ঠিকানা অনলাইন 
আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জনে সবাইকে রাস্তায় নামার ডাক দিয়েছে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। এর মধ্যে রয়েছে বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা দল, এলডিপি, গণফোরাম, পিপলস পার্টি, লেবার পার্টি, এবি পার্টিসহ যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) পূর্বঘোষণা অনুযায়ী রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন-সংক্রান্ত লিফলেট বিতরণের পাশাপাশি দলগুলোর নেতারা সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন।
আগামী ৭ জানুয়ারি ভোট বর্জনে গত বুধবার বিএনপিসহ যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত দলগুলো বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার- তিন দিন সারা দেশে জনসাধারণের মাঝে লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি ঘোষণা করে। একই সঙ্গে অসহযোগ আন্দোলন ঘোষণা করে দলগুলো।
বিএনপি : ভোট বর্জনের পক্ষে জনমত গড়তে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে বৃহস্পতিবার এলিফ্যান্ট রোড ও বেইলি রোডে লিফলেট বিতরণ করে বিএনপি। এদিন সকাল সাড়ে আটটার দিকে প্রথমে এলিফ্যান্ট রোডে এবং পরে বেইলি রোডের দোকানপাটের কর্মচারী, ফুটপাতের পথচারী এবং রিকশা-সিএনজি অটোরিকশাচালক ও যাত্রীদের হাতে ৭ জানুয়ারির ভোট বর্জনের লিফলেট তুলে দেন রিজভী। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান, মৎস্যজীবী দলের সদস্যসচিব আব্দুর রহিম, ছাত্রদল নেতা ডা. তৌহিদুর রহমান আউয়াল প্রমুখ। এদিকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের লিচুয়া মিয়ার মার্কেটে ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরীর নেতৃত্বে লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে।
জামায়াতে ইসলামী : বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মজিবুর রহমান বলেন, বারবার নির্বাচনের নামে প্রহসন করে ক্ষমতা দখলের নেশায় আবারও পুরাতন স্টাইলে সাজানো নির্বাচনের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সরকার। তারা পরিকল্পিতভাবে নিজেদের দলীয় লোকদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়ে ডামি প্রার্থী প্রদান করে নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করার এক আজব প্রহসনের আয়োজন করেছে। গত তিনটি নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের নির্বাচন-ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে এবং মানুষের ভোটাধিকার হরণ ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে দাফন করার মাধ্যমে সরকার বাংলাদেশকে চূড়ান্তভাবে বাকশালী রাষ্ট্রে পরিণত করার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
গণতন্ত্র মঞ্চ : আগামী ৭ জানুয়ারির ভোট বর্জনের পক্ষে বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকির সভাপতিত্বে এতে আরও বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, জেএসডির শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, ভাসানী অনুসারী পরিষদের হাবিবুর রহমান রিজু, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির আকবর খান, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের ইমরান ইমন প্রমুখ।
জোনায়েদ সাকি বলেন, আসুন যুগপৎধারায় যার যার অবস্থান থেকে মাঠে নামি, তাহলে মাঠে জনগণের বৃহত্তর ঐক্য গড়ে উঠবে। ঐক্য গড়ে উঠলে এই যে তখতে-তাউস, এই যে অত্যাচারী শাসন- সেটা উড়ে যাবে। এ সময় ৭ জানুয়ারির তামাশার নির্বাচন বর্জন করার আহ্বানও জানান সাকি।
১২ দলীয় জোট : সরকারকে অসহযোগিতা এবং ভোট বর্জনের পক্ষে জনমত গড়তে বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীতে লিফলেট বিতরণ করেছে ১২ দলীয় জোট। পল্টন ও জাতীয় প্রেসক্লাব এলাকায় গণসংযোগ এবং লিফলেট বিতরণকালে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব ও ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের বাঁচার এখন একমাত্র পথ পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।’
এ সময় আরও বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) নওয়াব আলী আব্বাস খান, জাগপার রাশেদ প্রধান, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামী বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মুফতি মহিউদ্দিন ইকরাম, বাংলাদেশ জাতীয় দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুল আহাদ, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন মো. ফারুক রহমান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. শামসুদ্দীন পারভেজ প্রমুখ।
জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট : ভোট বর্জন ও অসহযোগ আন্দোলনের পক্ষে জনসাধারণের মাঝে লিফলেট বিতরণ করেছে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট। বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে শুরু করে জোট নেতারা বিজয়নগর মোড় পর্যন্ত বিভিন্ন দোকানপাট, রিকশাচালক এবং সাধারণ মানুষের কাছে লিফলেট বিতরণ করেন।
এ সময় জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের প্রধান সমন্বয়ক ও এনপিপি চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, আওয়ামী লীগ গণধিক্কৃত দলে পরিণত হয়েছে। এরা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
লিফলেট বিতরণকালে আরও উপস্থিত ছিলেন এনপিপির মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, জাগপা সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এসএম শাহাদাত, গণদলের চেয়ারম্যান এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, এনডিপি চেয়ারম্যান আবু তাহের, মহাসচিব আব্দুল্লাহ আল হারুন সোহেল, বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান শাওন সাদেকী, সাম্যবাদী দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ কমরেড ডা. নুরুল ইসলাম, এনপিপি নেতা নজরুল ইসলাম, জাগপা নেতা আওলাদ হোসেন প্রমুখ।
গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টি : ভোট বর্জন ও অসহযোগ আন্দোলনের পক্ষে জনমত গড়তে বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর বিজয়নগর পানির ট্যাংকি থেকে পুরানা পল্টন মোড় ও আশপাশের এলাকায় লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ করে গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টি। লিফলেট বিতরণকালে গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক সিনিয়র অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, আইন-আদালতকে নিয়ন্ত্রণ করে ফরমায়েশি রায়ে নিরপরাধদের সাজা দেওয়া হচ্ছে। গণতন্ত্র ছিল মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা, সেই চেতনাকে আওয়ামী লীগ ভূলুণ্ঠিত করেছে। ৭ জানুয়ারির ষড়যন্ত্রের নির্বাচনের ফাঁদে জনগণ পা দেবে না।
এতে আরও অংশ নেন বাংলাদেশ পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বাবুল সরদার চাখারী ও মহাসচিব আবদুল কাদের প্রমুখ।
গণঅধিকার পরিষদ (নুর) : ভোট বর্জন ও অসহযোগ আন্দোলনের পক্ষে জনমত গড়তে বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ এবং সেখান থেকে বিজয়নগর পানির ট্যাংকির মোড় পর্যন্ত গণসংযোগ মিছিল করে গণঅধিকার পরিষদ।
এ সময় পরিষদের নেতা নুরুল হক নুর বলেন, এই সরকার ক্ষমতায় থাকতে পাশের দেশের গোলামি করছে। হরতাল-অবরোধের পর অসহযোগ আন্দোলনের বিকল্প নেই। এই আন্দোলন বিভিন্ন ধাপে সাজানো। সময়মতো সঠিক কর্মসূচি হবে। তিন দিনের গণসংযোগের পর ২৪ ডিসেম্বর সর্বাত্মক অবরোধ। ৭ জানুয়ারির আগেই চূড়ান্ত ফল অর্জন করতে হবে। দেশের অস্তিত্ব রক্ষায় জনগণকে এই আন্দোলনে শরিক হওয়ার আহ্বান জানাই।
গণসংযোগে আরও অংশ নেন দলের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, উচ্চতর পরিষদের সদস্য শাকিল উজ্জামান, আবু হানিফ প্রমুখ।
ঠিকানা/এনআই
