বাংলাদেশে রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের হুমকিকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলছে যুক্তরাষ্ট্র। রাষ্ট্রদূতকে হুমকির বিষয়ে এক প্রশ্নে বৃহস্পতিবার নিয়মিত ব্রিফিংয়ে যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেন, “বিদেশে আমাদের কূটনীতিকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা অবশ্যই আমাদের শীর্ষ অগ্রাধিকার।
“তাদের বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের হুমকি আমরা অনেক গুরুত্বের সঙ্গে নিই। আমাদের কূটনীতিকদের উপর সহিংসতা বা সহিংসতার হুমকি অগ্রহণযোগ্য।”
গত ৬ নভেম্বর বিএনপির হরতাল-অবরোধ বিরোধী এক সভায় পিটার হাসকে নিয়ে ‘আক্রমনাত্মক’ বক্তব্য দেন চট্টগ্রামের বাঁশখালীর চাম্বল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মুজিবুল হক চৌধুরী।
তিনি বলেন, “পিটার হাস বলছেন, এখানে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। পিটার হাস আমরা আপনাকে ভয় পাই না। আমরা মোটা চালের ভাত খাই। আপনি বিএনপির ভগবান। কিন্তু আমরা আওয়ামী লীগ ঈমান বেচি না। আপনাকে এমন মারা মারব, বাঙালি কত দুষ্টু তখন বুঝতে পারবেন।”
এরপর রাষ্ট্রদূত হাসকে ‘হত্যার হুমকি’ দিয়ে বক্তব্য দেন কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ফরিদুল আলম। তার বক্তব্যের একটি ভিডিও বুধবার থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
এসব হুমকির পর নিরাপত্তা উদ্বেগ বুধবার আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে তুলে ধরার কথা জানিয়েছিলেন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।
বৃহস্পতিবার ম্যাথু মিলারের কাছে প্রশ্নে এক সাংবাদিক বলেন, ক্ষমতাসীন দলের সদস্যদের কাছ থেকে অব্যাহতভাবে হত্যার হুমকি পাচ্ছেন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। তৃণমূল থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের নেতারা একই সুরে কথা বলছেন, রাষ্ট্রদূতকে জবাই করতে চান।
“এবং রাষ্ট্রদূত নিজেও বুধবার তার নিরাপত্তা এবং দূতাবাসের কর্মীদের বিষয়ে নিরাপত্তার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সাধারণ সম্পাদক কি এই হুমকিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন বা এই সহিংস বক্তব্যকে?”
পিটার হাসকে হুমকির বিষয়ে উদ্বেগ বাংলাদেশ সরকারের কাছে অব্যাহতভাবে তুলে ধরার কথা জানিয়ে উত্তরে ম্যাথু মিলার বলেন, “রাষ্ট্রদূত হাসকে হুমকি দিয়ে দেওয়া বক্তব্যের বিষয়ে আমাদের উদ্বেগ আমরা বাংলাদেশ সরকারের কাছে বারবার তুলে ধরেছি।”
তিনি আরও বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক মিশন ও কূটনীতিকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়ে কূটনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ক ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী তাদের যে বাধ্যবাধকতা আছে, আমরা সেটা তাদেরকে মনে করিয়ে দেব। আমরা প্রত্যাশা করি, তারা সেই বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী কাজ করবে।”
এর আগে গত বছরের মধ্য ডিসেম্বরে ঢাকার শাহীনবাগে ‘মায়ের ডাক’ নামের একটি সংগঠনের অনুষ্ঠানে গিয়ে ‘মায়ের কান্না’ নামে আরেকটি সংগঠনের তোপের মুখে পড়েন ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।
হট্টগোলের মধ্যে অনুষ্ঠানটি নির্ধারিত সময়ের আগে শেষ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের কাছে নিজের উদ্বেগের কথা জানিয়েছিলেন রাষ্ট্রদূত। এরপর চলতি বছরের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূতদেরকে চলতি পথে দেওয়া অতিরিক্ত পুলিশি নিরাপত্তা সরিয়ে নেয় সরকার।
পুলিশ সদস্যদের অন্যত্র কাজে লাগাতে এবং অন্যান্য দূতাবাসের পক্ষ থেকে একই রকমের সুবিধার চাহিদা বাড়তে থাকায়, এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে যুক্তি হিসেবে দেখিয়েছিল সরকার।
ঠিকানা/এসআর