দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি আর মাত্র তিন সপ্তাহ। নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শুরু হবে ১৮ ডিসেম্বর থেকে। কিন্তু গড়ে তুলতে জামায়াতকে কাছে পেতে চাইছে বিএনপি। নির্বাচন ঠেকাতে মাঠের আন্দোলনের বিকল্প দেখছে না বিএনপি। ৭ জানুয়ারির নির্বাচন টার্গেট করে দু-তিন ধাপে মাঠে থাকার কৌশল নিয়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা। মাঠের আন্দোলন এবং আন্তর্জাতিক চাপ দুই মিলিয়ে ইতিবাচক কিছু হবে বলেই বিশ্বাস তাদের। রাজপথে শক্ত আন্দোলন গড়ে তুলতে জামায়াতকে আরও কাছে টানার তাগিদ রয়েছে বিএনপিতে। এ জন্য এক ব্যানারে আন্দোলনে নামতে চাইছে বিএনপি-জামায়াতসহ সরকারবিরোধীরা।
গত ২৮ অক্টোবর থেকে টানা দেড় মাসব্যাপী তালা ঝুলছে বিএনপির কার্যালয়ে। চলছে ধারাবাহিক হরতাল-অবরোধ। নির্বাচনের আগে-পরে অন্তত চার মাস এমন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে। গত মাসের শুরুতে হরতাল-অবরোধে সাড়া পেলেও ধীরে ধীরে তা ফ্যাকাশে হয়ে যায়। বর্তমানে বিএনপির সব কর্মসূচিতে ঢাকার রাস্তায় দেখা যায় জ্যাম। ছেড়ে যাচ্ছে দূরপাল্লার গাড়িও। কর্মসূচির প্রভাব নেই বললেই চলে। এমন অবস্থায় বিএনপির তৃণমূল থেকে দাবি উঠেছে, ব্যানারসর্বস্ব দলগুলো বাদ দিয়ে জামায়াতসহ ইসলামি দলগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে মাঠে নামতে। রাজনৈতিক লাভ-ক্ষতির হিসাবের চেয়েও সরকার পতনের আন্দোলনে কার্যত ভূমিকাই এখন বেশি জরুরি। নির্ভরযোগ্য নেতারা জানিয়েছেন, তৃণমূলের এমন দাবিতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মাঠপর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। নেতাকর্মীরা তারেক রহমানকে জানিয়েছেন, ঢাকায় কয়েকটি বাম দলের বিক্ষোভ দেখতে পান তারা কিন্তু তৃণমূলে তাদের কোনো অবস্থান নেই। কর্মসূচি নেই, ভূমিকাও দেখতে পান না। জামায়াতসহ ইসলামপন্থী যে দলগুলোর লোকবল রয়েছে, তাদের নিয়েই নতুন কর্মসূচি প্রণয়নে মতামত দেন তারা।
সূত্র জানায়, বিএনপি এবং গণতন্ত্র মঞ্চ ঘোষিত ৩১ দফার যৌথ ঘোষণার আলোকে জামায়াতকে না রাখার বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছিল। এ কারণে জামায়াতকে এক মঞ্চে এনে আন্দোলন করতে পারছে না বিএনপি। তবে বিএনপির অনেক নেতাই এখন জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে এক ব্যানারে আন্দোলন করার পক্ষে। তাদের মতে, জামায়াতসহ সরকারবিরোধীদের নিয়ে যদি এক মঞ্চে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়, তাহলে সরকারের টনক নড়বে। অন্যথায় কর্মসূচির ফলাফল ঘরে তোলা সম্ভব নয়।
তবে এক ব্যানারে আন্দোলনের প্রশ্নে জামায়াত নেতারা চাইছেন, কিছু বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা হওয়া দরকার। প্রথমত, আন্দোলনের মাঝপথ থেকে যেন তারা সরে না দাঁড়ায়, এই প্রতিশ্রুতি থাকতে হবে। পাশাপাশি আন্দোলনের সিদ্ধান্তে বাম দলগুলো বিএনপির কাছে যেন ততটা গুরুত্ব না পায়, সেটাও নিশ্চিত হতে চায় জামায়াত। এ ছাড়া আন্দোলন সফল হলে আসন এবং মন্ত্রিসভা বণ্টন নিয়ে আগে থেকেই সবকিছু চূড়ান্ত করে রাখতে চায় দলটি। এসব নিয়েই সম্প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের সঙ্গে বৈঠক করেন জামায়াত নেতারা। ওই বৈঠকে জামায়াত নেতারা নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। বিএনপিও বিষয়টি বিবেচনায় রাখছে বলে জানা গেছে।
যুগপৎ আন্দোলনে থাকা একাধিক নেতা বলেছেন, জামায়াতকে এক ব্যানারের কর্মসূচিতে নেওয়া যায় কি না, বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনে যারা রয়েছে, তাদের জানানো হয়েছে। এ নিয়ে দলে-জোটে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। ডান ঘরানার যারা রয়েছেন, জামায়াতকে সঙ্গে নিতে তাদের আপত্তি নেই কিন্তু বামপন্থী যারা রয়েছেন, তারা এ নিয়ে আপত্তি তুলেছেন। জামায়াতকে যদি এক ব্যানারে নেওয়া হয়, তাহলে তারা থাকবেন না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। জামায়াতকে বাদ দিয়ে ইসলামপন্থী দলের বিকল্প হিসেবে চরমোনাই ও খেলাফত মজলিসকে যুক্ত করতেও অনেকে বলেছেন।
রাজনীতিতে চোখ রাখা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চারদলীয় জোটে জামায়াত গুরুত্বপূর্ণ দল হিসেবে বিএনপির নেতৃত্বাধীন সরকারেও ছিল। ২০১৪ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট নির্বাচন বর্জন করলে জামায়াতও সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, বিএনপিকে অগ্রাধিকার দিয়ে সমর্থন দিয়ে তারাও ভোটে যায়নি। ২০১৮ সালে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপিসহ কয়েকটি দল জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছিল। সেখানে ঐক্যফ্রন্টের সব দলকে মিলিয়ে দেওয়া হয় ধানের শীষের ২৪টি আসন। আর জামায়াতকে একাই দেওয়া হয় ২৫টি আসন। এ ছাড়া জামায়াত আরও চারটি আসনে রাজনৈতিক কৌশলে স্বতন্ত্র নির্বাচন করে। শুরু থেকেই জামায়াত বিএনপিকে অনুসরণ করে চলছে। গোপনে হোক-পর্দার আড়ালে হোক, সংকট উত্তরণে জামায়াতকে সঙ্গে নিয়েই বিএনপিকে চলতে হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, ১৯৯৬ সালে জামায়াতকে নিয়ে আন্দোলন করেছে আওয়ামী লীগ, আজ জামায়াতকে নিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন করলে সমস্যা কোথায়? জামায়াতের মতো শক্তিকে বাইরে রাখা যাবে না। যারা আমাদের আন্দোলনে জামায়াতকে চান না, তারা প্রকারান্তরে সরকারের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন।
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, বাংলাদেশে জোটগত ও এক মঞ্চে আন্দোলনের ইতিহাস রয়েছে। জামায়াত অতীতেও এক মঞ্চের আন্দোলনে ছিল। যার সফল ইতিহাস রয়েছে। এখন এক মঞ্চে আন্দোলন হবে কি না, সেটি আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। এ বিষয়ে অবশ্যই বিএনপি জানাবে বলে জানান তিনি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, জামায়াতকে নিয়ে এক মঞ্চে আন্দোলন হবে কি না, এখনো তা চূড়ান্ত হয়নি। কিছু আলোচনা এসেছে। এখন সরকার পতন জরুরি। লাভ-ক্ষতি পরে হিসাব হবে। আমরা চাই সবাই রাজপথে নেমে আসুক।
(প্রথম পাতার পর)
গড়ে তুলতে জামায়াতকে কাছে পেতে চাইছে বিএনপি। নির্বাচন ঠেকাতে মাঠের আন্দোলনের বিকল্প দেখছে না বিএনপি। ৭ জানুয়ারির নির্বাচন টার্গেট করে দু-তিন ধাপে মাঠে থাকার কৌশল নিয়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা। মাঠের আন্দোলন এবং আন্তর্জাতিক চাপ দুই মিলিয়ে ইতিবাচক কিছু হবে বলেই বিশ্বাস তাদের। রাজপথে শক্ত আন্দোলন গড়ে তুলতে জামায়াতকে আরও কাছে টানার তাগিদ রয়েছে বিএনপিতে। এ জন্য এক ব্যানারে আন্দোলনে নামতে চাইছে বিএনপি-জামায়াতসহ সরকারবিরোধীরা।
গত ২৮ অক্টোবর থেকে টানা দেড় মাসব্যাপী তালা ঝুলছে বিএনপির কার্যালয়ে। চলছে ধারাবাহিক হরতাল-অবরোধ। নির্বাচনের আগে-পরে অন্তত চার মাস এমন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে। গত মাসের শুরুতে হরতাল-অবরোধে সাড়া পেলেও ধীরে ধীরে তা ফ্যাকাশে হয়ে যায়। বর্তমানে বিএনপির সব কর্মসূচিতে ঢাকার রাস্তায় দেখা যায় জ্যাম। ছেড়ে যাচ্ছে দূরপাল্লার গাড়িও। কর্মসূচির প্রভাব নেই বললেই চলে। এমন অবস্থায় বিএনপির তৃণমূল থেকে দাবি উঠেছে, ব্যানারসর্বস্ব দলগুলো বাদ দিয়ে জামায়াতসহ ইসলামি দলগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে মাঠে নামতে। রাজনৈতিক লাভ-ক্ষতির হিসাবের চেয়েও সরকার পতনের আন্দোলনে কার্যত ভূমিকাই এখন বেশি জরুরি। নির্ভরযোগ্য নেতারা জানিয়েছেন, তৃণমূলের এমন দাবিতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মাঠপর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। নেতাকর্মীরা তারেক রহমানকে জানিয়েছেন, ঢাকায় কয়েকটি বাম দলের বিক্ষোভ দেখতে পান তারা কিন্তু তৃণমূলে তাদের কোনো অবস্থান নেই। কর্মসূচি নেই, ভূমিকাও দেখতে পান না। জামায়াতসহ ইসলামপন্থী যে দলগুলোর লোকবল রয়েছে, তাদের নিয়েই নতুন কর্মসূচি প্রণয়নে মতামত দেন তারা।
সূত্র জানায়, বিএনপি এবং গণতন্ত্র মঞ্চ ঘোষিত ৩১ দফার যৌথ ঘোষণার আলোকে জামায়াতকে না রাখার বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছিল। এ কারণে জামায়াতকে এক মঞ্চে এনে আন্দোলন করতে পারছে না বিএনপি। তবে বিএনপির অনেক নেতাই এখন জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে এক ব্যানারে আন্দোলন করার পক্ষে। তাদের মতে, জামায়াতসহ সরকারবিরোধীদের নিয়ে যদি এক মঞ্চে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়, তাহলে সরকারের টনক নড়বে। অন্যথায় কর্মসূচির ফলাফল ঘরে তোলা সম্ভব নয়।
তবে এক ব্যানারে আন্দোলনের প্রশ্নে জামায়াত নেতারা চাইছেন, কিছু বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা হওয়া দরকার। প্রথমত, আন্দোলনের মাঝপথ থেকে যেন তারা সরে না দাঁড়ায়, এই প্রতিশ্রুতি থাকতে হবে। পাশাপাশি আন্দোলনের সিদ্ধান্তে বাম দলগুলো বিএনপির কাছে যেন ততটা গুরুত্ব না পায়, সেটাও নিশ্চিত হতে চায় জামায়াত। এ ছাড়া আন্দোলন সফল হলে আসন এবং মন্ত্রিসভা বণ্টন নিয়ে আগে থেকেই সবকিছু চূড়ান্ত করে রাখতে চায় দলটি। এসব নিয়েই সম্প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের সঙ্গে বৈঠক করেন জামায়াত নেতারা। ওই বৈঠকে জামায়াত নেতারা নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। বিএনপিও বিষয়টি বিবেচনায় রাখছে বলে জানা গেছে।
যুগপৎ আন্দোলনে থাকা একাধিক নেতা বলেছেন, জামায়াতকে এক ব্যানারের কর্মসূচিতে নেওয়া যায় কি না, বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনে যারা রয়েছে, তাদের জানানো হয়েছে। এ নিয়ে দলে-জোটে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। ডান ঘরানার যারা রয়েছেন, জামায়াতকে সঙ্গে নিতে তাদের আপত্তি নেই কিন্তু বামপন্থী যারা রয়েছেন, তারা এ নিয়ে আপত্তি তুলেছেন। জামায়াতকে যদি এক ব্যানারে নেওয়া হয়, তাহলে তারা থাকবেন না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। জামায়াতকে বাদ দিয়ে ইসলামপন্থী দলের বিকল্প হিসেবে চরমোনাই ও খেলাফত মজলিসকে যুক্ত করতেও অনেকে বলেছেন।
রাজনীতিতে চোখ রাখা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চারদলীয় জোটে জামায়াত গুরুত্বপূর্ণ দল হিসেবে বিএনপির নেতৃত্বাধীন সরকারেও ছিল। ২০১৪ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট নির্বাচন বর্জন করলে জামায়াতও সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, বিএনপিকে অগ্রাধিকার দিয়ে সমর্থন দিয়ে তারাও ভোটে যায়নি। ২০১৮ সালে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপিসহ কয়েকটি দল জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছিল। সেখানে ঐক্যফ্রন্টের সব দলকে মিলিয়ে দেওয়া হয় ধানের শীষের ২৪টি আসন। আর জামায়াতকে একাই দেওয়া হয় ২৫টি আসন। এ ছাড়া জামায়াত আরও চারটি আসনে রাজনৈতিক কৌশলে স্বতন্ত্র নির্বাচন করে। শুরু থেকেই জামায়াত বিএনপিকে অনুসরণ করে চলছে। গোপনে হোক-পর্দার আড়ালে হোক, সংকট উত্তরণে জামায়াতকে সঙ্গে নিয়েই বিএনপিকে চলতে হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, ১৯৯৬ সালে জামায়াতকে নিয়ে আন্দোলন করেছে আওয়ামী লীগ, আজ জামায়াতকে নিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন করলে সমস্যা কোথায়? জামায়াতের মতো শক্তিকে বাইরে রাখা যাবে না। যারা আমাদের আন্দোলনে জামায়াতকে চান না, তারা প্রকারান্তরে সরকারের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন।
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, বাংলাদেশে জোটগত ও এক মঞ্চে আন্দোলনের ইতিহাস রয়েছে। জামায়াত অতীতেও এক মঞ্চের আন্দোলনে ছিল। যার সফল ইতিহাস রয়েছে। এখন এক মঞ্চে আন্দোলন হবে কি না, সেটি আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। এ বিষয়ে অবশ্যই বিএনপি জানাবে বলে জানান তিনি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, জামায়াতকে নিয়ে এক মঞ্চে আন্দোলন হবে কি না, এখনো তা চূড়ান্ত হয়নি। কিছু আলোচনা এসেছে। এখন সরকার পতন জরুরি। লাভ-ক্ষতি পরে হিসাব হবে। আমরা চাই সবাই রাজপথে নেমে আসুক।