সুইজারল্যান্ডের রাঝধানী জেনেভায় আজ ৭৬তম বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলন (ডব্লিউএইচএ) শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. জাহিদ মালেক সম্মেলনে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার ওপর জোর দেবেন। এই বছরের সম্মেলনের থিম “৭৫ বছরে ডব্লিউএইচএ : জীবন বাঁচানো, সবাইকে স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনার তাগিদ”- যার মূলমন্ত্র ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’।
মন্ত্রী এ বছরের ডব্লিউএইচএ বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে বলেছেন, ‘এই অধিবেশনের তাৎপর্য কিছুটা ভিন্ন। বিগত ৭৫ বছরে জনস্বাস্থ্যের অগ্রগতি পর্যালোচনা করার মাধ্যমে গত সাত দশকে কতোটা অগ্রগতি হয়েছে এবং জীবনযাত্রার মান কতোটা উন্নত হয়েছে, তা পিছনে ফিরে দেখার সুযোগ মিলবে এই সম্মেলনে। মন্ত্রী বাসসকে বলেন, ‘সুতরাং, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার বিষয়গুলোকে এ বছর আরও জোর দেয়া হবে।’
২০২৩ সালে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা জোরদার করার পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে মানুষের জন্য জরুরি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার দিকে জোরালোভাবে মনোনিবেশ করা হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জরুরি অবস্থার সম্মুখীন লাখ লাখ মানুষকে সাহায্য করার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে এবং বিশ্বজুড়ে মানুষের জন্য জরুরি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের কাছে ২.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তার জন্য আবেদন করেছে। এই জরুরি অবস্থার মধ্যে করোনা মহামারী এবং একই সময়ে হাম ও কলেরার মতো প্রাণঘাতী রোগগুলোর প্রাদুর্ভাবকে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য ব্যাপক হুমকি হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। জাতিসংঘের মতে, এ বছর বিশ্বব্যাপী রেকর্ড সংখ্যক ৩৩৯ মিলিয়ন মানুষের জরুরি সহায়তার প্রয়োজন হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বাস্থ্যের অধিকার মানুষের মৌলিক অধিকারের অংশ। তারা বলেন, এ সম্মেলন জনস্বাস্থ্যের ওপর জোর দিয়ে সমগ্র জনগণের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে একটি সমন্বিত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বাস্তবায়নে দেশের জন্য নীতিমালা প্রণয়নে সহায়তা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তাদের মতে, সম্মেলনে বিশ্ব নেতাদের মধ্যে অব্যাহত সংলাপ সবার জন্য স্বাস্থ্য নিশ্চিতে এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা জোরদারে টেকসই পন্থা নিশ্চিতে কাজ করবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘তবে, প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবার লক্ষ্য হল নিরাময় নয়, প্রতিরোধ। তাই স্থ্যকর জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, রোগ প্রতিরোধ গবেষণা ও সংক্রামক রোগ সনাক্তকরণের মাধ্যমে জনসংখ্যার বিরাট অংশের সংক্রামক রোগ নির্মূল ও মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি সম্ভব। তিনি আরও বলেন, ‘প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নবজাতকের রোগের ঘটনা ও প্রকোপ হ্রাস, শিশুমৃত্যুর ঘটনা, একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ প্রতিষ্ঠা, ব্যক্তিগত স্ব-যত্ন ও স্ব-ব্যবস্থাপনার দক্ষতা বৃদ্ধি, ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাস্থ্য পরিষেবাকে অগ্রাধিকার দেয়া, প্রতিরোধযোগ্য স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণসমূহ হ্রাস করাসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট, সূচনা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশে অটিজম বিষয়ক জাতীয় কমিটির উপদেষ্টা সায়মা ওয়াজেদের সম্মেলনে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক একটি অধিবেশনে যোগ দেয়ার কথা রয়েছে।
আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, স্বাস্থ্য বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সাইদুর রহমান, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মো. টিটু মিয়া, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির অন্যদের মধ্যে সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন।
২১ মে (শনিবার) স্থানীয় সময় দুপুর ২টায় সম্মেলন উদ্বোধন করা হয়। ৩০ মে সম্মেলন শেষ হবে।
ঠিকানা/এসআর