Thikana News
১৩ মার্চ ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫

ট্যাপ ট্যাপ সেন্ডের  বাংলাদেশি ম্যুরাল  আঁকলেন জিহান

ট্যাপ ট্যাপ সেন্ডের  বাংলাদেশি ম্যুরাল  আঁকলেন জিহান নিউইয়র্ক : ম্যুরালের সামনে কাউন্সিলম্যান শেকর কৃষ্ণান, জিহান ওয়াজেদসহ অন্যান্যরা।
ঠিকানা রিপোর্ট : বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নতুন প্রজন্মের শিল্পী জিহান ওয়াজেদ এবার বাংলাদেশি ম্যুরাল এঁকেছেন নিউইয়র্কের বাংলাদেশি অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটসের প্রাণকেন্দ্র ডাইভারসিটি প্লাজায়। ম্যুরালে বাংলাদেশের চিরায়ত বাংলার রূপ, অর্থাৎ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য তুলে ধরেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান এই চিত্রশিল্পী। 

এর আগে লোয়ার ম্যানহাটনের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার, কুইন্সের শেয়া স্টেডিয়ামসহ বহুজাতিক নিউইয়র্ক নগরীর বড় বড় স্থাপনায় শোভা পাচ্ছে জিহানের আঁকা দৃষ্টিনন্দন ম্যুরাল। জ্যাকসন হাইটসে আঁকা বাংলাদেশ ম্যুরাল ডাইভারসিটি প্লাজার সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিয়েছে। 

মেয়র ডি ব্লাজিওর সময়কালে নির্মিত ডাইভারসিটি প্লাজা নানা কারণেই অভিবাসী বাংলাদেশীদের নিকট হয়ে উঠেছে আকর্ষণীয়। ছোট ছোট সভা-সমাবেশ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও অবসর সময় কাটানোর জন্য এই পার্কটিকে অধিকতর সুন্দর ও আকর্ষণীয় করতে স্থানীয় জন প্রতিনিধি ও সিটি প্রশাসনের একটি উদ্যোগ ছিলো বরাবরই। সেই উদ্যোগটি সফল হয়েছে জিহান ওয়াজেদের শিল্পকর্ম বাংলাদেশ ম্যুরালের মধ্য দিয়ে। 
ডাইভারসিটি প্লাজা সংলগ্ন দক্ষিণের প্রশস্ত দেয়ালে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ ম্যুরাল। পাল্টে গেছে স্থানটির চেহারা। অর্থ প্রেরণকারী প্রতিষ্ঠান ট্যাপ ট্যাপ সেন্ড, স্থানীয় সিটি কাউন্সিল মেম্বার শেখর কৃষ্ণান ও রেস্টুরেন্ট মালিক মোহাম্মদ মাসুম চৌধুরীর সম্মিলিত ভূমিকা রয়েছে বাংলাদেশ ম্যুরাল নির্মাণের নেপথ্যে।
গত ১৯ মে শুক্রবার অপরাহ্নে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ ম্যুরাল উদ্বোধন করেন সিটি কাউন্সিল মেম্বার শেখর কৃষ্ণান। ‘সেলিব্রেশন অব ডাইভারসিটি: মেমোরি অব বাংলাদেশ’ নামের ম্যুরালটি ফিতা কেটে উদ্বোধন করার সময় শিল্পী জিহান ওয়াজেদ, মূর‌্যালের স্পন্সরকারী প্রতিষ্ঠান ট্যাপ ট্যাপ সেন্ড কান্ট্রি ম্যানেজার রিমি রশীদ, কর্মকর্তা নওশীন খানসহ নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলি মেম্বার স্টিভেন রাগাহসহ বিভিন্ন কমিউনিটির সাংবাদিক ও উৎসুক ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। 

ম্যুরালটির উদ্বোধনী পর্বে বক্তব্য রাখেন কাউন্সিলম্যান শেখর কৃষ্ণান, শিল্পী জিহান ওয়াজেদ, ট্যাপ ট্যাপ সেন্ড’র কর্মকর্তা নওশীন খান, কান্ট্রি ম্যানেজার রিমি রশীদ, নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলি মেম্বার স্টিভেন রাগাহ, নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর জেসিকা রোজাস, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট মোফাজ্জল হোসেন প্রমুখ। 
শেখর কৃষ্ণান শিল্পী জিহান ওয়াজেদ’র শিল্প কর্মের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ডাইভারসিটি প্লাজার এ মূর‌্যালটি যেমন জ্যাকসন হাইটস এলাকার সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করেছে তেমনি সমৃদ্ধ করেছে নিউইয়র্কের বাংলাদেশী কমিউনিটিকে। ট্যাপ ট্যাপ সেন্ড এবং মাসুম চৌধুরীকে ধন্যবাদ জানান তিনি। 
জিহান ওয়াজেদ তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, বাংলাদেশ ম্যুরালটি তার অন্যান্য ম্যুরালের তুলনায় ব্যতিক্রমী একটি সৃষ্টি। তিনি বলেন, বাংলাদেশি আমেরিকান হিসাবে আমি অত্যন্ত গর্বিত ও আনন্দিত এ ম্যুরালটি জ্যাকসন হাইটসের মতো জায়গায় আঁকতে পেরে। এই ম্যুরালের মধ্য দিয়ে আমরা বাংলাদেশের প্রকৃতি, সংস্কৃতি ও স্মৃতি ধরে রাখার প্রয়াস পাবো বলে মন্তব্য করেন জিহান। 

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে উচ্ছ্বসিত প্রতিক্রিয়া ব্যক্তকালে জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশি বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন-জিবিবিএ’র প্রেসিডেন্ট ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী গিয়াস আহমেদ বলেন, জিহান ওয়াজেদ’র বাংলাদেশ ম্যুরালটির জন্য আমরা অত্যন্ত গর্বিত ও আনন্দিত। তার এ শিল্পকর্ম জ্যাকসন হাইটস এলাকায় বাংলাদেশি কমিউনিটির মর্যাদা আরো বৃদ্ধি করেছে। 

নিউইয়র্ক সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামসের সাউথ এশিয়ান উপদেষ্টা ফাহাদ সোলায়মান এ ধরণের কাজে সিটির সহায়তার জন্য ধন্যবাদ জানান। 
উল্লেখ্য, জিহান ওয়াজেদের স্টুডিও ম্যানহাটনের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে। তার অন্যতম শিল্প কর্মের মধ্যে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ভবন, নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক স্পোর্টস কমপ্লেক্স বিলি জিন কিং ন্যাশনাল টেনিস সেন্টার, এস্টোরিয়ায় ১৭৭ ফিট দীর্ঘ ‘ওয়েলকাম এস্টোরিয়া’ মুর‌্যাল অন্যতম। এছাড়া নিউইয়র্ক সিটির বিভিন্ন বরোতে বড় বড় ম্যুরাল অঙ্কণ করেছেন জিহান ওয়াজেদ। 
মুর‌্যাল ছাড়াও নিউইয়র্কে ম্যানহাটানের গ্যালারিতে তার বেশ কয়েকটি একক চিত্র প্রদর্শনী ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে মুলধারায়। মিকৌলে অনারি জিহান ওয়াজেদ বারুখ কলেজ থেকে পারসেপচুয়াল সাইকোলজিতে গ্রাজুয়েশন করলেও তার মনোযোগ একমাত্র ছবি আঁকায়। স্টুডিওতে ছবি আঁকার পাশাপাশি তার নিজস্ব স্টাইলে ম্যুরাল আঁকছেন দেয়ালে। কারণ তার প্রাথমিক আগ্রহ ছিল গ্রাফিটি আঁকায়। কিন্তু গ্রাফিটি আঁকা আইনসিদ্ধ নয়। তার গ্রাফিটি থেকেই তিনি খুঁজে নিয়েছেন ম্যুরালের নিজস্ব ও নতুন ধারা। তার এই ধারাকে পছন্দ করছে শিল্পের শহর নিউইয়র্কের শিল্পবোদ্ধারা। বিশেষ করে তার উজ্জ্বল অথচ শুদিং রঙের ব্যবহার, কার্ভ ও স্ট্রোক যে নতুন মাত্রা তৈরি কওে তার চূড়ান্ত প্রকাশ দৃষ্টি আকর্ষণীীয়। এই সব ম্যুরালের দীর্ঘস্থায়ী মূল্য নিয়ে সন্দেহের অবকাশ থাকলেও অন্তত কিছুকাল তা চোখ ও হৃদয়কে প্রশান্তি দেবে বা চেতনায় দোলা দেবে।  জিহান ওয়াজেদ তার কাজে সম্ভবত ইচ্ছাকৃতভাবেই লাল এবং সবুজ পাশাপাশি ব্যবহার করেন। কেন করেন? সকলের কাছেই তা বোধগম্য। তাহলো এই লাল ও সবুজ বাংলাদেশের পতাকার রঙ। বাংলাদেশ তাই তার ম্যুরালে প্রস্ফুটিত হয়ে ওঠে। নিউইয়র্ক সিটিতে এভাবেই জিহান বাংলাদেশিদের গর্বিত করে চলেছেন। নিউইয়র্ক সিটির হেলথ অ্যান্ড হসপিটালস বিভাগ সম্প্রতি তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন হাসপাতালগুলোতে ম্যুরাল আঁকার জন্যে ১০ জন শিল্পীকে নির্বাচন করেছে। নির্বাচিতদের মধ্যে অন্যতম জিহান ওয়াজেদ। সিটির কুইন্সের হাসপাতালে ম্যুরাল আঁকবেন জিহান। নিউইয়র্ক সিটিকেন্দ্রিক শিল্পী জিহান চিত্রাঙ্কন ছাড়াও ভাস্কর্য, কোরিওগ্রাফি এবং সৃজনশীল নতুন মিডিয়ার সঙ্গে জড়িত। তিনি সিটির জ্যামাইকায় বেড়ে উঠেন। তার শিল্পকর্ম দেয়াল চিত্র ও নৃত্য দ্বারা অনুপ্রাণিত এবং তিনিই প্রথম অগ্রবর্তী বাস্তববাদী শিল্পী, যাকে হেলথ এন্ড হসপিটালস কমিউনিটি ম্যুরাল প্রকল্পের জন্য নির্বাচন করা হয়েছে।






 

কমেন্ট বক্স