দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসন সমঝোতা নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) মধ্যে বৈঠক হয়েছে। ৬ ডিসেম্বর বুধবার রাতে রাজধানীর গুলশানে বৈঠকে বসেন দুই দলের নেতারা। এ সময় জাপার পক্ষ থেকে ৩৫ আসনে নৌকার প্রার্থী প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। তা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিষয়ে ক্ষমতাসীন দলের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার কথাও বলেছেন নেতারা। বৈঠকের বিষয়ে বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) বনানী কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করবেন জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।
বুধবার রাতে গুলশান-১ নম্বরে আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক নেতার বাসায় বৈঠকে বসেন দল দুটির নেতারা। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এবং জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু ছিলেন।
বৈঠকের বিষয়ে আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে আমাদের বৈঠক হয়েছে। এ সময় জাতীয় পার্টির নেতারা সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হবে এবং এই নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র আরও শক্তিশালী হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তারা এই নির্বাচনে সর্বশক্তি দিয়ে অংশগ্রহণ করবেন এবং জনগণের সমর্থন নিয়ে সংসদে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেছেন।’
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে জাপা নেতারা তাদের বর্তমান ২২ জন সংসদ সদস্যের আসনসহ মোট ৩৫ আসনে নৌকার প্রার্থী প্রত্যাহারের দাবি জানান। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী উন্মুক্ত রাখার কৌশলটি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান তারা।
সূত্র আরও জানায়, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নির্বাচনকে অর্থবহ করার জন্য, ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিষয়ে তার মতামত তুলে ধরেন। আসন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলে জাপা নেতাদের জানান।
বৈঠক শেষে জাপা নেতারা দলের কো-চেয়ারম্যান আনিসুল হক মাহমুদের বাসায় যান। যেখানে আগে থেকে পার্টির শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। পরে অপেক্ষমাণ নেতাদের কাছে সমঝোতার বিস্তারিত তুলে ধরেন বৈঠকে অংশ নেওয়া দুই নেতা। তা ছাড়া বিষয়গুলো চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকেও অবহিত করেন তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাপার একাধিক নেতা বলেছেন, ‘২০১৪ ও ২০১৮ স্টাইলে যাতে এবার নির্বাচন না হয়, সে বিষয়ে নেতারা কথা বলেছেন। ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবিই আমাদের মূল দাবি। সুষ্ঠু ভোট হলে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা ভালো করবে।’
এর আগে বুধবার দুপুরে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো জোট নেই দাবি করে বলেন, ‘আমরা লাঙ্গল নিয়ে নৌকার বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছি। এখানে জোটের কোনো বিষয় নেই। তথ্যমন্ত্রী জোটের কথা আবেগে বলে থাকতে পারেন। এর আগে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছিলেন, এবারও জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকতে পারে।’
২০১৪ সালের নির্বাচন বিএনপি-জামায়াত ও তাদের মিত্ররা বর্জন করেছিল। সেই নির্বাচনে জাপাকে ৩৪টি আসন ছাড় দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। এরপর ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ২৬টি আসন ছাড় পায় জাপা। যেখান থেকে ২৩টি আসনে জয়লাভ করে তারা। এবার আওয়ামী লীগ ২৯৮ এবং জাপা ২৮৭টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে।
ঠিকানা/এনআই