“আমরা এই নতুন ক্ষেত্রকে ‘অর্গানয়েড ইনটেলিজেন্স (ওআই)’ নামে ডাকছি।” --বলেন যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক থমাস হারটুং।
মানব মস্তিষ্ককে চলতে সহায়তা করে এমন বিভিন্ন এমন উপকরণ ব্যবহার করে বিশেষ এক কম্পিউটার বানাতে চান বিজ্ঞানীরা।
দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন কম্পিউটার ডেভেলপার মানব মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা অনুকরণ করতে চেয়েছেন, বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে। তবে, সেইসব কৌশল কখনই মানুষের নিজস্ব জৈব মস্তিষ্ক ব্যবহার করে পাওয়া বিভিন্ন ধরনের অর্জনের সঙ্গে তাল মেলাতে পারেনি।
মস্তিষ্কের কোষের ত্রিমাত্রিক সংগ্রহ থেকে তৈরি বায়োকম্পিউটার বিজ্ঞানীদের ওই স্বপ্নের কাছাকাছি যেতে সাহায্য করবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্ট।
গবেষকরা বলছেন, এগুলো জৈবিক হার্ডওয়্যারের মতো কোনো উপাদান হিসাবে কাজ করবে, যা দ্রুতগতিতে নতুন ধরনের কম্পিউটার তৈরির সুযোগ দেবে।
‘পং’ নামের এক ভিডিও গেইম খেলার উদ্দেশ্যে গবেষকরা এরইমধ্যে এমন এক মস্তিষ্কভিত্তিক কম্পিউটারকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। তাদের প্রত্যাশা, তারা একে তুলনামূলক বড় পরিসরে চালু করবেন যাতে এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো নতুন এক ধরনের সক্ষমতা তৈরি করতে পারে।
“আমরা এই নতুন ক্ষেত্রকে ‘অর্গানয়েড ইনটেলিজেন্স (ওআই)’ নামে ডাকছি।” --বলেন যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক টমাস হারটুং।
“এই প্রযুক্তির বিকাশে একত্রিত হয়েছে শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানীদের এক দল। আমরা বিশ্বাস করি এটি দ্রুত, শক্তিশালী ও দক্ষ বায়োকম্পিউটিংয়ের নতুন এক যুগের সূচনা করবে।”
অনেক গবেষকই বিভিন্ন এমন নতুন কার্যক্রমের প্রস্তাবনা দিয়েছেন, যা মস্তিষ্কের অর্গানয়েডের মাধ্যমে কম্পিউটারে ক্ষমতা দেবে। এগুলো ল্যাবে জন্মালেও, এতে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ও নিদর্শনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিক ফুটে ওঠে। এর মধ্যে অনেক কোষই শেখা বা স্মৃতি মনে রাখার মতো কার্যক্রমের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়।
গবেষকদের প্রত্যাশা, এই ধরনের বায়োকম্পিউটারকে এটি সিলিকন ভিত্তিক কম্পিউটারের তুলনায় দ্রুত শেখার সুযোগ করে দেবে। এমনকি তারা প্রত্যাশা করছেন, এতে বিভিন্ন জৈব কম্পিউটারও আগের চেয়ে দক্ষ হয়ে উঠবে ও তুলনামূলক বেশি বিস্তারিত সঞ্চয় করতে সক্ষম হবে।
“মস্তিষ্কের বিভিন্ন তথ্য সংরক্ষণের ক্ষমতা ‘চমকপ্রদ’ আনুমানিক আড়াই হাজার টেরাবাইট।” --বলেন হারটুং।
“আমরা সিলিকন কম্পিউটারের ভৌত সীমায় পৌঁছেছি কারণ, কোনো ছোট চিপে তুলনামূলক বেশি ট্রানজিস্টর আঁটানো সম্ভব নয়। তবে, মস্তিষ্কের গঠন পুরোপুরি আলাদা। এতে এক হাজার ১৫টিরও বেশি সংযোগ পয়েন্টের মাধ্যমে প্রায় ১০ হাজার কোটি নিউরন সংযুক্ত রয়েছে। আমাদের বর্তমান প্রযুক্তির সঙ্গে তুলনা করলে এটি ক্ষমতার বিশাল এক পার্থক্য।”
ইন্ডিপেন্ডেন্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বায়োকম্পিউটারের ব্যবহারিক ব্যবহারের শুরুর আগে বেশ কিছু কাজ করা জরুরী। এগুলো আকারেও অনেক বড় হতে হবে। বিদ্যমান মস্তিষ্কের অর্গানয়েডে ৫০ হাজার কোষ থাকলেও, অর্গানিক ইন্টেলিজেন্স ব্যবহারের জন্য বিজ্ঞানীদের প্রয়োজন এক কোটি কোষ। সেই সঙ্গে এগুলো কী ভাবছে, তা বুঝতে বিভিন্ন তথ্য প্রেরণ ও গ্রহণের মাধ্যমে এগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে।
কম্পিউটিং ব্যবস্থা উন্নত করার পাশাপাশি অর্গানিক কম্পিউটারের সহায়তায় আমরা সেইসব মস্তিষ্ক সম্পর্কেও জানতে পারব, যা তাদের অনুপ্রাণিত করেছে। গবেষকরা তুলনা করতে পারেন, এইসব স্বাস্থ্যকর অর্গানয়েড কীভাবে এমন লোকজনের কাছে শিখতে পারে, যারা স্নায়বিক দুর্বলতায় ভুগছেন। উদাহরণ হিসেবে ধরা যায়, বিভিন্ন পদার্থ কীভাবে মস্তিষ্কের ক্ষতি করতে পারে, সেটির পরীক্ষা করা।
গবেষকরা বলেন, মানুষের মতোই শেখার ও স্মরণ করার এমনকি বোঝার সক্ষমতা থাকা মস্তিষ্ক তৈরি করলে তা বিভিন্ন নৈতিক চ্যালেঞ্জ বয়ে আনতে পারে।
“আমাদের লক্ষ্যমাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো, নৈতিক ও সামাজিকভাবে দায়িত্বশীল উপায়ে ওআই তৈরি করা।” --বলেন হারটুং।
“এই কারণে আমরা 'এম্বেডেড এথিকস' পদ্ধতি প্রতিষ্ঠার পক্ষে প্রথম থেকেই নৈতিকতা সমর্থকদের সঙ্গে অংশ নিয়েছি। গবেষণাটি বিকাশের সঙ্গে সঙ্গেই বিজ্ঞানী, নীতিবিদ ও জনসাধারণের সমন্বয়ে গঠিত দলের মাধ্যমে সকল নীতিগত বিষয়গুলোর ক্রমাগত মূল্যায়ন করা হবে।”
নতুন এই কার্যক্রম বর্ণিত হয়েছে ‘অর্গানয়েড ইন্টেলিজেন্স (ওআই): দ্য নিউ ফ্রন্টিয়ার ইন বায়োকম্পিউটিং অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স ইন-এ-ডিশ’ শিরোনামের গবেষণা পত্রে। আর এটি প্রকাশ পেয়েছে ‘ফ্রন্টিয়ার্স ইন সায়েন্স’ জার্নালে।