দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিশাল বাজেট পাচ্ছে পুলিশ। পুলিশের পেছনে সরকারের বিশাল এই বরাদ্দের কিছু তথ্য প্রকাশও পাচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনের জন্য সরকারের কাছে প্রায় ১ হাজার ২২৬ কোটি টাকা চেয়েছে পুলিশ। ইসির নির্বাচন পরিচালনা এবং বাজেট শাখা অর্থ বরাদ্দ ও মঞ্জুরির এই তথ্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে। এর মধ্যে ১৫৮ কোটি টাকা দিয়ে অস্ত্র (যন্ত্রপাতি ও সফটওয়্যার, অপারেশনাল ও নিরাপত্তাসামগ্রী) কিনবে পুলিশ। ২২৬ কোটি টাকা দিয়ে কিনবে নতুন গাড়ি। পুলিশ সদর দপ্তরের ফিন্যান্স অ্যান্ড বাজেট শাখা থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সামনের নির্বাচন-পূর্ব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশের অস্ত্র ও গোলাবারুদের সংকট রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই অর্থছাড়ের নোট পাঠিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। রাজনৈতিক কর্মসূচি বৃদ্ধির ফলে পুলিশের গতিও বাড়াতে হবে যুক্তি দিয়ে প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, নতুন সৃষ্ট পদে পুলিশের পদায়ন ও পদোন্নতি হওয়ায় গাড়ির প্রয়োজন। জ্বালানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় পেট্রোল, ডিজেল ও লুব্রিকেন্ট কিনতে ২০৪ কোটি টাকার চাহিদার কথাও রয়েছে। কোথা থেকে আপত্তি না এলে পুলিশের এ অর্থ প্রস্তাব মঞ্জুর হয়ে যাবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, একাদশ সংসদ নির্বাচন পরিচালনা ও আইনশৃঙ্খলায় মোট ৭০০ কোটি টাকার খাতওয়ারি বরাদ্দ অনুমোদন করে নির্বাচন কমিশন। এর দুই-তৃতীয়াংশই যায় নিরাপত্তা খাতে। অফিশিয়ালি পুলিশ বাহিনীকে ৬৩ কোটি ২২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা, র্যাবকে ১০ কোটি ২০ লাখ ২৮ হাজার ৮৫০ টাকা, কোস্টগার্ডকে ১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা, বিজিবিকে ৩৩ কোটি ২ লাখ ৪৩ হাজার ৮৮৪ টাকা এবং আনসার ও ভিডিপিকে ১৬৩ কোটি ৮১ লাখ ৭৫ হাজার ৬০০ টাকা দেওয়া হয়। এর আগে ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পেছনে ১৮৩ কোটি ১২ লাখ ৮ হাজার ১২৮ টাকা ব্যয় হয়। সশস্ত্র বাহিনীর জন্য ব্যয়ের হিসাব এর বাইরে। ভোটের দায়িত্বে প্রথমবার গ্রাম পুলিশকে ব্যবহার শুরু হয় ২০১৮ সাল থেকে। এতে সন্তুষ্ট গ্রাম পুলিশ।
এদিকে নির্বাচনে সরকারি টাকা ব্যয় মোটেই নতুন ঘটনা নয়। নতুনত্ব হচ্ছে টাকা খরচের রকমফেরে। এর বাইরে কালো টাকার ছড়াছড়ি ও প্রভাব দিন দিন বাড়ছে। এ নিয়ে কথাও হচ্ছে অনেক। তবে নির্বাচনের সময় দল ও প্রার্থীরা কখনোই এ ধরনের ব্যয়ের কথা স্বীকার করেন না। নির্বাচনী ব্যয়ের ঘরে উল্লেখও করতে হয় না। সামনে ২০১৪ বা ১৮ সালের মতো নির্বাচন হচ্ছে না, তা প্রায় পরিষ্কার। সামনে বাজেট, এরপর নির্বাচন। সাধারণত বাজেট ও জাতীয় নির্বাচন এলে ঘুরেফিরে আলোচনা জমে কালো টাকা নিয়ে। বাজেটের আগে অর্থনীতিবিদেরা কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বন্ধের চাপ দেন। দেন নির্বাচনে কালো টাকার প্রভাব কমানোর তাগিদ। কিন্তু সেই তাগিদ, তাগিদই থেকে যায়। বাস্তবায়ন হয় না।
প্রার্থী মনোনয়ন থেকে শুরু করে নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যাপক প্রভাব ফেলে কালো টাকা। তাই ভোট হলেও সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ থেকেই যায়। এবার দ্বাদশ নির্বাচনের আগে সেই উদ্বেগ আরও বেশি। সাধারণত ক্ষমতাশালীরাই অতিমাত্রায় কালো টাকার মালিক, যার বিরাট অংশ চলে যায় রাজনীতির খাতে। ভোটের ময়দানে। নির্বাচন কমিশন একা চাইলেই তা রুখে দিতে পারবে-এমন নয়। রাজনীতির বাইরের অনেকেও নির্বাচনকে নিচ্ছেন বিনিয়োগ হিসেবে। জেতার পর এর চেয়ে অনেক বেশি উশুল করে নেওয়ার অঙ্কে তারা দক্ষ-অভিজ্ঞ। নির্বাচন কমিশনের বেঁধে দেওয়া টাকার মধ্যে খরচপাতি দেখানোর বুদ্ধিতেও রপ্ত তারা। দলীয় ফান্ড কোত্থেকে আসে সেই জিজ্ঞাসার খাতওয়ারি হিসাব দাঁড় করাতেও জানে বড় বড় দলগুলো। রাজনৈতিক দলের অর্থায়নের ক্লু বের করার কোনো উপায়ও এখন পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি।