এবারের নির্বাচনেও কে জিতবে, তা পরিস্কার। বাকি কেবল আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা। কিন্তু জাতীয় সংসদে বিরোধী দল হবে কারা? জবাব হতে পারে, বিজয়ীরা যাদের বানাবে বা ঠিক করবে। প্রশ্ন এখানেও। কাকে বিরোধীদল হিসেবে উপযুক্ত ভাববে সরকার? প্রশ্ন জটিল। জবাবও কঠিন। ভাবনমুনা বা আগের ধারণায় বিরোধী দল করা হবে জাতীয় পার্টিকে। না করলে কী হবে? বিরোধী দল হওয়ার কি আর কেউ নেই? আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র বা ডামিদের দিয়ে বিরোধীদল বানিয়ে দিলে কেউ আটকাতে পারবে?
কারো কারো ধারণা, জাতীয় পার্টির চেয়ে ভালো পারফর্ম দেখাতে পারবে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র নামের নিজস্ব বিরোধী দলটি। সাধারণ হিসাবে, আসন সংখ্যায় যে দল দ্বিতীয় অবস্থানে থাকবে, সেই দল বিরোধী দলে থাকবে। জাতীয় পার্টি কি এবার সেই দ্বিতীয় পজিশন পাবে, বা সরকার তাদের দেবে সেই পরিমাণ আসন? স্বতন্ত্রদের যদি দ্বিতীয় পজিশন পাইয়ে দেয়া হয়? তখন? সম্মিলিত স্বতন্ত্র জোট বা সম্মিলিত বিরোধী দল করে দিলে কেমন হবে?
এবার খেলা হবে- ঘোষণা ছিল আগেই। খেলা খানিকটা হয়েও গেছে। কে খেলেছে, কে খেলিয়েছে- এ গণিত কষা এখনো বাকি। এটি পাটিগণিতে হয়েছে, না বীজগণিতে হয়েছে, তাও প্রশ্ন। দুই কিংস পার্টির বিশ্বাস ছিল অগাধ। অবিরাম আশ্বাসও পেয়েছে তারা। তা দিয়েই এখানো চলছে তাদের শ্বাস-প্রশ্বাস। কিন্তু, সরকার ও সরকারি দলের যতো নেকনজর জাতীয় পার্টির দিকে। তাদেরকে আস্ত ২৬ আসন ছাড় দিয়েছে। পাটিগণিত-বীজগণিত আর হায়ার ম্যাথ সব গণিতই বড় মোহময়। সেই মোহ অনায়াসে বাস্তব রাজনীতির বোধ ভুলিয়ে দিতে পারে। আসন ভাগাভাগির গণিতের সাথে ফলাফল এখনো বাকি। নির্বাচনের মাঠে এ গণিত ঠিকই মিলবে। রাজনীতিও মিলবে?
এ নিয়ে চলছে কতো যে বিশ্লেষণ। নির্বাচন বর্জনের হুমকি দিয়ে জাতীয় পার্টি ২৬টি আসন হাতিয়ে নিয়েছে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে। এটি জাতীয় পার্টির কাছে আওয়ামী লীগের অসহায় আত্মসমর্পণ, না জাতীয় পার্টিকে সাইড লাইনে ফেলে বশ মানানো? জিএম কাদের তার ভাই এরশাদের নাম রাখতে পেরেছেন। জাতীয় পার্টি ২৮৩ আসনে নির্বাচন করবে, আর আওয়ামী লীগ ও তার ১৪ দলীয় শরিক দলগুলো করবে ২৬৯ আসনে। মানে জাতীয় পার্টি চ্যাম্পিয়ন? সংখ্যা বিচারে? মিত্রদলের জোটে স্বার্থের দ্বন্দ্ব, সরকার দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দাপট, শাসক দলের কোন্দল আর বিবাদ, স্বতন্ত্রদের নিজস্ব ভোট ব্যাংকÑ সর্বোপরি বিভিন্ন মিত্রদল ও নিজ দলের নেতাদের উচ্চাকাক্সক্ষার সার্কাস দেখতেও নির্বাচন লাগে?
রাজনীতিবিদরা মানুষকে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে বললেও রাজনীতির মাঠে ইতিহাস বরাবরই উপেক্ষিত। নীতি-নৈতিকতাও আপেক্ষিক। নইলে যে জাতীয় পার্টি ও এরশাদের নয় বছরের অপশাসনের বিরুদ্ধে যে আওয়ামী লীগ এতো আন্দোলন করলো, এমনকি ১৪ দলের বামপন্থী নেতারাও ‘নৈতিক কারণে’ কখনো জাতীয় পার্টিকে মেনে নেয়নি, তারা এখন পরস্পরের হাত ধরতে এমন ব্যাকুল কেনো? এই ব্যাকুলতা কি বলছে না ক্ষমতাই আসল কথা? অভিন্ন শত্রুর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াই-ই আপাতত আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি ইত্যাদির প্রধান লক্ষ্য? স্বৈরাচার-রাজাকার-অনাচার-ব্যভিচার কেবলই যার যার সুবিধাগত বুলি?
লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট; ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন, ঢাকা।