দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সারা দেশে এক হাজার ১৫১ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
২০২৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর থেকে আগামী ২০২৪ সালের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত ঢাকাসহ সারা দেশের নির্বাচনী এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে বিজিবি মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে। ছবি: রাজীবুল হাসান
শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) পূর্বনির্ধারিত দিনে এ বিপুল সংখ্যক বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হলো।
বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে এবং শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় রাজধানীসহ সারা দেশে এক হাজার ১৫১ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করতে In Aid to the Civil Power এর আওতায় ২০২৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর থেকে আগামী ২০২৪ সালের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত ঢাকাসহ সারা দেশের নির্বাচনী এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে বিজিবি মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে।
এর আগে গত ২০ নভেম্বর নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সম্ভাব্য ব্যয় নিয়ে বৈঠক করে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। সেখানে কোন বাহিনীর কতজন সদস্য নির্বাচনী দায়িত্বে থাকবেন, তা জানানো হয়। ভোটের মাঠে দায়িত্ব পালন করবেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর মোট ৭ লাখ ৪৭ হাজার ৩২২ জন সদস্য।
বৈঠক শেষে ইসি সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ সাংবাদিকদের জানান, ভোটের মাঠে আনসার ৫ লাখ ১৬ হাজার, পুলিশ (র্যাবসহ) ১ লাখ ৮২ হাজার ৯১ জন, কোস্টগার্ড ২ হাজার ৩৫৫ জন, বিজিবির সদস্য থাকবেন ৪৬ হাজার ৮৭৬ জন। নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের কথা ছিল ২৯ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত।
কিন্তু গত মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত হয়। ২৯ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ৩ থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত তাদের মাঠে থাকার নতুন সিদ্ধান্ত জানায় সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ।
সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারের পক্ষে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এইচ এম মাসীহুর রহমানের সই করা পরিপত্রে বলা হয়, নির্বাচন কমিশনের অনুরোধে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য দেশের ৩০০টি নির্বাচনী এলাকায় ৩ জানুয়ারি থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনে আদেশ দেয়া হলো।
নির্বাচনে দায়িত্ব পালনে সশস্ত্র বাহিনীর নিয়োজিত দল ফৌজদারী কার্যবিধি ও অন্য আইন বিধান এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণায় থেকে জারি করা ‘ইন্সট্রাকশন রিগার্ডিং ইন এইড টু দ্য সিভিল পাওয়ারের’ ৭ম ও ১০ম অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী পরিচালিত হবে। মোতায়েনকৃত সশস্ত্র বাহিনী নির্বাচনী কাজে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট পরামর্শে ফৌজদারী কার্যবিধি অনুযায়ী বেসামরিক প্রশাসনকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিম্নরূপ সহায়তা দেবে।
> সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা প্রতিটি জেলা/উপজেলা/মেট্রোপলিটন এলাকায় নোডাল পয়েন্ট এবং সুবিধাজনক স্থানে নিয়োজিত থাকবে।
> রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয় করে জেলা/উপজেলা/থানায় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হবে।
> সশস্ত্র বাহিনীর টিমের সঙ্গে রিটার্নিং কর্মকর্তা কর্তৃক এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হবে এবং আইন, বিধি ও ডদ্ধতিগতভাবে কার্যক্রম গৃহীত হবে।
> সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুরোধে এলাকাভিত্তিক ডেপ্লয়মেন্ট প্ল্যান চূড়ান্ত হবে।
> বাস্তবতা ও প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুরোধে চাহিদামতো আইনানুগ অন্য কার্যক্রম করা হবে।
নির্বাচনের কয়েকদিন আগে থেকে নির্বাচনী এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা, ভৌত অবকাঠামো এবং নির্বাচনী পরিবেশ পরিস্থিতির ওপর প্রাথমিক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে রেকিদল পাঠানো যাবে। রেকিদল সীমিত রাখার জন্য অনুরোধ করা হলো।
সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনে যানবাহনের জ্বালানি, রক্ষণাবেক্ষণ ও ভাড়া, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের দৈনিক ভাতা, কন্টিনজেন্সি, ক্যাম্প/বাসস্থান, পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস এবং টেলিফোন বিল নির্বাচন কমিশন বহন করবে।
যাচাই-বাছাই ও আপিল নিষ্পত্তি শেষে ১৭ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন (ইসি) জানায়, সারা দেশে ২৭টি রাজনৈতিক দলের মোট ১ হাজার ৯০০ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত প্রচারণা চালাতে পারবেন তারা। ভোটগ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি।
এবার নির্বাচনের ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন। আর ভোটকেন্দ্র হচ্ছে ৪২ হাজার ১০৩টি। এক্ষেত্রে প্রায় ১০ লাখ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্রয়োজন হবে, যাদের নিয়োগ দেবেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা।
ঠিকানা/এসআর