ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা দুটো দলেরই এরই মধ্যে ২০২৩ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয়ে গেছে। নেট রানরেটে দক্ষিণ আফ্রিকা এগিয়ে থাকলেও ম্যাচ বেশি জেতায় পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে রয়েছে ভারত। কলকাতার ইডেন গার্ডেনসে আজ দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে রয়েছে শীর্ষে ওঠার সুযোগ। প্রোটিয়াদের ৩২৭ রানের লক্ষ্য দিয়েছে ভারত।
৫ নভেম্বর রোববার কলকাতায় টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা। স্বাগতিকদের ইনিংসে রান তোলার গতি ছিল রোলার কোস্টারের মতো। কখনো টি-টোয়েন্টি মেজাজে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং, কখনো ধীরেসুস্থে ইনিংস গড়ছিল ভারত। বিশেষ করে, অধিনায়ক রোহিতের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে প্রথম পাঁচ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৬১ রান করেছিল ভারতীয়রা। তবে স্বাগতিক অধিনায়কের ঝড় বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ষষ্ঠ ওভারের পঞ্চম বলে কাগিসো রাবাদাকে অফ সাইডে তুলে মারতে যান রোহিত। মিড অফে দুর্দান্ত ক্যাচ ধরেছেন দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা। ২৪ বলে ৬ চার ও ২ ছক্কায় ৪০ রান করেছেন রোহিত। শুভমান গিলের সঙ্গে ৩৫ বলে ৬২ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়তে অবদান রেখেছেন ভারতীয় অধিনায়ক।
রোহিতের বিদায়ের পর উইকেটে আসেন বিরাট কোহলি। গিলকে নিয়ে সাবলীলভাবে খেলতে থাকেন কোহলি। প্রথম ১০ ওভারে ১ উইকেটে ৯১ রান করেছে ভারত। তবে প্রথম পাওয়ার প্লের পরই গিল-কোহলির দ্বিতীয় উইকেটের জুটি ভেঙে যায়। ১১তম ওভারের তৃতীয় বলে কেশব মহারাজের অসাধারণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড হয়েছেন ২৪ বলে ২৩ রান করা গিল। ভারতের স্কোর হয়ে যায় ১০.৩ ওভারে ২ উইকেটে ৯৩ রান।
রোহিত-গিল দুই ওপেনারের বিদায়ের পর উইকেটে আসেন শ্রেয়াস আইয়ার। তৃতীয় উইকেটজুটিতে আইয়ার-কোহলি ধীরেসুস্থে ব্যাটিং করতে থাকেন। যেখানে ১২২ রানেই ভারতের তৃতীয় উইকেট পড়তে পারত। ২০তম ওভারের প্রথম বলে তাবরেজ শামসিকে ফ্লিক করতে যান কোহলি। তুলনামূলক কঠিন ক্যাচ মিস করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটরক্ষক কুইন্টন ডি কক। জীবন পাওয়া কোহলি এরপর ফিফটি পেয়েছেন ২৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে। লং অফে সিঙ্গেল নিয়ে নিজের ৩৫তম জন্মদিনে পেয়েছেন ৭১তম ওয়ানডে ফিফটি।
কোহলির মতো ফিফটি তুলে নিয়েছেন আইয়ার। ফিফটির পর আইয়ার বেশি আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করতে থাকেন। মনে হচ্ছিল বিশ্বকাপ ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি পাওয়ার আক্ষেপ আজ ঘোচাবেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত তিন অঙ্ক ছোঁয়া হয়নি আইয়ারের। ৩৭তম ওভারের পঞ্চম বলে লুঙ্গি এনগিডিকে তুলে মারতে যান আইয়ার। টপ এজ হওয়া বল মিড অনে তালুবন্দী করেন এইডেন মার্করাম। তাতে ভেঙে যায় আইয়ার ও কোহলির তৃতীয় উইকেটে ১৫৮ বলে ১৩৪ রানের জুটি। ৮৭ বলে ৭ চার ও ২ ছক্কায় ৭৭ রান করেন আইয়ার।
আইয়ারের বিদায়ের পর লোকেশ রাহুল উইকেটে এসেও আশানুরূপ ইনিংস খেলতে পারেননি। ১৭ বলে ৮ রান করেছেন রাহুল। যেখানে ৪৩তম ওভারের প্রথম বলে মার্কো জেনসেনকে তুলে মারতে যান রাহুল। ডিপ স্কয়ার লেগ থেকে দৌড়ে এসে দুর্দান্ত ক্যাচ ধরেন রাসি ফন ডার ডুসান। আইয়ার, রাহুলের দ্রুত বিদায়ের পর সূর্যকুমার যাদব উইকেটে এসে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করতে থাকেন। তবে ১৪ বলে ৫ চারে ২২ রান করে আউট হয়েছেন সূর্যকুমার। যেখানে ৪৬তম ওভারের শেষ বলে শামসিকে রিভার্স সুইপ করতে যান সূর্য। এজ হওয়া বল ডাইভ দিয়ে দুর্দান্তভাবে ক্যাচ ধরেন ডি কক। তাতে ভারতের স্কোর হয়ে যায় ৪৬ ওভারে ৫ উইকেটে ২৮৫।
সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মধ্যে কোহলি খেলছিলেন ধীরেসুস্থে। নিজের ৩৫তম জন্মদিনকে এরপর স্মরণীয় করে রেখেছেন দারুণভাবে। ৪৯তম ওভারের তৃতীয় বলে রাবাদাকে কাভারে ঠেলে সিঙ্গেল নিয়ে কোহলি গড়েছেন রেকর্ড। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৪৯তম সেঞ্চুরি করে কোহলি ভাগ বসিয়েছেন শচীন টেন্ডুলকারের রেকর্ডে। শচীনের রেকর্ডে ভাগ বসাতে কোহলির লেগেছে ১১৯ বল। কোহলির সেঞ্চুরির অনুপ্রেরণা থেকেই যেন শেষ ওভারে জ্বলে ওঠেন রবীন্দ্র জাদেজা। শেষ ওভার বোলিং করতে আসা মার্কো জেনসেনকে একটি ছক্কা ও দুই চার মেরেছেন জাদেজা। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৫ উইকেটে ৩২৬ রান করেছে ভারত। ইনিংস সর্বোচ্চ ১০১ রান এসেছে কোহলির ব্যাট থেকে। ১২১ বলের ইনিংসে ১০টা চার মেরেছেন, কোনো ছক্কা মারেননি।
দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের মধ্যে ১টি করে উইকেট নেন লুঙ্গি এনগিডি, জেনসেন, রাবাদা, মহারাজ ও শামসি। তার মধ্যে সবচেয়ে কম ৩০ রান দিয়েছেন মহারাজ। ম্যাচে সর্বোচ্চ ৯৪ রান খরচ করেছেন জেনসেন।
ঠিকানা/এনআই



ঠিকানা অনলাইন


