গেল বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরেও রপ্তানি আয় কমেছে। ডিসেম্বরে রপ্তানি হয়েছে ৫৩১ কোটি ডলারের পণ্য। এর আগের বছরের ডিসেম্বরে ৫৩৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। এ নিয়ে টানা তিন মাস রপ্তানি আয় কমলো। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) গতকাল রপ্তানির হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে।
রপ্তানি কমে যাওয়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে বলে মনে করেন কোনো কোনো উদ্যোক্তা। পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান হান্নান গ্রুপের চেয়ারম্যান এবিএম শামছুদ্দিন সমকালকে বলেন, গত তিন মাসের মতো রপ্তানিতে নেতিবাচক ধারা আগামী মাসগুলোতেও অব্যাহত থাকতে পারে। এপ্রিলের আগে রপ্তনি বৃদ্ধির সুযোগ নেই। কারণ হিসেবে বড় বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থনীতির মন্থর গতির কথা উল্লেখ করেন তিনি। তাঁর মতে, পোশাকের চাহিদা কমেছে এসব দেশে। তিনি তাঁর নিজের কারখানার রপ্তানি গত অর্থবছরের চেয়ে চলতি অর্থবছরে কমার আশঙ্কা করছেন।
গত অক্টোবর মাসে রপ্তানি কম হয় প্রায় ১৪ শতাংশ। নভেম্বরে রপ্তানি কম হয় ৬ শতাংশ। মাসওয়ারি রপ্তানিতে অক্টোবর থেকেই পতন শুরু হয়। এর আগে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের ভালো রপ্তানি আয়ের সুবাদে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ মাসে সার্বিক রপ্তানি নেতিবাচক হয়নি। জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ মাসে সার্বিক রপ্তানি বেড়েছে ১ শতাংশের মতো। এ সময় রপ্তানি হয় দুই হাজার ৭৫৪ কোটি ডলারের পণ্য, যা আগের একই সময়ে ছিল দুই হাজার ৭৩১ কোটি ডলার। এ সময়ের লক্ষ্যমাত্রা থেকে প্রায় ৯ শতাংশ কম রপ্তানি আয় হয়েছে।
এদিকে পঞ্জিকা বছরের হিসাবে ২০২৩ সালে রপ্তানি বেশি হয়েছে মাত্র ২ শতাংশ। এর মধ্যে প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ৪ শতাংশ। বছরটিতে ৪ হাজার ৭৩৯ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়। আগের বছরের চেয়ে বেড়েছে ১৬৮ কোটি ডলার। পোশাক খাতের ওপর ভর করেই পঞ্জিকা বছরে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি দেখা গেল। অন্যদিকে অর্থবছরের হিসাবে প্রথম ছয় মাসে তৈরি পোশাকের রপ্তানি বেড়েছে ১ দশমিক ৭২ শতাংশ। মোট দুই হাজার ৩৩৯ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয় এ সময়। তবে এই আয় লক্ষ্যমাত্রা থেকে প্রায় ৮ শতাংশ কম। বরাবরের নিটের চেয়ে ওভেনের রপ্তানি কম।
তৈরি পোশাকের বাইরে রপ্তানি তালিকার বড় পণ্যের মধ্যে হোমটেক্সটাইলের রপ্তানি গত ৬ মাসে কম হয়েছে ৩৮ শতাংশ। মোট রপ্তানির পরিমাণ ৩৭ কোটি ডলারের কিছু কম। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৬০ কোটি ডলারেরও বেশি। জানতে চাইলে হোমটেক্সটাইলের সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান জাবের অ্যান্ড জুবায়েরের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, গত বছর গ্যাসের মূল্য অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার পর থেকেই হোমটেক্সটাইল রপ্তানিতে দুর্দিন নামে। রপ্তানি মূল্যের চেয়ে উৎপাদন ব্যয় অনেক বেশি। তাঁর মতো অনেক উদ্যোক্তাই নতুন করে রপ্তানি আদেশ নিচ্ছেন না। আগের রপ্তানি আদেশ শেষ হওয়ার অপেক্ষায় আছেন তারা।
রপ্তানি তালিকার ছোট-বড় বেশির ভাগ পণ্যের রপ্তানিই কমেছে গত ছয় মাসে। বড় পণ্যের মধ্যে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি কম হয়েছে ১০ শতাংশেরও বেশি। গত ৬ মাসে রপ্তানি হয়েছে ৪৪ কোটি ডলারের পণ্য। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৪৯ কোটি ডলার। চামড়া ও চামড়া পণ্যের রপ্তানি কম হয়েছে ১৮ শতাংশ। রপ্তানি হয় ৫২ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়া পণ্য। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৬৪ কোটি ডলার। সব ধরনের হিমায়িত এবং জীবন্ত মাছের রপ্তানি কম হয়েছে ২ শতাংশ। ২৫ কোটি ডলারের রপ্তানি নেমে এসেছে ২২ কোটিতে। তবে বড় পণ্যের মধ্যে কৃষিপণ্য এবং ওষুধের রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। বিভিন্ন ধরনের কৃষিপণ্যের রপ্তানি বেড়েছে ২ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ের ৪৯ কোটি ডলারের রপ্তানি ৫১ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। ওষুধের রপ্তানি বেড়েছে ৮ শতাংশ। ৯ কোটি ডলারের রপ্তানি বেড়ে ১০ কোটি ডলার হয়েছে।
ঠিকানা/এসআর