প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে সরকারপ্রধান ও ক্ষমতাসীন দলের জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে যাচ্ছে। বিশেষ করে, আসন্ন নির্বাচনে তা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। অন্যদিকে এই সফর সরকারবিরোধীদের অবস্থান অনেক দুর্বল করে তুলেছে। সরকারবিরোধী আন্দোলনে জনগণের সম্পৃক্ততা তারা কতটা পাবে, সে প্রশ্ন ক্রমে তীব্র হয়েছে। আন্তর্জাতিক স্বার্থে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জাপান অভিন্ন অবস্থানে রয়েছে। তাদের সঙ্গে রয়েছে অস্ট্রেলিয়াসহ পশ্চিমা দেশসমূহ, ভারত ও কয়েকটি আঞ্চলিক শক্তি। বিশ্বব্যাপী মার্কিন নেতৃত্ব, কর্তৃত্ব নিরঙ্কুশ করতে নানা কৌশলে ভূমিকা রেখে চলেছে এই দেশসমূহ। অর্থনৈতিক-বাণিজ্যিক স্বার্থে সাগরের নিচে থাকা প্রাকৃতিক সম্পদ ও মানবিক সম্পদ উন্নয়নের কথা বলা হলেও অন্য লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য রয়েছে। মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক বলয়ে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোকে সম্পৃক্ত করাই নেপথ্যের মূল উদ্দেশ্য। সামুদ্রিক সম্পদ অন্বেষণ, উত্তোলন, মানবকল্যাণে ব্যবহারের দৃশ্যমান উদ্দেশ্য সফলভাবে এগিয়ে নেওয়ার পরই সামরিক জোটের বিষয়টি সামনে আনা হবে।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীন অভিন্ন লক্ষ্য ও স্বার্থে পৃথক জোট গঠন করছে। ভারত, বাংলাদেশ, মিয়ানমার, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, আফগানিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে চীন তার নেতৃত্বাধীন জোটে শামিল করতে নানাভাবে চেষ্টা করছে। অনেক ক্ষেত্রে তারা সফলও হয়েছে। তাদের বড় সাফল্য ভারত, বাংলাদেশ, নেপালসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটে যোগ দেওয়া থেকে বিরত রাখা সম্ভব হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর অর্থনৈতিক দিক দিয়ে বাংলাদেশের জন্য নবদিগন্ত উন্মোচন করবে। জাপানের সরকারি-বেসরকারি উদ্যোক্তারা বিপুল সংখ্যায় বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে যাচ্ছেন। জাপানের বেসরকারি খাতের বড় বড় উদ্যোক্তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। তারা বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি খাতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বিনিয়োগ করবেন। এর পরিমাণ লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ১৭টি বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানসহ অর্ধশতাধিক বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আসছে। বেসরকারি উদ্যোক্তাদের এই সামিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মার্কিন প্রশাসনের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। বঙ্গোপসাগরে ও স্থলভাগে তেল-গ্যাস সম্পদ অনুসন্ধান ও উত্তোলনে মার্কিন বেশ কয়েকটি কোম্পানি আগ্রহী। আরও কয়েকটি খাতে তারা বিনিয়োগ করবে। যুক্তরাজ্যের বেসরকারি খাতও এখানে বিপুল বিনিয়োগে আগ্রহী। জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের বেসরকারি খাতের মুখ্য উদ্দেশ্য বাংলাদেশ ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্য। এসব রাজ্যের জনসাধারণের নিত্যব্যবহার্য ও জীবন রক্ষাকারী ওষুধসহ বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন করে ভারতীয় বাজার দখলই তাদের লক্ষ্য। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের অর্ধশতাধিক উদ্যোক্তা বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণে বিনিয়োগ করবে।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, যুক্তরাজ্য বাংলাদেশ-ভারতকে ও অপরাপর দেশগুলোকে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় জোটে দ্রুত শামিল করতে আগ্রহী। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক-মানবসম্পদ ও সমুদ্রসম্পদ অনুসন্ধান, উত্তোলন, উন্নয়নে গভীরভাবে আগ্রহী হয়ে জোটে এ বছরই শরিক হতে যাচ্ছে। তবে সামরিক জোটে যোগদান থেকে এ পর্যায়ে বিরত থাকবে। সেন্ট মার্টিন দ্বীপ মার্কিন সেনাবাহিনীকে দেওয়ার জন্য মার্কিন প্রস্তাব সরকার এখনো পায়নি। তবে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজারে মার্কিন সাবমেরিনের সাময়িক অবস্থান, জ্বালানি নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। সাবমেরিনসহ সব ধরনের যুদ্ধজাহাজের বিরতি জ্বালানি নেওয়ার জন্য ভারতের তিনটি স্থানে মার্কিনিদের অবস্থানের সুযোগ দিয়েছে মোদি সরকার।