উল্টা-পাল্টা ম্যাজিক আবারও। ম্যাজেশিয়ান অনেক। তলে তলে তাদের চরিত্রে বেদম মিল। কথা ছিল খেলা হওয়ার। ‘খেলা হবে-খেলা হবে’র জবাবে ‘খেলবেন, আসেন খেলি’-র মাঝে খেলা কিছুটা হয়েও গেছে। ওই খেলায় পুলিশ কনস্টেবল, দল-লীগ, সাংবাদিক, বাসের হেলপারেরর লাশ পড়েছে। তারা মানুষ নয়, লাশ। আর লাশের নাম পুলিশ, লীগ, দল, হেলপার। মৃত্যুর জন্য দায়ীও মৃতরাই। নইলে তারা লাশ হলো কেন? খেলোয়াড়- ম্যাজিশিয়ানদের লাশ তো পড়েনি! তারা অজেয়? পরাজয় নেই তাদের ডিকশনারিতে?
শ্রেণি চরিত্রে ব্যাপক মিলের মাঝেও মৌসুম দৃষ্টে সরকার-আওয়ামী লীগ-বিএনপি-পুলিশে এখন পাল্টাপাল্টি। লাশের দায় চাপানোর নানা ক্যারিশমায় তারা কম-বেশি অভিজ্ঞ। বিএনপির সময়টা এখন খারাপ। কৌশলেও কাঁচা। তাই তারা আবার ব্যাকফুটে। তাদের কপালে আবারও আগুন-সন্ত্রাসীর তিলক মোটামোটি লেপ্টে দিতে পেরেছে সরকার। এর আগে, সারাদেশে কোমল-কুসুম, অহিংস আন্দোলনের দৃষ্টান্ত গড়েছে বিএনপি। কিন্তু, শেষতক কুলাতে পারেনি। রাজধানীতে সমাবেশ ডেকে পেরে ওঠেনি। বোধ-বদ্ধি- কৌশলে আচ্ছা মার খেয়েছে। নাকি এর মাঝেও কোনো সমীকরণ আছে বা নেপথ্য থেকে কেউ ভিন্ন রসায়ন ঢেলেছে?
এ নিয়ে চলছে নানা বিশ্লেষণ। পুলিশের লাশ ফেলা, বিএনপি অফিসে আবার তালা লাগানো, দলটির নেতাদের ধরপাকড়, পুরনো মামলা তাজা করার মাঝে রহস্য কম নয়। আয়োজনও ব্যাপক। এতে আসলে জিতলো কে? খেলোয়াড়, রেফারি, না আম্পায়ার? জনগণ দর্শকের গ্যালারিতেও নেই। তারা প্রাণে বাঁচতে পারলেই আপাতত সন্তুষ্ট। নির্বাচনের কাউন্ট ডাউনের দিকেও গরজ নেই তাদের। ব্যাপক আগ্রহ ও দায়িত্ব আছে জ্ঞানী-গুণিজনদের। তাদের একজন ড. আবুল বারাকাত সংবাদ সম্মেলন করে ধারণাপত্র দিয়েছেন। বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ১৪৮-১৬৬ সিট পাবে, আর বিএনপি ১১৯ থেকে ১৩৭টি। অন্যান্য দল ১৫টি আসন। গবেষণা করে দেখিয়েছেন সেই ১৫টির মধ্যে জাতীয় পার্টি পাবে ১১টি, জামায়াতে ইসলামী দুইটি, এলডিপি একটি এবং বিজেপি একটি আসন পেতে পারে। তার গবেষণা কি ফেলনা বা যা-তা ব্যাপার?
এ ধরনের জরিপ-গবেষণায় ড. আবুল বারাকাত বড় অভিজ্ঞ। জামায়াত-শিবিরের রাজনীতিতে অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততাসহ বেশ কিছু বিষয়ে এর আগে তিনি বিভিন্ন সময়ে গবেষণার জন্য বিশেষভাবে বিখ্যাত। বিভিন্ন বিষয়ে ও খাতে পাই-পয়সাসহ হিসাব দেখাতে পারঙ্গম তিনি। এসব যোগ্যতার প্রতিদানও পেয়েছেন। তাকে করা হয়েছিল জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান। এর পরেরটা ইতিহাস। পাই-পয়সায় নয়, দুর্নীতি হয়েছে রাউন্ড ফিগারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউরের মতো জনতার ড. বারাকাতেরও চাকরি যায়। তখনকার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, আবুল বারাকাত জনতা ব্যাংকটার সর্বনাশ করে গেছে। এরপর অনেক দিন চুপ থেকেছেন। এখন আবার জরিপ নিয়ে বান্দা হাজির। ইনামও নিশ্চয় মিলবে। সামনে কী বানানো হতে পারে তাকে? চেয়ারম্যান, না গভর্নর?
কিছু একটা তো হবেই। দেশে বর্তমানে চলমান রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় ভোগান্তি পুরোটাই সাধারণ মানুষের বরাতে। বাণিজ্যমন্ত্রী বলে দিয়েছেন, দেশের চার কোটির বেশী মানুষ ইউরোপের স্টান্ডার্ডে বাস করে। তারা কারা? কোন ঘরানার? সেই সামর্থবানদের কায়-কারবার ডলারে। বিপর্যস্ত শেয়ার বাজারে মানুষের লাখ-কোটি টাকা আটকে থাকলে ওই কারবারিদের কিছু যায় আসে না। সেই ক্ষেত্রে জিনিসপত্রের দাম তাদের লাগামের বাইরে নয়। চালের কেজি পাঁচ’শ হলেও এই ম্যাজেশিয়ানদের কোনো সমস্যা?
চুরি-চামারিতে দই খেয়ে অন্যের মুখে এঁটো লাগিয়ে দেয়ার হিম্মত আছে তাদের। জরিপবাজ ম্যাজিশিয়ানদের পোষা মন্ত্রগুলো ওদের তুলে নিয়ে গেছে কালো তান্ত্রিকের রাজ্যে। রোদে পোড়া ঘাস রঙা দানবের বেশে, নীল প্রেত আর সাদা ভূত সেজে। ম্যাজিকে উল্লসিত ভক্তদের মুহুর্মুহু তালিয়ার আওয়াজ বিদীর্ণ করে পিতার শঙ্কিত প্রশ্নÑ ‘সন্তান কই?’ স্ত্রীর ভয়ার্ত স্বরÑ ‘স্বামী কই!’ নিরুপায় পুত্রের আর্তি- ‘বাবা কই!’ কন্যার মনে অবিরাম কু-ডাকেÑ ‘বাবা, তুমি কানতেয়াছো যে?’
কলিজা ফাটা এসব প্রশ্নে তাদের কী যায়-আসে?
লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট; ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন, ঢাকা।