ঈদুল ফিতর-পরবর্তী তিন সপ্তাহ পর বিএনপি আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিসহ ১০ দফা দাবিতে সর্বাত্মক আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা
দিলেও এখন পর্যন্ত এ নিয়ে মুখ খোলেনি। কেবল হুংকারই দিয়ে যাচ্ছে।
দেশের ভোটার সাধারণ ও রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন, কী করতে যাচ্ছে বিএনপি? তারা কি আসন্ন সংসদ নির্বাচন বর্জন করতে যাচ্ছে নাকি শেষাবধি নির্বাচনে অংশ নেবে! নির্বাচনে অংশ না নিলে কী হবে দলটির ভবিষ্যৎ। তাদের পক্ষে নির্বাচন প্রতিহত করা এবং নির্বাচনের পরে সরকারবিরোধী কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা কি সম্ভব। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিদেশি শক্তির ওপর নির্ভরশীল বিএনপি। শেষ দিকে বিশ্ব মুরব্বির সরকারবিরোধী রাজনীতিতে ভাটার টান শুরু হয়েছে। এই সুযোগে সরকার আগেই নির্বাচন করিয়ে নেওয়ার কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষণ মহলের মতে, বিএনপি যেসব কর্মসূচি ঘোষণা করছে, সেগুলো জোরালো হবে না। কর্মসূচি পালনের আড়ালে তারা নির্বাচনে যাওয়ার পথও খুঁজছে। বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারক পর্যায়ের শীর্ষস্থানীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, তারা চান সরকার তাদেরকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য উল্লেখযোগ্য কিছু ছাড় দিক। নির্বাচনে অংশ না নিলেও নির্বাচন প্রতিহত করতে পারবে না বিএনপি। তাদের সে ক্ষমতাও নেই জেনেই সরকারও অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বক্তব্য রাখছে, কার্যক্রম চালাচ্ছে। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে অগ্নিসন্ত্রাস, নিরীহ মানুষ হত্যাকারী, রাষ্ট্র ও জনগণের সম্পদ ধ্বংসকারীদের কোনো রকম ছাড় না দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে। তথ্যমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের ও তাদের নির্দেশদাতাদের বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচারের কথাও বলেছেন। দীর্ঘদিন এসব বিষয়ে কথা না বলে নির্বাচন সামনে রেখে এখন কেন বলা হচ্ছে, সে প্রশ্নও উঠেছে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল আরো মনে করেন, এর উদ্দেশ্য স্পষ্টতই বিএনপির মাঠের নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা ও ভয়-ভীতি ছড়ানো। তাদের ধ্বংসাত্মক কোনো কর্মকাণ্ড থেকে নিবৃত করে নির্বাচনমুখী করা। এ পর্যায়ে বিক্ষোভ সমাবেশ দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের কর্মসূচি নির্বাচন পর্যন্ত টেনে নেওয়া হবে। লাগাতার হরতাল, অবরোধ জাতীয় কর্মসূচি শেষ পর্যায়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির। অতীতের মতো নৈরাজ্যকর, প্রাণহানিকর কর্মকাণ্ড চালানোর চিন্তা তারা করছেন না বলেই জানা যায়। বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের ও নীতিনির্ধারকদের এ রকম চিন্তা-ভাবনা সম্পর্কে সরকারও অবগত। সরকারের দিক থেকে পরিকল্পিতভাবেই বিএনপির নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক-মানসিকভাবে আঘাত করা, তাদের নির্বাচন বিরোধী কর্মসূচি থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। শেষাবধি নির্বাচন বর্জন করলে এবং আওয়ামী লীগ পুনরায় সরকার গঠন করলে বিএনপির জেলা, উপজেলা, শহরাঞ্চলের নেতাকর্মীদের কী দশা হবে, তা ভেবেও বিএনপির নেতারা বিচলিত। অনেকেই মনে করেন, অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে সামনে। দলগতভাবে বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ নাও নেয়, দলটির শতাধিক সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, এমপি, জনপ্রিয় নেতা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে তারা কোন প্রক্রিয়ায় যাবেন, তা চূড়ান্ত করেননি এখনো। বিএনপিরই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতার নেতৃত্বে ও নতুন কোনো জাতীয়তাবাদী নামধারী দল বা জোট নাকি অন্য কোনো দল বা স্বতন্ত্রভাবে তারা নির্বাচন করবেন, তা নিশ্চিত হওয়া হবে আরও কিছুদিন পর।
বিএনপির আন্দোলনের অন্যতম শরিক আ স ম রবের জাসদ এবং মাহমুদুর রহমান মান্না ও আরো কয়েকজনের নেতৃত্বাধীন গণতন্ত্র মঞ্চ, সাতদলীয় জোট ও অন্যদের কী ভূমিকায় দেখা যাবে, তা নিয়েও বিএনপির অনেক নেতাই চিন্তিত। জামায়াতে ইসলাম, হেফাজতে ইসলাম, খেলাফত আন্দোলন, ইসলামিক ঐক্যজোটসহ অধিকাংশ ধর্মীয় সংগঠন মাঠ থেকে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিলে বিএনপির নির্বাচনবিরোধী আন্দোলন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সরকারের উচ্চপর্যায়ের সূত্রে জানা যায়, তারাও বিএনপির অংশগ্রহণহীন নির্বাচন কামনা করে না। নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ চায় সরকার। কিন্তু সেই নির্বাচন হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সরকারপ্রধান হিসেবে রেখেই। তবে অন্তর্বর্তী সরকারে বিএনপির অংশগ্রহণ, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডসহ দৃশ্যমানভাবে সরকার বিএনপিসহ বিরোধীদের উল্লেখযোগ্য ফায়দা আদায় করে নেওয়ার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এসব ব্যাপারে বিদেশি একটি অত্যন্ত প্রভাবশালী মাধ্যমে এবং সরকারের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা ও সমঝোতার ক্ষেত্র প্রস্তুত করার প্রক্রিয়া চলছে।