Thikana News
০৭ অক্টোবর ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫

শিরশ্ছেদ শিরঃপীড়ার মহৌষধ নয়, বিকল্প খুঁজতে হবে!

শিরশ্ছেদ শিরঃপীড়ার মহৌষধ নয়, বিকল্প খুঁজতে হবে!



 
নিয়তিলাঞ্ছিত ও ভাগ্যবিড়ম্বিত বাঙালির সঙ্গে শাসন-শোষণ, সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা এবং ন্যায্য অধিকার বঞ্চনার রাহুবন্ধন কখন শুরু হয়েছে, তার সঠিক ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায় না। স্মরণাতীতকাল থেকে বিদেশি হানাদার, আরব-অনারব, বণিক সম্প্রদায়, মগ-ঠগ-জলদস্যু তথা মানবরূপী হায়েনারা সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা অরুণাকুন্তলা বাংলার সহায়-সম্পদ বারবার লুণ্ঠন করেছে। সৃষ্টির সেই ঊষালগ্ন থেকেই বহির্বিশ্বের দৈত্যরা বারবার প্রকৃতির রূপসী কন্যা বাংলার সর্বস্ব লুণ্ঠন করে বাংলাকে হৃতসর্বস্ব বিড়ম্বনা-বিধবার বেশ পরিয়েছে। ইন্দ্রিয়পরায়ণ ও নারীসঙ্গলিপ্সু ভিনদেশি দস্যুরা বাংলার পরমা সুন্দরী যুবতী-বধূদের জঠরে অবৈধ গর্ভসঞ্চারের মাধ্যমে বিচিত্র বর্ণ-গোষ্ঠী, গোত্র-ধর্ম, ভাষাভাষী লম্বা-খর্বকায়, কালো-সাদা চেহারা ইত্যাদি বিচিত্র রঙের সংকর বাঙালির জন্ম দিয়েছে। তাই সেই স্মরণাতীতকাল থেকে অদ্যাবধি বাঙালিরা নানা অভিশাপের গুরুভার বহন করে চলছে অধোবদনে ও বিনা বাক্য ব্যয়ে। অবশ্য যুগে যুগে বহু মনীষী, মহাপুরুষ ও প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব বাঙালিকে পূর্বপুরুষদের অভিসম্পাতের পাপ থেকে মুক্ত করার প্রাণান্ত চেষ্টা করলেও তার পুরোপুরি সুফল অদ্যাবধি অধরাই রয়ে গেছে।
যাহোক, সিপাহসালার মিরজাফরের চক্রান্তে ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন ভাগীরথীর তীরবর্তী পলাশীর আম্রকাননে নবাব সিরাজের ভাগ্য বিপর্যয়ের পর বাংলা মায়ের সিঁথির সিঁদুর ভেসে গিয়েছিল ভাগীরথীর জলে। জাতি-ধর্ম, বর্ণ-গোষ্ঠী নির্বিশেষে স্বাধীনতাকামী সর্বস্তর-বয়স-পেশার বীর বাঙালির দীর্ঘ ১৯০ বছরের নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম-ত্যাগ-তিতিক্ষা ও রক্তক্ষয় এবং রাজনৈতিক নেতাদের দূরদর্শিতার ফলে অবশেষে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট ভারত বিভক্তির মাধ্যমে সাবেক পাকিস্তানের অভ্যুদয় ঘটে। কিন্তু অর্থনৈতিক মুক্তি, সামাজিক ন্যায়বিচার, মূল্যবোধ, ধর্মীয় অনুশাসন, প্রকৃত শিক্ষার বিস্তার, ধনী-দরিদ্রের বৈষম্যের অবসান ইত্যাদির বিচারে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের তুলনায় সাবেক পাকিস্তানের ২৩ বছর বাঙালি তথা সাবেক পূর্ব পাকিস্তানিদের উত্তরণ ঘটেছিল উত্তপ্ত কড়াই থেকে প্রজ্বলিত অগ্নিকুণ্ডে। সেই মাৎস্যন্যায় দশার অবসান এবং অধিকারবঞ্চিত বাঙালির মুখে হাসি ফোটানোর লক্ষ্যে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মজলুম জননেতা ভাসানী এবং বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রমুখকে জীবনের বৃহত্তর অংশ কারাবরণসহ অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে ১০ এপ্রিল ঐতিহাসিক বৈদ্যনাথতলায় তাজউদ্দীনের নেতৃত্বে গঠিত বাংলাদেশ সরকারের পরিচালনায় এবং ভারতের সক্রিয় পৃষ্ঠপোষকতায় নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বের মানচিত্রে স্থান পায় রক্তসূর্যবাহী স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। অনস্বীকার্য যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিশেষ কোনো দল-গোষ্ঠী, সম্প্রদায়-বর্ণ, পেশাজীবীর একক অবদান বা আত্মত্যাগ নয়; বরং ৩০ লাখ শহীদ এবং দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম হারানোর পুণ্য ফসল। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন ধর্ম-বর্ণ, গোত্র-গোষ্ঠী নির্বিশেষে রাজনীতিবিদ, রাজনৈতিক নেতাকর্মী, মজুর-কৃষক, কামার-কুমার, জেলে-তাঁতি, শিক্ষক-ছাত্র, কুলি-মেথর তথা সর্ব পেশা, সর্ব বয়স ও সর্বস্তরের আপামর বাঙালি। মুক্তিযুদ্ধে আত্মাহুতিদাতা ৩০ লাখ শহীদের মধ্যেও রয়েছেন হিন্দু-মুসলমান, বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান, উপজাতিসহ সকল বাঙালি-অবাঙালি। দুই লাখ সম্ভ্রমহারা মা-বোনেরাও ছিলেন জাতি-ধর্ম, বর্ণ-গোষ্ঠী নির্বিশেষে বাঙালি-অবাঙালি।
স্মর্তব্য, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মজলুম জননেতা ভাসানী এবং বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর মতো স্বাধীনতাকামী প্রত্যেক বাঙালির স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে মুখভরা হাসি এবং বুকভরা আশার প্রত্যাশা ছিল। কায়মনোবাক্যে আরও আরাধ্য ছিল সব ধরনের বৈষম্য- শোষণ, নির্যাতন-অন্যায় ও পাশবিক শক্তির সমূল উৎপাটন। কিন্তু সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের সূচনালগ্নে সর্বসাধারণের সেই আশার গুড়ে বালি পড়ল। অর্থনৈতিক ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে একশ্রেণির তথাকথিত দেশপ্রেমিক সর্বভূক হায়েনার সর্বগ্রাসী ক্ষুধা এবং অর্থবিত্ত কুক্ষিগত করার দুর্দমনীয় মোহ দেশ ও জাতির যাবতীয় স্বপ্ন ও আকাক্সক্ষা দুমড়ে-মুচড়ে নিশ্চিহ্ন করে দিল। তারা সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে সর্বপ্রথম মরণাঘাত হানল বাঙালির অস্থিমজ্জার সঙ্গে মিশে থাকা জীবনধারণের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান লবণের ওপর। কারও অজানা নয়, সিংহ ভাগ বাঙালি স্বল্পে পরিতুষ্ট এবং তারা নামীদামি মসলাযুক্ত মুখরোচক ও সুস্বাদু খাবারের জন্য আদৌ লালায়িত নয়। নিজের কষ্টার্জিত অর্থে কেনা মোটা চালের ভাত, হলুদ-মরিচ এবং লবণসেদ্ধ ডাল-আলু-শাক-পাতা খেয়ে তারা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন। এ জন্য বিলাসবহুল জীবনযাপন এবং সুস্বাদু-মুখরোচক খাবার গোগ্রাসে গিলতে অভ্যস্তদের তুলনায় তাদের চাহিদার পরিমাণও নেহাত সীমিত এবং রোগব্যাধিও নিতান্ত কম। অনস্বীকার্য যে, নিমকহারাম, চমৎকার ব্যঞ্জনে নিমকের অভাব ইত্যাদি নিছক প্রবাদ-প্রবচন কিংবা চটকদারি ঢঙের উক্তি নয়। বাংলার সহস্র বছরের কৃষ্টি-সংস্কৃতি-ঐতিহ্য, রাজনৈতিক উত্থান-পতন, ক্ষমতার হাতবদলের ইতিহাস এসবের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। অথচ সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের একশ্রেণির প্রভাবশালী রাজনীতিক, আমলা-কামলার কারসাজিতে ১ আনা সেরের লবণের দাম রাতারাতি ১ টাকা, ২ টাকা, ৫ টাকা, ১০ টাকা এবং অবশেষে দুষ্প্রাপ্য হয়ে গেল। বাজার থেকে লবণ উধাও হয়ে যাওয়ায় তৎকালীন সাড়ে সাত কোটির মধ্যে প্রায় পাঁচ কোটি বাংলাদেশির পক্ষে চড়া দামে লবণ কেনা কিংবা লবণসেদ্ধ লতা-পাতা, কুমড়ার ডাঁটা, শাকান্নে ক্ষুধা নিবারণ দুঃসাধ্য হয়ে উঠল। লবণবিহীন রান্নাকৃত শাক-লতা খেয়ে বহু প্রতিবেশীকে গালফোলাসহ নানা উপসর্গে ভোগার দৃশ্য দেখার দুর্ভাগ্য আমারও হয়েছিল। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকেও লবণ কারসাজির খেসারত কম দিতে হয়নি। সে বছরই সর্বপ্রথম কোরবানির লাখ লাখ পশুর চামড়া লবণের অভাবে প্রক্রিয়াজাত করা সম্ভব হয়নি এবং কোটি কোটি চামড়া নষ্ট হয়েছিল। অথচ কালোবাজারি চক্র বহাল তবিয়তে ধরাছোঁয়া এবং আইনের ঊর্ধ্বেই রয়ে গেল। লবণের দগদগে ক্ষত পুরোপুরি শুকানোর আগেই দেশবাসীকে নতুন করে ধকল সইতে হলো চিনির। বাংলাদেশের অলি-গলি, শহরতলির হাট-বাজার, বন্দর-পোতাশ্রয় সব জায়গা থেকে রাতারাতি চিনি উধাও হয়ে গেল। এক সের চিনি কিনতে যে টাকা লাগত, আক্রার বাজারে ছটাক কিনতেও তার চেয়ে বেশি টাকা লাগল। অগত্যা নিম্ন আয় তো দূরের কথা, মাঝারি আয়ের লোকেরাও চিনি খাওয়া বর্জন করলেন এবং চিনিবিহীন ওষুধ-পথ্যও নিরীহ রোগীদের খেতে হয়েছিল। পরে পত্রিকান্তরে জানা গেল, বুড়িগঙ্গার জলরাশি চিনির স্বাদে সুমিষ্ট হয়ে উঠেছে, পাশাপাশি জনদুর্ভোগও তুঙ্গে উঠেছে।
যাহোক, চিনির কারসাজি বিদায় নেওয়ার অব্যবহিত পরপরই সর্বস্তরের বাঙালির নিত্য আহার্য হিসেবে পরিচিত মরিচের সংকট মোকাবিলা করতে হলো স্বাধীন বাংলাদেশের হতভাগ্য প্রায় ছয় কোটি মানুষকে। ১০ থেকে ২০ টাকা সেরের মরিচের দাম রাতারাতি ১০০/২০০/৩০০ টাকায় পৌঁছায় ছাপোষা, নিম্ন-মধ্য ও স্বল্প আয়ের দিনমজুর, শ্রমিক সম্প্রদায়ের দুর্ভোগ চরমে উঠল। প্রতিকার এবং প্রতিরোধের সামর্থ্য না থাকায় ৯০ শতাংশ বাংলাদেশি সকল প্রতিকূলতাকে অধোবদনে ও বিনা বাক্য ব্যয়ে স্বীকার করে নিল। সরকারের পক্ষ থেকে আইওয়াশ হিসেবে ভোক্তা অধিদপ্তর, বাজার নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ইত্যাদি নানা মুখরোচক বুলির আড়ালে কালোবাজারি চক্রের সুরক্ষা এবং সর্বসাধারণকে শোষণের চিরস্থায়ী ব্যবস্থা কায়েম করা হলো। মূলত রাজনৈতিক মুনাফাখোরেরা স্বাধীন বাংলাদেশের প্রারম্ভিক পর্যায় থেকেই বিহারিদের পরিত্যক্ত সম্পদ এবং সরকারি-বেসরকারি কোষাগার লুণ্ঠন, নদীনালা-খালবিল দখলের মাধ্যমে রাতারাতি বড়লোক হওয়ার প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছিল। একশ্রেণির দলীয় নেতাকর্মীর বিশ্বের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার ত্রাণসামগ্রী লুটপাটে অতিষ্ঠ জাতির জনক ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেছিলেন, সাড়ে সাত কোটি বাঙালির জন্য আট কোটি কম্বল পাওয়া গেছে। আমার আর আমার বাবার কম্বল কোথায়? আবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে কালোবাজারি চক্রের কারসাজিতে ১৯৭৪ সালের স্মরণকালের সর্বাপেক্ষা ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমি সারা দুনিয়া থেকে ভিক্ষা করে যা আনি, চাটার দল তা খেয়ে ফেলে।
মোদ্দাকথা, রাজনৈতিক মুনাফাখোর, আমলা-কামলা, দুর্বৃত্তদের কারণেই মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, এক সাগর বিসর্জিত রক্ত, মা-বোনের খোয়ানো সম্ভ্রম, মুক্তিযোদ্ধা এবং সর্বস্তরের পেশা ও বয়সী আপামর বাঙালির আত্মত্যাগ কর্পূরের মতো উবে গেছে। পরিণতিতে মনুষ্যত্ববোধ, ন্যায়বিচার, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের অপমৃত্যু হয়েছে এবং নতুন এক দানবীয় শক্তি সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে কুক্ষিগত করেছে। আর রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি আমলা-কামলা, স্বার্থান্বেষী মহলের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে ঘুষ-দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, লুণ্ঠন দুরারোগ্য ক্যানসারের মতো পারিবারিক-সমাজ-রাষ্ট্রযন্ত্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়েছে। এদিকে সপরিজনে জাতির জনকের ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে কী ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে, তার ওপর আলোকপাত অসংলগ্ন বিধায় এড়িয়ে যাওয়া হলো।
শেয়ারবাজারের সঙ্গে দেশের মোট জনসংখ্যার অতি ক্ষুদ্রাংশ জড়িত বিধায় জিনের বাদশা, রহমতের ভান্ডার প্রমুখের কর্মকাণ্ড নিয়ে সময়ক্ষেপণ অযৌক্তিক মনে করছি। তা সত্ত্বেও একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশে কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয় বিধায় বিষয়টির নিছক তদন্ত নয়, দোষীদের উপযুক্ত শাস্তিও দাবি করছি। আবার গরু-ছাগলের মাংসের সিন্ডিকেটের বিষয়ও আলোচনায় প্রাধান্য পাচ্ছে না। কারণ ৯০ শতাংশ দেশবাসীর পক্ষে ৬৫০ টাকা কেজির গরুর কিংবা ১,০০০ টাকা কেজির ছাগলের মাংস কল্পনাতীত সামগ্রী। বছরে একটি বকরি ঈদ এবং দু-একটি কাঙালিরভোজের মাংসে হতদরিদ্র বাংলাদেশিরা নিজেদের কাক্সিক্ষত মাংসের স্বাদ মিটিয়ে থাকে। তবে পেঁয়াজ-রসুন-আদা, ভোজ্য তেল, চিনি-লবণ-গুড়, চাল-ডাল ইত্যাদি নিত্য অপরিহার্য পণ্যসামগ্রীর সিন্ডিকেটের কর্মকাণ্ড আলোচনার দাবি রাখে।
পত্রিকান্তরে প্রকাশ, পেঁয়াজের দাম বাড়ানোর ফলে ভোক্তারা পেঁয়াজ কেনা বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে গুদামে পেঁয়াজ নষ্ট হচ্ছে। সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে এটি প্রশংসার দাবি রাখে। তবে কালোবাজারি এবং সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে এটি আদৌ কোনো বিহিত ব্যবস্থা নয়। কারণ পেঁয়াজ নষ্ট হলে সিন্ডিকেট সাময়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সত্য; পরবর্তী সময়ে ১০০ গ্রামের বিনিময়ে ১ কেজির দাম আদায় করে তারা ক্ষতি কড়ায়-গন্ডায় পুষিয়ে নেবে। আমাদের স্মরণ রাখতে হবে, দা দিয়ে কুমড়ায় অঘাত করলে কুমড়া কাটা যায়। আবার কুমড়ার ওপর দা দিয়ে আঘাত করলেও কুমড়াই কাটা যাবে। তাই নিয়তিলাঞ্ছিত কোটি কোটি বাংলাদেশির জন্য পেঁয়াজ-কাঁচা মরিচ ইত্যাদি বর্জন কোনো সুফল বয়ে আনবে না। আবার পেঁয়াজ ছাড়া বাদবাকি অপচনশীল জীবনধারণের একান্ত অপিরহার্য উপকরণগুলো তারা মাসের পর মাস গুদামজাতকরণের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অসহায় জনগণের গলা কাটতে এবং দুর্ভোগের মাত্রা ইচ্ছেমতো বাড়াতে পারেন। তাই বর্জন কিংবা শিরঃপীড়ার অজুহাতে শিরñেদ কোনো প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা হতে পারে না। এতে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য আরও বৃদ্ধি পাবে এবং জনদুর্ভোগ আরও তুঙ্গে উঠবে। তাই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে নিছক তদন্ত কমিটি গঠন নয়, অনুপুঙ্খ তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের আইনের আওতায় আনতে এবং যথোপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
স্মর্তব্য, মানুষ নাগালের মধ্যে যা পায় তা খেয়েই জীবন ধারণ করে। এভাবেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও প্রান্তের মানুষের গড়ে উঠেছে বিচিত্র ধরনের  খাদ্যাভ্যাস। এটি কোনো যান্ত্রিক প্রক্রিয়া কিংবা ছাদে ঢালাই জীবনব্যবস্থাও নয়। আরবের জনগণ খেজুর, নেদারল্যান্ডসের বাসিন্দারা আলু, নিউজিল্যান্ডসহ মৎস্যবহুল অঞ্চলের বাসিন্দারা মাছ ইত্যাদি খেয়ে জীবন ধারণ করে। আর সাধারণ বাঙালিদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় স্থান পেয়েছে ভাত-ডাল-শাকসবজি এবং ভোজন ও রসনাবিলাসীদের খাবার তালিকায় হরেক রকম মসলাসমৃদ্ধ মুখরোচক খাবার। এমনতর বাস্তবতায় বাংলাদেশের সিংহভাগ জনগোষ্ঠীকে যদি অর্থাভাবে পেঁয়াজ-রসুন, আদা-লবণ, তেল-ডাল ইত্যাদি অপরিহার্য উপাদান বর্জন করতে হয়, তবে তাকে নিয়তির নির্মম পরিহাসই বলতে হবে। ১৯৫০ এর দশকের একটি গল্পের উদ্ধৃতি দিয়ে ইতি টানতে চাই। পঞ্চাশের দশকের দুর্ভিক্ষের সময় পাকিস্তানের খাদ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন ঢাকার ঐতিহ্যবাহী নবাব পরিবারের জনৈক সদস্য। দুর্ভিক্ষকবলিত একদল বুভুক্ষু জনতা বিশাল মিছিল নিয়ে খাদ্যমন্ত্রীর বাসগৃহের বাইরে জড়ো হয়ে নানা স্লোগান দিতে লাগলেন। মন্ত্রীর উৎসুক নাতনি জানতে চাইলেন, জনগণ কেন শোর-চিৎকার করছে। পরিবারের জনৈক সদস্যা বললেন, ভাতের অভাবের কারণেই মানুষ মিছিল করছে। নাতনির চোখ তখন চড়কগাছ। সে সবিস্ময়ে বলল, ভাত না মিললে মানুষ বিরিয়ানি খাবে, এত চেঁচামেচি কিসের! এখন ভাতের অভাবে বিরিয়ানি কিংবা জীবনধারণের প্রাত্যহিক অপরিহার্য পেঁয়াজ-রসুন ইত্যাদির পরিবর্তে অসহায় বাংলাদেশিদের কী খেতে হবে-সেই পরামর্শ দেওয়ার অনুরোধ রইল ঠিকানার পাঠকদের প্রতি। 
লেখক : সহযোগী সম্পাদক, ঠিকানা, নিউইয়র্ক। ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩ 

কমেন্ট বক্স