Thikana News
১৩ মার্চ ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫

অর্থনীতির গতি ফেরানোই মূল চ্যালেঞ্জ এরদোয়ানের

অর্থনীতির গতি ফেরানোই মূল চ্যালেঞ্জ এরদোয়ানের ছবি : সংগৃহীত
তুরস্কের মসনদে আরও পাঁচ বছরের জন্য আসীন হলেন প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। গত রোববার অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় দফা ভোটে জয়ী হয়েছেন দুই দশক ধরে শাসন ক্ষমতায় থাকা এরদোয়ান। এ নিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হলেন। বেসরকারিভাবে ফল ঘোষণার পর রোববার রাতে তিনি জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে জাতীয় লক্ষ্য ও স্বপ্নপূরণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। এই বিজয়কে গণতন্ত্রের জয় হিসেবে অভিহিত করেন তিনি। খবর : বিবিসি ও আলজাজিরার। 

দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে ৯৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ ভোট গণনা শেষে ৫২ দশমিক ১৬ শতাংশ ভোট পাওয়া এরদোয়ান বলেন, এই নির্বাচনে তুর্কি জয় পেয়েছে, আমাদের গণতন্ত্র জয় পেয়েছে। আঙ্কারায় প্রেসিডেন্ট কমপ্লেক্সের সামনে জড়ো হওয়া কয়েক হাজার মানুষের সামনে দেওয়া ভাষণে তিনি ঐক্যের ওপর জোর দেন। বলেন, আজ কেউ হারেনি। সময় হয়েছে আমাদের জাতীয় লক্ষ্য এবং স্বপ্ন বাস্তবায়নে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার।

তুরস্কের এবারের নির্বাচন অন্যান্যবারের চেয়ে কিছুটা আলাদা। একদিকে ছিলেন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। তার জন্য ছিল শাসন ক্ষমতা ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ। অন্যদিকে ছিলেন বিরোধী জোটের প্রার্থী কেমাল কিলিচদারোগলু। দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে কেমাল পেয়েছেন ৪৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ ভোট।

ভঙ্গুর অর্থনীতির কারণে এবারের নির্বাচন এরদোয়ানের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জের ছিল। কিন্তু জনগণের রায়ে তিনি আবারও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। আন্তর্জাতিক মহলও এ নির্বাচন বেশ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেছে। নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অভিনন্দন বার্তায় ভেসে যাচ্ছেন তিনি। তবে তুরস্কের রাজনীতিতে দুই দশক ধরে আধিপত্য ধরে রাখা এরদোয়ান ঐক্য কতটা ধরে রাখতে পারবেন—সে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

৬৯ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট আঙ্কারায় উল্লাসরত সমর্থকদের সামনে হাজির হয়ে ঐক্যের ডাক দিয়েছেন। কিন্তু নির্বাচনের ফল নিয়ে এরদোয়ানবিরোধী শিবির এখনো সুস্পষ্ট করে কিছু বলেনি। অর্থাৎ তারা এই ফল স্বীকার কিংবা প্রত্যাখ্যান কোনোটাই করেনি। কেমালের অভিযোগ, দেশটির সাম্প্রতিক ইতিহাসে এই নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি কারচুপি হয়েছে। এরদোয়ানের দল রাষ্ট্রের সব কটি প্রতিষ্ঠানকে তার বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দুই প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান ছিল বেশ কম। এতে এটা স্পষ্ট যে, দেশটির প্রায় অর্ধেক মানুষ পরিবর্তন চেয়েছে। দেশটির ইতিহাসে এবারই প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন দ্বিতীয় দফায় গড়িয়েছে। নির্বাচন এবং ভোটের ফলের বোঝা যায়, সেখান নীতিগত বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে। এই বিভাজন ঘোচানোই এরদোয়ানের সবেচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, বিরোধী জোট চুপ করে বসে থাকবে না। তারা আবারও সংগঠিত হয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে।

তবে এরদোয়ান যে এখনো বেশ জনপ্রিয়, সেটা ফল ঘোষণার পর জনগণের উল্লাস দেখেই বোঝা যায়। জয় উদযাপন করতে পুরো তুরস্ক থেকে আঙ্কারায় ছুটে এসেছেন সমর্থকরা। জাতীয় পতাকা হাতে তারা মিছিল করেছেন। তাদের উল্লাস দেখে মনে হচ্ছিল অর্থনৈতিক দুরবস্থার কথা সবাই ভুলে গেছেন। সেয়হান নামের এক সমর্থক বলেন, দেশে কেউ ক্ষুধার্ত নয়। আমরা সবাই এরদোয়ানের অর্থনৈতিক নীতি নিয়ে খুশি। আগামী পাঁচ বছরে তিনি আরও ভালো করবেন।

তবে সমর্থকরা যত কথাই বলুক না কেন, অর্থনীতির গতি যে ফেরাতে হবে, সেটা এরদোয়ানও উপলব্ধি করতে পেরেছেন। মূল্যস্ফীতি মোকাবিলা করা এখন সবচেয়ে জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে—এটা তিনিও স্বীকার করেছেন। দেশটিতে বার্ষিক মূল্যস্ফীতির হার ৪৪ শতাংশে পৌঁছেছে। এটা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে বা আদৌ প্রেসিডেন্ট সেটা মোকাবিলায় প্রস্তুত কি না, সেটাই প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দেশটিতে খাদ্য, বাড়িভাড়া ও অন্যান্য পণ্যের দাম ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। মূল্যস্ফীতির জন্য বিশ্লেষকরা এরদোয়ানের গতানুগতিক অর্থনৈতিক ধারা অনুসরণ না করা এবং সুদের হার না বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে দায়ী করেছেন। ডলারের বিপরীতে তুরস্কের মুদ্রা লিরার মান রেকর্ড পরিমাণ কমে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিদেশি মুদ্রার চাহিদা মেটাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে।

ইস্তাম্বুলের কচ ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির অধ্যাপক সেলভা দেমিরাল্প বলেন, সুদের হার কমতে থাকলে (যার ইঙ্গিত এরদোয়ান দিয়েছেন) এর একমাত্র বিকল্প হলো কঠোর পুঁজি নিয়ন্ত্রণ। নির্বাচনে এরদোয়ানের সমর্থকরা অর্থনীতিকে কম গুরুত্ব দিয়েছেন। বিশ্বে এরদোয়ানের শক্তিশালী অবস্থান এবং সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে তারা গর্বিত।

শুধু তুর্কি ভোটাররাই নন, এরদোয়ানের জয়ে ইস্তাম্বুলের তাকসিম স্কয়ারে জড়ো হয়ে অনেক বিদেশিকে দেখা গেছে উল্লাস করতে। এদের বেশির ভাগ মধ্যপ্রাচ্য ও উপসাগরীয় দেশগুলো থেকে আসা মানুষ। তিউনিসিয়ার নাগরিক আলা নাসার বলেন, এরদোয়ান শুধু নিজ দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখেননি, তিনি আরব ও মুসলিম বিশ্বকে সমর্থন জুগিয়ে যাচ্ছেন।



ঠিকানা/এম

কমেন্ট বক্স