দেড় দশক ধরে সরকার বিরোধী আন্দোলনে থাকা বিএনপি আবারও রাজপথে ফিরতে চায়। গত বছরের ২৮ অক্টোবর ক্ষমতাসীনদের দমন পীড়নে মাঠ ছেড়ে চলে যাওয়া দলটি আবার নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে ফিরতে চায়। অব্যাহত রাখতে চায় আন্দোলন। ভবিষ্যত কর্মসূচি কেমন হবে এ বিষয়ে দলটির নেতাদের মতামত নিচ্ছেন বিএনপির হাইকমান্ড।
ভবিষ্যত আন্দোলন নিয়ে দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। ক্ষমতাসীনরাও দেখার অপেক্ষায় এবার কী কর্মসূচি নিয়ে মাঠে হাজির হচ্ছেন বিএনপি নেতারা। বিএনপির সমমনা দলগুলোও তাদের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে পরবর্তী আন্দোলন কর্মসূচি ঠিক করবে। 
বিএনপি নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি দিয়ে মাঠে ফিরতে চায়। তারা শান্তিপূর্ণ ধারায় রাজনীতি করতে চায়। এমটাই ইঙ্গিত দিয়েছেন দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা। 
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান আজ জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত শেষে বলেছেন, এখানে মানুষের কথা বলার অধিকার নেই, মানুষের মৌলিক অধিকার নেই, মানুষের ভোটের অধিকার নেই এবং এখানে মানুষের গণতন্ত্রের অধিকার নেই।
তিনি বলেন, বিএনপি আওয়ামী লীগের মতো লগি-বৈঠার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। আমরা শান্তিপূর্ণ, নিয়মতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী। আর আমাদের যে কর্মসূচি তা চলমান রয়েছে। এই চলমান কর্মসূচি আমরা সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে অব্যাহত রাখব। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করব। 
নির্বাচনপরবর্তী পরিকল্পনা কিংবা আন্দোলন কেমন হবে— এই প্রশ্নের জবাবে বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান শুক্রবার বলেন, মূলকথা— জিয়াউর রহমানের যে আদর্শ, তিনি দেশকে পুনর্গঠন করেছেন, দেশের অর্থনীতিকে উন্নত করেছেন, সমৃদ্ধ বাংলাদেশের সূচনা করেছেন- আজকে সেটি ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে। সেখান থেকে দেশকে রক্ষা, তিনি যে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সেই গণতন্ত্রকে আবার মেরে ফেলা হয়েছে। সেটিকে পুনরুজ্জীবিত করার যে লড়াই, সেই লড়াই চলছে। আর সেই লড়াইয়ের যে বিভিন্ন কর্মসূচি তা আপনাদের (সাংবাদিক) জানানো হয়। 
গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আগামী আন্দোলন কর্মসূচি শিগগিরই জানিয়ে দেওয়া হবে বলেও জানান এই নেতা।
এদিকে সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবিতে আন্দোলন আবারও চাঙা করার পরামর্শ দিয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনের শুরুর দিন ৩০ জানুয়ারি অথবা এর আগে কর্মসূচি রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। 
সেক্ষেত্রে ঢাকায় বড় ধরনের সমাবেশ করার প্রস্তাব দিয়ে নেতারা বুধবারের বৈঠকে বলেছেন, জনগণ ভোট বর্জন করে পরিষ্কার বার্তা দিয়েছে, বিএনপির আন্দোলনের সঙ্গে তারা রয়েছে। তাই সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরুর আগেই সমাবেশ করে জনগণকে বার্তা দেওয়া উচিত বড় দল হিসাবে বিএনপি দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত মাঠে থাকবে। সমাবেশ করা হলে নেতাকর্মীরা আবারও উজ্জীবিত হবে। দেশের পাশাপাশি বিদেশিদের কাছেও বার্তা যাবে বিএনপি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে রয়েছে। আরও শক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছে। এছাড়া কারাবন্দি নেতাকর্মীদের আইনি সহায়তাসহ নানা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের।
বুধবার তারেক রহমান ভাইস চেয়ারম্যান, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম, অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন ও ঢাকা মহানগর নেতাদের সঙ্গে পৃথক ভার্চুয়াল বৈঠক করেন। এর আগে মঙ্গলবার স্থায়ী কমিটি, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গেও পৃথক ভার্চুয়াল বৈঠক করেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের একজন সিনিয়র নেতা বলেন, স্বাভাবিক রাজনীতিতে ফেরার প্রক্রিয়া শুরু করার বিষয়ে দলের ভেতর আলোচনা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয় এবং নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় খোলা হয়েছে। আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে। আদালত থেকে নেতাকর্মীরাও জামিন পেতে শুরু করেছে।
সরকারবিরোধী অতীতের আন্দোলন সংগ্রাম ও ভবিষ্যত করণীয় নিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী যুগান্তরকে বলেন, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সিনিয়র নেতারা নিজ নিজ জায়গা থেকে সর্বোচ্চ কাজ করেছেন। তারা আন্দোলনকে নানাভাবে গতি দিয়েছেন। এত মামলা, হামলা ও গণগ্রেফতারের মধ্যেও তারা কর্মসূচি পালন করেছেন। স্থায়ী কমিটির নেতারাও রাস্তায় রাস্তায় মিছিল, লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ করেছেন। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও জনগণ বিএনপির পক্ষে ছিল। আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মী কারাবন্দি। এর মধ্যেও কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা সর্বোচ্চ দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
ঠিকানা/ছালিক
                           
                           
                            
                       
     
  
 


 ঠিকানা অনলাইন
 ঠিকানা অনলাইন  
                                
 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                
