Thikana News
২১ জুলাই ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫
সুগন্ধি বিশ্বে সুপরিচিত নাম আল হারামাইন

দুবাইয়ে ব্যবসাক্ষেত্রে উজ্জ্বল নাম সিআইপি মাহতাবুর রহমান নাসির

দুবাইয়ে ব্যবসাক্ষেত্রে উজ্জ্বল নাম সিআইপি মাহতাবুর রহমান নাসির ছবি সংগৃহীত
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১২ সাল থেকে টানা ১১ বার বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (সিআইপি) নির্বাচিত হন তিনি। বৈধ চ্যানেলে সর্বাধিক বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণকারী ক্যাটাগরিতে সিআইপি নির্বাচিত হন স্ত্রী-সন্তানসহ তার পরিবারের আরও কয়েকজন সদস্য। বলা হচ্ছে বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত শিল্পপ্রতিষ্ঠান আল হারামাইন গ্রুপের কর্ণধার, এনআরবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশের কৃতীসন্তান মোহাম্মদ মাহতাবুর রহমান নাসিরের কথা। তিনি বাংলাদেশ, মধ্যপ্রাচ্যসহ সারা বিশ্বের একজন স্বনামধন্য ব্যবসায়ী ও সফল উদ্যোক্তা। বাংলাদেশের সিলেট জেলার এক ঐতিহ্যবাহী পরিবারে ১৯৫৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন মোহাম্মদ মাহতাবুর রহমান নাসির। তার বাবা ছিলেন আল হারামাইনের প্রতিষ্ঠাতা কাজী আব্দুল হক।

সর্বশেষ ২০২৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মোহাম্মদ মাহতাবুর রহমানকে সিআইপি কার্ড ও সম্মাননা প্রদান করেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন মন্ত্রী ইমরান আহমদ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। ওই দিন মাহতাব ছাড়াও তার পরিবারের আরও ছয় সদস্য সিআইপি নির্বাচিত হন। তারা হলেন মোহাম্মদ মাহতাবুর রহমানের সহধর্মিণী ও এনআরবি ব্যাংকের পরিচালক বায়জুন নাহার চৌধুরী, ছেলে ও আল আরাফা ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক মোহাম্মদ এমাদুর রহমান, পুত্রবধূ ও এনআরবি ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডার ফারহানা আহমেদ, ভাই ও এনআরবিসি ব্যাংকের পরিচালক মোহাম্মদ অলিউর রহমান এবং দুই ভাতিজা ও এনআরবি ব্যাংকের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ এহসানুর রহমান ও মোহাম্মদ আশফাকুর রহমান। বৈধ চ্যানেলে অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে মাহতাবুর রহমান সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণকারী। মাহতাবুর রহমান নাসির আজ শুধু একটা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিক নন,মধ্যপ্রাচ্যে বসবাসরত বাঙালি কমিউনিটির আশা-ভরসার কেন্দ্রস্থল। একজন প্রবাসী বাঙালি শ্রম, ঘাম ও মেধা বিনিয়োগ করে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা সবার জন্য অনুকরণীয়-অনুসরণীয়।

আল হারামাইনের সুগন্ধি বিশ্বে আজ এক সুপরিচিত নাম। আরবের বালুকাময় প্রান্তরের প্রাণকেন্দ্র মক্কায় ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে। মক্কার মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীর নাম অনুসারে এর নামকরণ করা হয়। ১৯৯২ সালে আল হারামাইন সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে সবচেয়ে ছোট শহর আজমানের রুমাইলাতে আগর কাঠ প্রসেসিং ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্টে বিনিয়োগ করে এবং আরব আমিরাতে পারফিউম প্রক্রিয়াজাতকরণ ও প্যাকেজিং শুরু করে। প্রাথমিকভাবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রফতানি সক্ষমতা বা সুবিধা গ্রহণের জন্য দেশটিতে ব্যবসা স্থানান্তর করা হয়েছিল। ১৯৯৭ সালে আল হারামাইন আজমানের নতুন শিল্প অঞ্চলে ১ লাখ ৮০ হাজার বর্গফুটের সুগন্ধি কারখানা চালু করে। ১৯৯৮ সালে আল হারামাইন একটি ছোট দোকান নিয়ে কুয়েতের খুচরা বাজারে প্রবেশ করে। ১৯৯৯ সালে সর্বপ্রথম আল হারামাইন দুবাইয়ের শুল্কমুক্ত বাজারে প্রবেশ করে। ধীরে ধীরে আল হারামাইনের এই সুগন্ধি বালুময় আরবের সীমানা ছাড়িয়ে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার মতো পর্যটন রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তী সময়ে তারা অন্যান্য আন্তর্জাতিক শুল্কমুক্ত বাজারে চলে আসে। বাংলাদেশে আল হারামাইনের প্রথম দোকান যমুনা ফিউচার পার্কে। পরে বসুন্ধরা সিটি কমপ্লেক্সের নিচতলায় সুন্দর সুন্দর পাত্রে সুগন্ধি ও আতর দিয়ে একটি দোকান সাজানো হয়।

আল হারামাইনের শুধু আতরই নয়, বিভিন্ন আকারের কাচের বোতলও আকর্ষণীয়। ইসলামি ঐতিহ্যের ছাপ স্পষ্ট। আল হারামাইন ব্র্যান্ডের সুগন্ধি বোতলে সুন্দর ও আকর্ষণীয় নকশা থাকে। মূল্যবান পারফিউমসহ পাত্রগুলো আরব মরুভূমি এবং অতীতের বাদশাহদের সুগন্ধযুক্ত বিলাসবহুল জীবনকে মনে করিয়ে দেয়। বছরের পর বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি অসংখ্য পণ্য উৎপাদন করছে এবং বিভিন্ন মানুষের মানসিকতা, চাহিদা, পছন্দ, রুচি, বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সুগন্ধিগুলোতে ব্যতিক্রমী মিশ্রণ তৈরি করেছে। আল হারামাইন পারফিউম ১ হাজার ৩০০টিরও বেশি বিভিন্ন সুগন্ধি উৎপাদন করেছে।

গত এক দশকে বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে মাহতাবুর রহমান নাসিরের সখ্য দিন দিন বাড়ছে। এর মধ্যে যেমন আছেন আর্থিক খাতের নীতিনির্ধারণী ভূমিকায় থাকা কর্তাব্যক্তিরা, তেমনি আছেন প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় যুক্ত প্রভাবশালী সরকারি কর্মকর্তারাও। অবলীলাক্রমে প্রত্যেকের কাজের সুরাহা করে দিচ্ছেন এই ব্যবসায়ী। দীর্ঘদিন বসবাসের সুবাদে দুবাইয়ের সব গলিপথ চেনাজানা মাহতাবুর রহমানের। তাই বাংলাদেশি প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা দুবাই গিয়ে তার দ্বারস্থ হচ্ছেন। গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কর্মকর্তা কিংবা প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা দুবাই গিয়ে মাহতাবুর রহমানের আতিথেয়তায় থাকছেন। অতিথিদের থাকা-খাওয়ার পাশাপাশি বিনোদনের ব্যবস্থাও করছেন তিনি। নিজের বিলাসবহুল ‘রোলস রয়েস’ গাড়ি অতিথিদের ব্যবহার করতে দিচ্ছেন অবলীলায়। পাশাপাশি আরব শেখদের সঙ্গে পরিচয়ের সুযোগও মিলছে তার কল্যাণে।

এ বিষয়ে মাহতাবুর রহমান নাসির বলেন, ‘আমরা সংযুক্ত আরব আমিরাতে পণ্য উৎপাদন করে গর্বিত। আমাদের পণ্য জিসিসি, ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের ৪০টিরও বেশি দেশে পাওয়া যায়। উপসাগরীয় দেশগুলোতে এই প্রতিষ্ঠানের ৪৫টিরও বেশি শোরুম রয়েছে। এই সুগন্ধিশিল্পে আমাদের বয়স ৪০ বছরেরও বেশি। ইতিমধ্যে আমরা আমাদের রফতানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছি। আমরা ইউরোপের প্রধান দেশগুলো এবং প্রায় সমস্ত মধ্যপ্রাচ্যের দেশ, চীন, ভারত, পাকিস্তানসহ শীর্ষ এশীয় দেশগুলোতে পণ্য রফতানি করি। আমাদের পণ্য দুবাই, আবুধাবি, শারজাহ বিমানবন্দরগুলোর সব দোকানে শুল্কমুক্ত পাওয়া যায়।’

আজ আল হারামাইন একটি স্বপ্নের বাস্তবায়নের নাম, বিশাল সফলতার নাম। প্রবাসীদের সফলতার গল্প।

ঠিকানা/এনআই

কমেন্ট বক্স