেরিনিয়ান ডায়েটে অভ্যস্ত হওয়ার পন্থা হল, পরিশোধিত ও প্রক্রিয়াজাত শস্যের পরিবর্তে অপরিশোধিত শস্য খাওয়া- পরামর্শ দেন এই বিশেষজ্ঞ।
বেছে নিতে হবে পূর্ণ শস্যের তৈরি রুটি, পাস্তা। সাদা রুটি ও ভাতের পরিবর্তে খেতে হবে বাদামি রুটি ও লাল চাল।
বিভিন্ন ধরনের প্রোটিন প্রাধান্য দেওয়া
মেডিটেরিনিয়ান ডায়েট থেকে আরও বেশি সুবিধা পেতে মাংস সরিয়ে রাখতে হবে। খুঁজে নিতে হবে প্রোটিনের অন্যান্য উৎস। যেমন- ডাল, বীজ ও ছোলা।
আল বচি বলেন, “সহজভাবে শুরু করার উপায় হল প্রতি সপ্তাহে একটি খাবার তৈরি করুন বীজ, পূর্ণ শস্য ও সবজি দিয়ে। স্বাদ বাড়াতে ব্যবহার করতে পারেন নানান ধরনের মসলা ও বনজ লতা, যেমন- পুদিনা ও ধনিয়া পাতা।”
এভাবে সপ্তাহের এক রাত থেকে দুই রাত খাওয়ার অভ্যাস রপ্ত করলে মাংস খাওয়ার অভ্যাসও কমে আসবে।
সপ্তাহে অন্তত দুবার চর্বিযুক্ত মাছ খাওয়ার মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস গ্রহণ করা যায়। যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
‘দি আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন’ পরামর্শ দেয়, বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক খাবার খাওয়ার মাধ্যমে ‘মার্কারি’র প্রভাব থেকে নিজেকে মুক্ত রাখায় যায়। চিংড়ি, স্যামন, টিনজাত টুনা মাছে মনোযোগ দেওয়া উপকারী।
মিষ্টান্ন নিয়ে অন্য ভাবনা
“মেডিটেরিনিয়ান জীবনপদ্ধতিতে বিভিন্ন ধরনের মিষ্টান্ন খাওয়া হয় শুধু বিশেষ উৎসবে। পেস্ট্রি, কুকিজ ও কেক’য়ের পরিবর্তে ডেজার্ট হিসেবে বেছে নেওয়া হয় বিভিন্ন ধরনের মৌসুমি ফল”- বলেন আল বচি।
সবসময় টাটকা খেতে একঘেয়ে লাগলে ফল গ্রহণেও ভিন্নতা আনা যায়।
বেদানার রসের সাথে নাশপাতি ও মধু মিশিয়ে খাওয়া স্বাদে আনবে ভিন্নতা। সসের পরিবর্তে ফলের সাথে খাওয়া যায় টক দই। গ্রিল্ড করা আনারসের ওপর মধু ছিটিয়ে খাওয়াও আনন্দদায়ক।
এছাড়া ফলের শরবতের সাথে বাদামের গুঁড়া মিশিয়ে পান করা বা ফল দিয়ে বানানো যায় চাটনি ও আচার।
আনন্দদায়ক কর্মকাণ্ড করা
মনে রাখতে হবে শুধু খাবার মানেই মেডিটেরিনিয়ান জীবন-পদ্ধতি নয়। মনভরে খাবার খাওয়ার পাশাপাশি সামাজিকতা রক্ষা, মুক্ত বাতাস নেওয়া ও ব্যায়াম হল নতুন জীবন পদ্ধতিতে বেঁচে থাকার প্রধান চাবিকাঠি।
মার্কিন খাদ্য-বিশেষজ্ঞ কেলি লোব্লন এই বিষয়ে বলেন, “মেডিটেরিনিয়ান জীবন-পদ্ধতি হল বন্ধু ও পরিবারের সাথে হাঁটা।”
আফ্রিকা, এশিয়া, ল্যাটিন আমেরিকা ও মেডিটেরিনিয়ান ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করা অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ‘ওল্ড ওয়েজ’য়ের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্বরত এই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, “ব্যায়াম করার পরিবর্তে যে শারীরিক কর্মকাণ্ড করতে ভালোলাগে সেটা করুন। হতে পারে- হাঁটা বা নৃত্য। যেটাই করুন শরীর নাড়ুন আনন্দ নিয়ে।”
পাশাপাশি আল বোচি, অন্তত ২০ মিনিট ধরে খাওয়ার পরামর্শ দেন।
তার ভাষায়, “আমি বুঝি এটা হয়ত অনেকেই করতে পারবেন না। তারপরও শুরুটা হতে পারে ছোট করে। খাওয়ার সময় টিভি বন্ধ করে, মোবাইল ফোনটা দূরে রেখে পরিবারের সাথে অর্থপূর্ণ গল্পের তালে ধীরে চিবিয়ে খাবার খান। প্রতিটি খাবার নেওয়া ও চিবানোর পর একটু বিরতি নিন। এটাই হতে পারে মনভরে খাওয়ার অভ্যাস গড়ার প্রাথমিক পদক্ষেপ।”
ঠিকানা/এসআর