সংসদে দম্পতির সম্প্রীতি, সম্পত্তিও কি কম?
মোস্তফা কামাল : সংসদে দম্পতির সম্প্রীতি, সম্পত্তিও কি কম? মোস্তফা কামাল : বেশ সম্প্রীতি তাদের। কারো কারো সম্প্রীতি ঈর্ষণীয়, অনুকরণীয়। বেশ কয়েকজন নিজেরা সংসদে আসেননি, বা আসতে পারেননি। নিজে না এসে স্ত্রীকে পাঠিয়েছেন সংসদে। আবার কয়েকজন নিজে এসেছেন, স্ত্রীকেও নিয়ে এসেছেন! চমৎকার না রসায়নটা? ক্ষমতাসীন সরকারের সহযোগী, জাসদ একাংশের সভাপতি হাসানুল হক ইনুকে এবারের কেবিনেটে রাখা হয়নি। এতে তাকে হয়ে যেতে হয়েছে সাবেক তথ্যমন্ত্রী। মন্ত্রীত্ব সাবেক হলেও এমপি তিনি। এখন সংসদে আনা হচ্ছে তার স্ত্রী আফরোজা হক রীনাকে। এর মধ্য দিয়ে চলতি জাতীয় সংসদে দম্পতির সংখ্যা হবে তিন। এতে কি কোনো বাধা আছে? -না, নেই। না থাকাতেই সরকারের আরেক মিত্র ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন্নেসা খান বিউটিও মাননীয় এমপি। মেননকেও এবারের কেবিনেটে রাখা হয়নি। সরকারের আরেক সহযাত্রী ও আগে মন্ত্রীত্ব দেয়া জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের স্ত্রী শরিফা কাদেরও সংসদের একজন মাননীয়। এর বাইরে একাদশ সংসদের শুরুর দিকে আরেক দম্পতি ছিলেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য কাজী শহিদুল ইসলাম পাপুলের স্ত্রী সেলিনা। কুয়েতে দণ্ডিত হওয়ায় ২০২১ সালে সংসদ সদস্য পদ খোয়া যায় পাপুলের। সেলিনাতো আছেন! কক্সবাজারের বিশেষ আলোচিত বদি এবার সংসদে না থাকলেও তার স্ত্রী শাহীন আক্তার আছেন। বদি-পাপুলের স্ত্রী এমপি হতে পারলে মেনন, জিএম কাদের বা ইনুর মতো তারকা নেতাদের স্ত্রীরা কেন পারবেন না? পারবেন বলেই, কুষ্টিয়ার শূন্য হওয়া সংরক্ষিত আসনটিতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ইনুর স্ত্রী রীনাকে সমর্থন দেওয়া হবে- এমন সমঝোতা হয়েছে। আর ইনুর স্ত্রীই কেবল রীনার পরিচয়? তিনি জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি। তার ওপর জাসদের সহযোগী সংগঠন জাতীয় নারী জোটের আহ্বায়ক। আর কী লাগে? উচিৎ জবাব দিয়েছেন রীনা। তার কৃতজ্ঞতা প্রধানমন্ত্রীর কাছে। বলেছেন, তিনি জাসদ সভাপতির স্ত্রী, এটা তার মাত্র একটা পরিচয়। এর চেয়েও বড় পরিচয়, তিনি দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করছেন। মনোনয়ন পাওয়ায় জাসদের প্রতি এবং ১৪ দলের নেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি তিনি কৃতজ্ঞ। জাসদের নেতাকর্মীরাও এতে ধন্য-মুগ্ধ। কৃতজ্ঞও। গর্বও কি কম তাদের? গর্বের সঙ্গে যুক্তিও অনেক তাদের। কারণ, রাশেদ খান মেননের স্ত্রী বিউটির চেয়ে ইনুর স্ত্রী রীনার রাজনৈতিক বিউটি বেশি। লুৎফুন্নেসা খান বিউটি শিক্ষাজীবনে ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে থাকলেও পরে সরকারি চাকরিতে চলে গেছেন। অবসরের পরও ওয়ার্কার্স পার্টির কর্মকাণ্ডে আসেননি। যে কারণে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর লুৎফুন্নেসা খানকে সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন দেওয়া নিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির অভ্যন্তরে বিরোধ দেখা যায়। এর জেরে কয়েকজন নারী নেতা দল থেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে যান। জাসদে কিন্তু এমন কিছু ঘটেনি। জাতীয় পার্টিতে জিএম কাদেরের স্ত্রী শরিফা কাদেরকে মাননীয় করা নিয়েও কি কিছু ঘটেছে? এর আগে, দশম জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টি থেকে দুই দম্পতি সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ, তাঁর স্ত্রী রওশন এরশাদ এবং জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার এবং তাঁর স্ত্রী নাসরিন রত্না সংসদ সদস্য ছিলেন। তবে, সংরক্ষিত ছিলেন না তারা। নির্বাচিত আর সংরক্ষিত যা-ই হোক, দম্পতিদের এভাবে সংসদীয় সম্প্রীতিতে সম্পত্তির বার্তাও কি কম? এতো খবরের মাঝে সম্পত্তির খোঁজ রাখার সময়ই বা কই? লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট; বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন, ঢাকা।
কমেন্ট বক্স