নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশ কাজ করে যাচ্ছে। এই কাজ করার জন্য জাতিসংঘর প্রধান কার্যালয়, এর বিভিন্ন সংস্থা এবং ঢাকায় জাতিসংঘের বাংলাদেশ অফিস বিভিন্ন ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সম্প্রতি জাতিসংঘ বাংলাদেশ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে-‘জাতিসংঘ বাংলাদেশ’। সেখানে উঠে এসেছে বিভিন্ন কার্যক্রম।
বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের মধ্যে সম্পর্কের সূত্রপাত ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়েই। একাত্তরের মার্চে বাংলাদেশের লাখো মানুষ ভারতে আশ্রয় নেয়। এপ্রিলে ভারত সরকার জাতিসংঘের কাছে শরণার্থীদের মানবিক সহায়তা দিতে অনুরোধ জানায়। এই অনুরোধে তৎকালীন জাতিসংঘ মহাসচিব কুর্ট ওয়াল্ডহেইম উদ্যোগী হন। জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার নেতৃত্বে ভারত সরকারের সঙ্গে অংশীদারীত্বের ভিত্তিতে এবং জাতিসংঘ শিশু তহবিল , বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি,জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল, জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং লিগ অব রেডক্রস সোসাইটির সহযোগিতায় ১ কোটি বাঙ্গালি শরণার্থীকে মানবিক সহায়তা প্রদান কার্যক্রম শুরু হয়। স্বাধীনতার পর শরণার্থীরা স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করে এবং জাতিসংঘ সংস্থাগুলো পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা দেয়।
আরো উল্লেখ করা হয়, জাতিসংঘ সিস্টেম বর্তমানে নতুন প্রজন্মের ‘জাতিসংঘ টেকসই উন্নয়ন সহযোগিতা কাঠামো’ (ইউএনএসডিসিএফ)-এর আওতায় জাতীয় উন্নয়ন অগ্রাধিকারগুলো বাস্তবায়নে সহযোগিতা দিচ্ছে। টেকসই উন্নয়ন অভিষ্ট (এসডিজি) ও টেকসই উন্নয়নে এজেন্ডা ২০৩০-এর পাশাপাশি অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় এই সহযোগিতা দেওয়া হবে। এসডিজি বাস্তবায়ন এবং অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রগুলোর উন্নয়ন জোরদারে বাংলাদেশ সরকারকে সহযোগিতা দিতে জাতিসংঘ সংস্থাগুলো এই নতুন ও সুসঙ্গত পন্থায় একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।
মাইলফলক হিসাবে উল্লেখ করে বলা হয়, ১.জাতিসংঘ বাংলাদেশ এজেন্ডা ২০৩০ ও টেকসই উন্নয়ন অভিষ্ট বাস্তবায়নে সরকারকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে এবং সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে জাতিসংঘ টেকসই উন্নয়ন সহযোগিতা কাঠামো (ইউএনএসডিসিএফ) ২০২২-২০২৬ প্রণয়ন করেছে। এই কাঠামোতে অন্তর্ভূক্তিমূলক, জেন্ডরসমতা ও মানবাধিকার ভিত্তিক উন্নয়ন কর্মকান্ড নিশ্চিতের চেষ্টা করা হয়েছে , যাতে কেউ যেন পেছনে পড়ে না থাকে। সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় সবচেয়ে অগ্রাধিকারের জায়গাগুলোয় সহযোগিতা দেওয়ার মতো করেই ইউএনএসডিসিএফ প্রণীত হয়েছে।
২. বাংলাদেশে জাতিসংঘ সিস্টেম আশ্রয়, খাদ্য, পানি ও পয়নিষ্কাশন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সুরক্ষা কর্মসূচির মাধ্যমে বাংলাদেশে আশ্রিত প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে মানবিক সহায়তা দিতে সরকার ও বেসরকারি অংশীদারদের সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করছে। রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদে ও মর্যাদাপূর্ণভাবে প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে স্বচ্ছতা ও সহযোগিতামূলক উদ্যোগ নিতে বিভিন্ন স্তরের অংশীজনের সঙ্গে কাজ করছে জাতিসংঘ বাংলাদেশ।
৩.জাতিসংঘ বাংলাদেশ সামাজিক সুরক্ষা, যেমন সিলেটে চা বাগানে নারী কৃষক ও তাদের পরিবারের সুরক্ষা জোরদারে বৈশ্বিক এসডিজি যৌথ তহবিল বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে টি গার্ডেন প্রজেক্ট, পাশাপাশি কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে অন্যান্য সামাজিক সুরক্ষা উদ্যোগ বাস্তবায়নে সরকার ও উন্নয়ন অংশীদারদের সঙ্গে আরও বেশি সমন্বিত ব্যবস্থার মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছে।
৪. জলবায়ু পরিবর্তন সংশ্লিষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগকবলিত জনগোষ্ঠীকে সহায়তা দিতে জাতিসংঘ প্রস্তুতিমূলক ও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসমূলক উদ্যোগ নিতে এবং মানবিক সহায়তা জোরদারে সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করছে। জলবায়ু অভিযোজনের জন্য অন্তর্ভূক্তিমূলক অর্থায়নেও অবদান রাখছে জাতিসংঘ । রিও সনদ ও অন্যান্য বহুপাক্ষিক পরিবেশ চুক্তি বাস্তবায়নে নীতি নির্ধারক ও অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক অংশীজনদের দক্ষতা উন্নয়নে বাংলাদেশে জাতিসংঘ সফলভাবে সহায়তা দিয়েছে।
৫. নারীর প্রতি সহিংসতা নির্মূলে, প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার নিশ্চিতে এবং শ্রমবাজার, শিক্ষা ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে জেন্ডারবৈষম্য হ্রাসে বাংলাদেশে জাতিসংঘ সিস্টেম যৌথভাবে সরকার ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে নারীর অধিকার ও নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশে নির্যাতনবিরোধী সনদ প্রতিপালনের বিষয়টি ২০ বছরের মধ্যে প্রথমবার পর্যালোচনা করে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করেছে ইউএন কমিটি এগেইনস্ট টরচার।
৬. কর্মক্ষেত্রে সহিংসতা ও হয়রানি রোধ সনদ গৃহীত হয় ২০১৯ সালের জুনে। এই সনদ একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত যা বহুপাক্ষিক সহযোগিতার ভিত্তিতে অর্জিত হতে পারে। এর খসড়া প্রণয়নে অবদান রেখেছে বিভিন্ন দেশের সরকার, সংস্থা ও শ্রমজীবী সংগঠনগুলো। এর মাধ্যমে সহিংসতা ও হয়রানি, ব্যক্তি, ব্যবসা ও সরকারের ওপর যে গুরুতর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, তা স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশ বিষয়ে বলা হয়, দারিদ্র্য দূরীকরণ, পৃথিবীর পরিবেশ ও জলবায়ু রক্ষায় এবং সকল মানুষ যাতে শান্তি ও সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারে, তা নিশ্চিতে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যগুলো একটি বৈশ্বিক আহ্বান। জাতিসংঘ বাংলাদেশের এই খাতে উন্নয়নের লক্ষে যে সব কাজ করছে তারই একটি বর্ণনা তুলেকরা হয়েছে।
ঠিকানা/এসআর