বিএনপির বর্তমান নেতাদের নির্বাচনে আনার জোর চেষ্টা চলছে। নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আসার লোভ দেখিয়ে প্রলুব্ধ করার পাশাপাশি রাজনৈতিক জীবনের অবসান ঘটানোর ঝুঁকিও রয়েছে তাদের সামনে। সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় একাধিক নেতা অবশ্য তাদের পক্ষ থেকে এ ধরনের উদ্যোগ ও চেষ্টা করার কথা অস্বীকার করেছেন। বলেছেন, বর্তমানে গ্রেফতারকৃত ও বাইরে থাকা নেতারা নিজেদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ চিন্তায় নিজেদের স্বার্থেই সরকারের সঙ্গে বোঝাপড়া করছেন। সরকারি কোনো মহল তাদের সঙ্গে নানাভাবে যোগাযোগ করতে পারে। কিন্তু সরকারি দল ও সরকারের পক্ষ থেকে দৃশ্যত বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে না।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন, সরকারের সংশ্লিষ্টরা ও সরকারি দলের দায়িত্বশীল নেতারা বিষয়টি কৌশলগত কারণে এ পর্যায়ে এড়িয়ে চললেও বাস্তবতা হচ্ছে বৃহত্তর দলীয় স্বার্থেই তারা তাদের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে আঘাত করতে নানাভাবে তৎপরতা চালাচ্ছে। বিএনপিকে ক্ষতিগ্রস্ত করাই নয়, রাজনৈতিকভাবে নিঃশেষ করতে নানা তৎপরতা চলমান রয়েছে। এই প্রক্রিয়ার অন্যতম অংশ হিসেবে নেতাদের সঙ্গে গ্রেফতার করার আগে থেকেই ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করা হয়। তাদের কারও কারও সঙ্গে সরকারের নেপথ্য যোগাযোগের বিষয়টি দলীয়ভাবে রীতিমতো প্রতিষ্ঠিত। সেই সব নেতা ২৮ অক্টোবরের পর আরও কতিপয় নেতার সঙ্গে তাদেরও গ্রেফতার করে আত্মরক্ষার পথ করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করেন বলেও গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়।
মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে বিএনপির কোনো কোনো প্রভাবশালী মহল থেকেই প্রচার-প্রচারণা চালানো হয় বছর দুই আগে থেকেই। লন্ডনে অবস্থানরত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আস্থাভাজন নন ফখরুল। তারেক চান স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে মহাসচিবের পদে বসাতে। সরকারবিরোধী চূড়ান্ত আন্দোলনের এ পর্যায়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্বে পরিবর্তন আনা রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিকর হবে বিবেচনায় বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখা হয়। সরকারের সংশ্লিষ্টরা এ অবস্থার সুযোগ নিতে সচেষ্ট রয়েছেন। তারা মির্জা ফখরুলসহ গ্রেফতারকৃত শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে জেলখানার মধ্যেই যোগাযোগ রেখে চলেছেন।
মির্জা আব্বাসের সঙ্গে সরকারের সংশ্লিষ্টদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বরাবরই ছিল। গত ২৮ অক্টোবর ভয়ংকর সব ঘটনার পর জেলখানায় যাওয়ার ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যথাযথ প্রক্রিয়ায় যোগাযোগ করেন তিনি। সরকারের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে মোসাদ্দেক আলী ফালু গ্রেফতার এড়িয়ে দেশের বাইরে রয়েছেন। তার যাবতীয় অর্থ, বিষয়-সম্পদ, ব্যবসা-বাণিজ্য যথারীতি চালিয়ে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারা ফালুর বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে জড়িত আছেন। তারেক রহমানের সর্বাধিক বিশ্বস্ত নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর অবস্থান সম্পর্কে সরকারের সংশ্লিষ্টরা অবহিত আছেন। কিন্তু তাকে প্রথম দিকে গ্রেফতার না করে কিছুটা দেরিতে গ্রেফতার করা হয়। চট্টগ্রামে তার প্রতিদ্বন্দ্বী আবদুল্লাহ আল নোমান, সাবেক মন্ত্রী মেজর হাফিজসহ বেশ কয়েকজন নেতা নির্বিঘ্নেই নিজেদের বাসায় অবস্থান করছেন। সরকারবিরোধী আন্দোলনের তুখোড় কিছু নেতা আত্মগোপনে আছেন। তাদের সহকর্মী, সহযোদ্ধা নেতাকর্মীরা সতর্কে পদচারণা করছেন। তাদের গ্রেফতারেও জোর তৎপরতা চলছে।