ডলারের মজুত বাঁচাতে পুলিশ সদস্যদের বিদেশ ভ্রমণে কাটছাঁট এনেছে সরকার। বাংলাদেশ পুলিশের সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ঐচ্ছিক কারণে বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ বিষয়ক নির্দেশনা এসেছে। ইতোমধ্যে অনেকাংশে তা কার্যকরও হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের একটি সূত্র জানিয়েছে— স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সদর দপ্তর যৌথভাবে এই সিদ্ধান্তে এসেছে যে, চিকিৎসা ও ধর্মীয় দরকার ছাড়া ঐচ্ছিক কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্যকে বিদেশ ভ্রমণের অনুমতি প্রদান আপাতত স্থগিত রাখা হবে। চলমান অবস্থার উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত এটি বহাল থাকবে।
পুলিশের কনস্টেবল থেকে সব স্তরের কর্মকর্তাদের ওপর ইতোমধ্যে এই নিয়ম প্রযোজ্য হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব সদস্য ও কর্মকর্তাদের নতুন এই পদক্ষেপ সম্পর্কে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও নিশ্চিত করেছে সদর দপ্তর সূত্র।
ডলারের অপব্যয় রোধে গত বছর সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ কাটছাঁট করার উদ্যোগ নেয় সরকার। ২০২২ সালের ১১ মে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল জানান, বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিদেশে ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হবে না।
সরকারের অন্যান্য দপ্তর ও বিভাগের কর্মকর্তাদের মতো পুলিশেও এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়। এখনো সেই স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়া হয়নি। এর মধ্যেই নতুন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। পুলিশ সদর দপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলমান পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত এটি কার্যকর থাকবে।
পুলিশ সদস্যদের ঐচ্ছিক বিদেশ ভ্রমণের বিষয়ে অনুমতি দেয় পুলিশ সদর দপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে কনস্টেবল থেকে উপ-পরিদর্শক (এসআই) পদমর্যাদের ঐচ্ছিক বিদেশ ভ্রমণের অনুমতি দেয় পুলিশ সদর দপ্তরের পার্সোনাল ম্যানেজমেন্ট শাখা-৩। অন্যদিকে পরিদর্শক থেকে বাকি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ঐচ্ছিক বিদেশ ভ্রমণের বিষয়ে অনুমতি দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
পুলিশ সদর দপ্তরের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, চলমান অবস্থায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর যেন চাপ না পড়ে সেই জন্য গত বছরের শেষ দিকে অর্থ মন্ত্রণালয় বিশেষ কারণ ছাড়া সরকারি সফর বন্ধ করেছে। এই নির্দেশনার পর থেকে এমনিই পুলিশের কোনো সদস্য অতীব জরুরি কোনো কারণ ছাড়া সরকারি খরচে বিদেশ সফর করতে পারছে না। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এমন নির্দেশনার পর থেকে দেশের প্রতি নৈতিক দায়িত্ব থেকে পুলিশ সদর দপ্তর সিদ্ধান্ত নেয় পুলিশ সদস্যরা হজ, ওমরা ও চিকিৎসাসহ জরুরি কারণ ছাড়া নিজে খরচেও বিদেশ ভ্রমণ করতে পারবেন না। তারপরেও যদি কেউ চান সে ক্ষেত্রে ওই কর্মকর্তা বা সদস্যকে বিভিন্নভাবে নিরুৎসাহিত করা হবে। এতে করে চলমান অবস্থায় দেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা বের হয়ে যাওয়া কিছুটা হলেও কমবে।
পুলিশ সদর দপ্তরের পার্সোনাল ম্যানেজমেন্ট শাখা-৩ সূত্রে জানা গেছে, করোনাকালে পুলিশ সদর দপ্তরের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঐচ্ছিক বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। পরবর্তীতে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক অবস্থার জন্য নিরুৎসাহিত করার প্রক্রিয়া আরও জোরদার করা হয়।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের পার্সোনাল ম্যানেজমেন্ট ৩ এর সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) শাহরিয়ার বলেন, ‘ওমরা, হজ ও চিকিৎসা সংক্রান্তসহ জরুরি কোনো কাজ ছাড়া পুলিশে কর্মরত সকল সদস্যদের বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তর থেকে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মূলত কনস্টেবল থেকে এসআই পর্যন্ত পদমর্যাদার পুলিশ সদস্যদের অনুমতিগুলো দেখি। তাদের হজ, ওমরা ও চিকিৎসা জনিত কারণ ছাড়া বিদেশ ভ্রমণের অনুমতি আপাতত দেওয়া হচ্ছে না।’
‘এরপরেও যদি কেউ অনুমতি চান তাহলে সেই আবেদনটি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তখন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সিদ্ধান্ত নেন।’
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসআই পদ মর্যাদার এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘পারিবারিক ও ব্যক্তিগত কারণে গত ডিসেম্বর মাসে পার্শ্ববর্তী একটি দেশে ঐচ্ছিক ভ্রমণের জন্য আবেদন করেছিলাম। কিন্তু হজ, ওমরা ও চিকিৎসা এই তিন কারণের মধ্যে আমার কারণগুলো না থাকায় অনুমতি দেওয়া হয়নি। আমার পরিচিত আরও কয়েকজনকেও ঐচ্ছিক ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হয়নি। যতটুকু জানি ডলার সংকট থাকায় বিদেশি মুদ্রা যেন এই মুহূর্তে দেশ থেকে বের হয়ে না যায় সে কারণে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।’
এ বিষয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা জানান, সম্প্রতি তিনি পরিবারসহ ঐচ্ছিক বিদেশ ভ্রমণের জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে সেই আবেদনের অনুমতি দেয়া হয়নি। এ বিষয়ে কোনো কারণও তাকে জানানো হয়নি। তবে তিনি ধারণা করছেন ডলার সংকট সংক্রান্ত কারণে বিদেশ ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আপাতত এই সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে। বর্তামান প্রেক্ষাপট চিন্তা করেই বিদেশের যে ঐচ্ছিক ভ্রমণগুলো নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। তবে কেউ চাইলে আবেদন করতে পারেন। সেই আবেদনের গ্রাউন্ড সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তারা ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বিবেচনা করবেন। সেই বিবেচনা অনুযায়ী এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। একেক জনের আবেদনের গ্রাউন্ড একেক রকম হয়। ডলার সংকটের অবস্থার উন্নতি হলে এ বিষয়ে পুনরায় বিবেচনা করা হবে।
ঠিকানা/এসআর