চুল পড়ার নানান কারণের মধ্যে স্থূলতা হতে পারে একটি বিষয়। অতিরিক্ত ওজনের জন্য নানান রোগে ভোগা ছাড়াও চুল পড়ার সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
ওয়ার্ল্ড হার্ট ফেডারেশন (ডব্লিউএইচএফ)-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২.৩ বিলিয়ন শিশু ও প্রাপ্ত বয়স্কদের স্থূলতায় সমস্যা রয়েছে। য়ে কারণে স্থূলতাকে মহামারী বলা যেতে পারে। যার সঠিক চিকিৎসা করা না হলে মারাত্মক পরিণতি হতে পারে।
এই বিষয়ে দিল্লির ‘স্কিন ডেকর’ প্রতিষ্ঠানের প্রধান ত্বক বিশেষজ্ঞ ও পরিচালক ডা. মনিকা চাহার মন্তব্য করেন যে, স্থূলকায় ও অতিরিক্ত ওজনের কারণে নারীদের চুল পড়ার মতো স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দেয়।
স্থূলতার সঙ্গে চুল পড়ার সম্পর্ক
হেল্থশটস ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ডা. মনিকা বলেন, “স্থূলতার সঙ্গে নানান রকম অসুখ যেমন- হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও অন্যান্য সমস্যার সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। তবে দীর্ঘস্থায়ী স্থূলতা দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষতি করে এবং কার্যকারিতা হ্রাস করে কিনা সে বিষয়ে স্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।”
এই চিকিৎসক ব্যাখ্যা করেন, “অতিরিক্ত পেটের মেদ হরমোনের ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করে, বিশেষত অ্যান্ড্রোজেন্স উৎপাদন বাড়ায় যেমন- ডিহাইড্রোটেস্টোস্টেরোন(ডিএইচটি)।”
ডিএইচটি’র উচ্চ মাত্রা চুলের ফলিকল সঙ্কুচিত করে চুল পাতলা হওয়া ও চুল পড়ার সমস্যা সৃষ্টি করে।
স্থূলতা বা বাড়তি ওজন নারীদের ইন্সুলিন প্রতিরোধী করে তোলে। ফলে ‘পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম’ নামক খুব পরিচিত প্রজনন সমস্যা কম বয়সি নারীদের মধ্যে দেখা দেয়।
এই সমস্যার কারণেও চুল পড়া দেখা দিতে পারে। কারণ এটা স্বাভাবিকের তুলনায় টেস্টোস্টেরন হরমনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। যা চুলের ওপরে প্রভাব রাখে।
চুল পড়া নিয়ন্ত্রণের উপায়
৫টি সাধারণ বিষয় এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে।
সুষম খাবার খাওয়া: পুষ্টিকর খাবার চুলের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব রাখে। কয়েকটি পুষ্টিকর খাবার যেমন- ফল, সবজি, চর্বিহীন প্রোটিন ও শস্য। ভিটামিন এ, সি এবং ই, এছাড়াও, বায়োটিন, প্রোটিন, জিংক এবং আয়রন সমৃদ্ধ খাবার চুলের বৃদ্ধি ও ফলিকল সুস্থ রাখতে ভূমিকা রাখে।
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করা: দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপ চুল পড়ার অন্যতম কারণ। নিয়মিত যোগ ব্যায়াম, ধ্যান বা বড় শ্বাস গ্রহণ করা মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক।
ওজন হ্রাস: চুল পড়ার সমস্যা কমাতে ওজন কমাতে হবে। নিয়মিত শরীরচর্চা করা শুধু ওজন কমাতে সহায়তা করে না বরং রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে। যা চুলের ফলিকলে পুষ্টি সরবারহ করে।
প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিটের জন্য ব্যায়াম করা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
চুলের যত্নে কিছু বিষয় এড়ানো: অতিরিক্ত তাপীয় যন্ত্র ব্যবহার, শক্ত করে চুল বাঁধা এবং কড়া রাসায়নিক প্রসাধনী ব্যবহার চুল পড়ার অন্যতম কারণ।
মাথা মালিশ করা: চুল পড়া কমানোর অন্যতম সহজ উপায় হল নিয়মিত মাথার ত্বক মালিশ করা। এতে মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে, চুল বড় হয় এবং চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
নিয়মিত মালিশ করার ফলে মানসিক চাপ কমার কারণেও চুল পড়ার ঝুঁকি কমে।
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
এসব প্রচেষ্টার পরেও যদি চুল পড়া না কমে তাহলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বা ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
চুল পড়ার সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা, ওষুধ বা থেরাপি যেমন- প্লাটিলেট-রিচ প্লাজমা (পিঅ্যারপি) ইঞ্জেকশন ইত্যাদি ব্যবহার করা যায় বলে জানান ডা. মনিকা।
তাই এই ধরনের সমস্যা দেখা দিলে নাক-কান-গলার ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেন ডা. গুপ্তা।
ঠিকানা/এসআর