অনেক সময় ব্যস্ততার কারণে ঘুম থেকে উঠে হয়ত চা বা কফি পান করা হল না। এরফলে দেখা দিতে পারে মেজাজের পরিবর্তন। খিটখিটে মেজাজ, জেগে থাকা বা ঘুম ঘুমভাব ও কাজে অমনোযোগ ছাড়াও ক্যাফিনের অভাবে দেখা দিতে পারে মাথাব্যথা। বিশেষ করে যাদের নিয়মিত চা-কফি পানের অভ্যাস তাদের এরকম হতেই পারে।
ক্যাফিন যেভাবে প্রভাবিত করে
মিয়ামি ভিত্তিক ফ্যামিলি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ লরা পর্ডি রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “ক্যাফিন মানুষের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে সক্রিয় রাখে। যে কারণে মানুষের মন মেজাজ ভালো থাকে, চিন্তা ভাবনায় স্বচ্ছতা এবং অনেক বেশি উৎপাদনশীল অনুভব করে।”
অন্যভাবে বলা যায়, ক্যাফিন আসলে উপকারী। বিশেষত সচেতনতা বাড়াতে, মন ও জ্ঞানীয় স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক। মৃদু বা মাঝারি পরিমাণ কফি পান যেমন- দৈনিক ৩০ থেকে ৪০০ মি.লি. গ্রাম কফি অথবা দিনে তিন কাপের বেশি কফি নয়।
ক্যাফিনের অভাবে মাথাব্যথা হওয়ার কারণ
অনেকের কফি পান করলে মাথাব্যথা অথবা ঝাঁকুনির মতো সমস্যা দেখা দেয়। তবে ‘ক্যাফিন হেডেক’ বা ক্যাফিনের অভাবে হওয়া মাথাব্যথা বলতে বোঝায়- তীব্র মাথাব্যথা; যা মূলত ক্যাফিন প্রত্যাহারের কারণে হয়ে থাকে।
‘ক্যাফিন প্রত্যাহার’ বলতে বোঝায় একজন ব্যক্তির দৈনিক যে পরিমাণ ক্যাফিন গ্রহণ করেন তার চেয়ে পরিমাণে কম গ্রহণ করার ফলে সৃষ্ট মাথাব্যথা।
সাধারণত কফি বা চা প্রত্যাহারের ফলে তীব্র মাথাব্যথা, ক্লান্তিভাব, দুর্বলতা, মনোযোগে কমতি, শক্তি ও সচেতনতার ঘাটতি দেখা দেয়।
ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক’য়ের নিবন্ধিত পুষ্টিবিদ বেথ চের্ভোনে একটি প্রতিবেদনে ব্যাখ্যা করেন, “কোনো উপাদান বা পদার্থ থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলে আমাদের শরীর সেটা আক্ষরিক ভাবেই প্রকাশ করে। কারণ এটি কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে রাখে। তাই এর ঘাটতিতে ঝিমুনি ভাব, অস্বস্তি ও মাথা ব্যথার মতো সমস্যা দেখা দেয়।”
এই উপসর্গগুলোর তীব্রতা, সূত্রপাত এবং সময়কাল ব্যক্তির ভেদে আলাদা হয়। ক্যাফিনের প্রতি একেকজনের সংবেদনশীলতা ও সহনশীলতার ওপর তা নির্ভর করে। এছাড়াও জীবনযাত্রা ধরন, কতদিন ধরে কফি উদ্দীপক হিসেবে গ্রহণ করছে- এসবও প্রভাব রাখে।
পর্ডি বলেন, “ক্যাফিন প্রত্যাহারের ফলে এই লক্ষণগুলো তাৎক্ষণিকভাবে দেখা যায় অথবা সময়ের সাথে সাথে শরীর থেকে সম্পূর্ণ ক্যাফিন বের হয়ে যাওয়ার পরে তা প্রকাশ পেতে থাকে।”
এই পুষ্টিবিদ যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব হেলথ’স ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই ধরনের মাথাব্যথা ক্যাফিন শেষবার গ্রহণের ১২ থেকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে দেখা দেয়। এই মাত্রা ২০ থেকে ৫১ ঘণ্টার মধ্যে বাড়তে থাকে এবং সেটা নয় দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
তবে ‘ক্যাফিন হেডেক’ সাধারণত কয়েক ঘন্টার বেশি স্থায়ী হয় না।
ক্যাফিনে অভাবে হওয়া মাথাব্যথা থেকে বাঁচার উপায়
কয়েকটি পন্থা অবলম্বন করে এই সমস্যা থেকে মুক্তি মিলতে পারে। অল্প পরিমাণে ক্যাফিন গ্রহণ: প্রধান ও কার্যকর উপায় হল শরীর যা চায় তা সরবরাহ করা, যেমন- ক্যাফিন। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, মাথা ব্যথা কমাতে ক্যাফিন কার্যকর। এটা মস্তিষ্কের রক্তনালীগুলোকে প্রসারিত করতে সহায়তা করে এবং মাথাব্যথা উপশমের উদ্দীপনা দান করেন। যদি ক্যাফিন গ্রহণ কমাতে চান তাহলে একবারে বাদ না দিয়ে অল্প পরিমাণে তা গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে ক্যাফিন সমৃদ্ধ পানীয় যেমন- ব্ল্যাক টি, গ্রিন টি বা সামান্য পরিমাণ ডার্ক চকলেট গ্রহণ করা যায়।
যদি এই উপকরণগুলো যথেষ্ট মনে না হয় এবং ক্যাফিন গ্রহণ না করার ফলে মাথাব্যথা কমাতে সচেষ্ট থাকেন তাহলে আরও ভিন্ন কিছু পদ্ধতি গ্রহণ করা যেতে পারে।
ব্যথানাশক ওষুধ: যে কোনো মাথা ব্যথার জন্যই কার্যকর ওষুধ যেমন- অ্যাসিটামিনোফেন এবং আইবুপ্রোফেন ইত্যাদি ক্যাফিনের অভাবে হওয়া মাথাব্যথা উপশমে সহায়তা করে। যদি ক্যাফিন সম্পূর্ণভাবেই ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা থাকে তাহলে ওষুধের লেবেল ভালো মতো পড়ে দেখতে হবে তাতে কোনো ক্যাফিন-যুক্ত উপাদান রয়েছে কিনা।
ক্যাফিনযুক্ত মাথাব্যথা কমানোর ওষুধ, মাথাব্যথার অবসান ঘটালেও ক্যাফিনের প্রতি নির্ভরযোগ্যতা স্থায়ী করে তুলবে।
পর্যাপ্ত আর্দ্র থাকা: সব রকম স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও সুস্থ থাকার অন্যতম প্রধান ও কার্যকর উপায় হল পানি পান। ক্যাফিনের অভাবে হওয়া মাথাব্যথার ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য।
যদিও সামান্য কিছু বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া যায় যে, পানি পান অথবা আর্দ্র থাকা ক্যাফিন প্রত্যাহারের কারণে দেখা দেওয়া লক্ষণগুলো উপশমে সহায়তা করে।
দেহের পানিশূন্যতার কারণে হওয়া মাথাব্যথা প্রতিরোধ সহায়তা করে। এছাড়াও শরীরকে কাজ করার জন্য পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ করে। ফলে দেহ থেকে ‘ফ্লাশিং’য়ের মাধ্যমে অবশিষ্ট ক্যাফিন উপাদান বের হয়ে যায়।
ঠিকানা/এসআর