Thikana News
৩১ অক্টোবর ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫





 

 ভোটের আগে চলছে  দল কেনার প্রক্রিয়া

 ভোটের আগে চলছে  দল কেনার প্রক্রিয়া





 
নির্বাচনের আগের রাতে টাকার খেলা হয়। শহরের বস্তিতে, গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র ও হতদরিদ্র ভোটারদের প্রভাবিত করা হয়। এবার রেট বেড়ে দাঁড়িয়েছে হাজার টাকার নোটে। এ অবস্থা বরাবর প্রায় প্রচলিত হয়ে এলেও এবার টাকার খেলা শুরু হয়েছে তফসিল ঘোষণার পর থেকেই। তবে ভোট কেনাবেচা শুরু হয়নি, শুরু হয়েছে পার্টি কেনা। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের কদর বেড়েছে, বেড়েছে তাদের রেট।
এ অবস্থাটা অস্বাভাবিক, অভাবনীয় হলেও এবার এটাই বাস্তবতা। সর্বোচ্চভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে যত অধিক সম্ভব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনী মাঠে নামানোর। তদানীন্তন পাকিস্তান আমলে পাকিস্তান মুসলিম লীগ নামে একটি রাজনৈতিক দল ছিল। একসময় তারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়ও অধিষ্ঠিত ছিল। স্বাধীনতার পর তারা রব-ইনুর জাসদে আশ্রয় নেয়। স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলামসহ তাদের সঙ্গীদের প্রধান আশ্রয়স্থল ছিল এই জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল। পরবর্তীতে সময়ের বিবর্তনে তাদের রাজনীতি, আদর্শ, আশ্রয়দাতা ও আশ্রয়স্থলের পরিবর্তন হয়। সর্বশেষ তাদের অবস্থান হয়েছে প্রধানত বিরোধী দল বিএনপি। অবশ্য আগে থেকেই এদের অনেকে ক্ষমতাসীন দলের এমপি, প্রভাবশালী স্থানীয় এবং জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের আশ্রয়পুষ্ট। বর্তমান নির্বাচনী রাজনীতিতে তারা খুবই গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। অনেক নির্বাচনী এলাকায় তারা রীতিমতো রাজনীতি, নির্বাচনের নিয়ামক শক্তি হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। সরকারবিরোধী আন্দোলনে তীব্র জোরালো ভূমিকা রাখা রাজনৈতিক দলগুলোও এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। দলীয় অবস্থান, জাতীয় রাজনীতিতে ভূমিকা, দলের সাংগঠনিক অবস্থায়ও তাদের দু-একটি বাদে কারোরই তেমন গুরুত্ব নেই। তবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনায় তাদের কদর বেড়েছে। ভোট কেনাবেচার চেয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে নিবন্ধিত দলসমূহের সর্বাধিক সংখ্যক নেতা ও তাদের গোটা দলকেই কেনা। অদৃশ্যমান শক্তিসমূহ এ ব্যাপারে বেশ আগে থেকেই সাফল্যজনক তৎপরতা চালিয়ে আসছিল অত্যন্ত বিশ্বস্ততার সঙ্গে। সরকারের সংশ্লিষ্টরা তার প্রমাণও হাতেনাতে পাচ্ছেন।
নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সর্বাধিক সংখ্যককে নির্বাচনী মাঠে নামানোই সরকারের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনো মূল্যে এ কাজটি করার জন্য নানা মাধ্যমে তৎপরতা চালানো হচ্ছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও অগ্রগণ্য মাধ্যম হচ্ছে নগদ অর্থ, যার ওপর বর্তমান বাংলাদেশে অধিকতর কিছু কার্যকর নয় বলেই বিবেচিত। দলীয়, জোটগত মনোনয়ন ও গোপন সমঝোতার নির্বাচন এবং নির্বাচিত সংসদ সদস্য হয়ে আসার বিষয়টি দলীয় ও দলের শীর্ষ ও শীর্ষস্থানীয় নেতাদের অবস্থানের ওপর, সর্বোপরি মূল নেত্রীর ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভর করবে।
তফসিল ঘোষণার এক দিন আগেও এমনকি তফসিল ঘোষণার পরও কোনো কোনো বিরোধী দল সরকারের পদত্যাগ ও তফসিল প্রত্যাখ্যান করে নির্বাচন প্রতিহত করার হুংকার দিয়েছে। চরমোনাই পীরের দল বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের আমির তফসিল প্রত্যাখ্যান করে এক দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ না ছাড়া ঘোষণা দিয়েছেন। তফসিল ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই দলের আমির পীর রেজাউল করিম ঘোষণা করেছেন রাজপথ ছেড়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার। চরমোনাইর পীরের দলের সারা দেশে কর্মী-সমর্থক রয়েছেন। তারা রাজনৈতিক কর্মী নন, পীরের খাদেম হয়েই নিজেদের ধন্য মনে করেন। পীর সাহেবের ইচ্ছার বিপক্ষে কিছু বলা, কিছু করার কথা তারা কল্পনাও করেন না। ৩০০ নির্বাচনী এলাকায়ই প্রার্থী দেওয়ার মতো লোক তাদের রয়েছে। সর্বাধিকসংখ্যক আসনে প্রার্থী দেওয়া ও নেতাকর্মীদের নির্বাচনের পক্ষে মাঠে নামানোর পেছনে মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সরকারের কাছ থেকে অধিক পরিমাণ অর্থ আদায়। কেবল চরমোনাই পীরের দলই নয়, ধর্মীয় সকল সংগঠনই আর্থিক ব্যাপারে অভিন্ন নীতিতে চলে। একইভাবে সংশ্লিষ্টরা বেশ কয়েকটি ধর্মীয় সংগঠনকে নির্বাচনী ময়দানে অবতীর্ণ করে বিএনপিকে কঠিন এক পরিস্থিতিতে ঠেলে দিয়েছে তারা।
এ ছাড়া ফরিদপুরের পীর সাহেবের জাকের পার্টি, বিএনপির দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত সহযোদ্ধা খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন, হেফাজতে ইসলামের বিএনপিঘেঁষা অংশের নির্বাচনী ময়দানে নেমে পড়ার হিসাব-নিকাশ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। মরহুম মুফতি ফজলুল হক আমিনীর পার্টিসহ সরকারঘেঁষা ইসলামি দলগুলোও সক্রিয়। ধর্মীয় দলগুলোর সঙ্গে সরকারি সংশ্লিষ্টদের যোগাযোগ এবং কথাবার্তাও আগে থেকেই পাকা করা ছিল। আংশিক লেনদেনও হয়েছে। বাকিটা পরিশোধের পালা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে মাঠে নামার পর। এসব ব্যাপারে কোনো পক্ষই কথার বরখেলাপ করেনি। বছরের পর বছর বিএনপির সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সরকারের পতন ঘটানোর আন্দোলনে থাকার পর শেষ মুহূর্তে পিছুটান সবচেয়ে বিব্রতকর, লজ্জাজনক এবং রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিকর অবস্থায় ফেলেছে বিএনপিকে।
অন্যদিকে বিভিন্ন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের নেতারাও নির্বাচনী মাঠে নামার ঘোষণা নিয়ে কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছেন। মেজর জেনারেল ইবরাহিমের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট নামে নির্বাচনী ফ্রন্ট গঠন করা হয়েছে। এই ফ্রন্টে আরও দুটি দল শরিক হয়েছে। আরও কয়েকটি দল সহসাই যোগ দেবে। এই দলগুলো ছোট এবং জাতীয় রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব সৃষ্টিকারী না হলেও নির্বাচন সামনে রেখে এদের গুরুত্ব অস্বীকার করা যাবে না। বিশেষ করে, বিএনপির সঙ্গে থেকে এ-যাবৎ সরকার উৎখাতের আন্দোলন করে এখন সেই সরকারের অধীনেই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘটনা তাদের নেতৃত্বদানকারী সংগঠন বিএনপিকেই দুর্বল করছে। কূটনৈতিক মহলের মতে, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সরকার কর্তৃক নির্বিঘ্নে নির্বাচন করিয়ে নিতে তেমন কোনো বাধার সম্মুখীন হতে হবে না।
 

কমেন্ট বক্স