Thikana News
১৯ অক্টোবর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪


 

বিমানবন্দরে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীকে নিষ্ঠুর হয়রানি

ইভটিজিং মামলায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক ৩০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড * এমিরেটসের ফ্লাইট ধরতে না পারায় ৫০ হাজার টাকা গচ্চা * মোবাইল কেড়ে নেওয়ায় দূতাবাসে ফোন করার সুযোগ ছিল না
বিমানবন্দরে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীকে নিষ্ঠুর হয়রানি


‘দেশের পরিস্থিতি ভালো নয়’ - এই মন্তব্য করায় মো. আরকান আলী (৫৬) নামে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এক বাংলাদেশিকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ‘নিষ্ঠুর’ হয়রানি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অধিকতর তদন্ত না করে বিমানবন্দরে আটকে রেখে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে তাকে ৩০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনা ঘটেছে গত ১০ অক্টোবর মঙ্গলবার। 
বিমানবন্দরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয়ে দীর্ঘসময় আটকে রাখার কারণে ফ্লাইট ধরতে না পারায় এমিরেটস এয়ারলাইন্সকে আরকান আলীর গুনতে হয়েছে অতিরিক্ত ৫০ হাজার টাকা। কোনো প্রকার আইনি সহায়তা, এমনকী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হিসাবে ঢাকায় আমেরিকান দূতাবাসে যোগাযোগের সুযোগ না দিয়ে তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়। দণ্ডিত অর্থ পরিশোধ করে প্রাণভয়ে নিউইয়র্কে একপ্রকার পালিয়ে ফিরেছেন ওই প্রবাসী। 

আরকান আলীর গ্রামের বাড়ি সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে আসেন ১৯৯৭ সালে। তিনি নিউইয়র্কে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। পাশাপাশি ব্যবসাও করেন। স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে থাকেন নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে। প্রতিবছর মাতৃভূমি বাংলাদেশে বেড়াতে যান। এবারো দুই মাস আগে বাংলাদেশে বেড়াতে গিয়েছিলেন। গত ১০ অক্টোবর মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার উদ্দেশ্যে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যান। তিনি এমিরেটস এয়ারলাইন্সের যাত্রী ছিলেন। এমিরেটসের কাউন্টারে চেক ইন করার সময় এমিরেটসের গ্রাউন্ড সুপারভাইজার শারমিন আক্তার তাকে ব্যক্তিগত কিছু প্রশ্ন করেন। তার কাছে জানতে চান এত তাড়াতাড়ি কেন চলে যাচ্ছেন? জবাবে আরকান আলী জানান যে দেশের পরিস্থিতি ভালো না। এই উত্তরে ক্ষুব্ধ হন ওই নারী কর্মকর্তা। আরকান আলী হ্যান্ড লাগেজ চেক ইন-এ দেওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করলে এমিরেটসের নারী কর্মকর্তা অপারগতা জানান। এসময় আরকান আলী এর কারণ জানতে চান। এতে ওই নারী কর্মকর্তা ক্ষেপে যান। এসময় তিনি ওই নারী কর্মকর্তার নাম জানতে চান। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তাকে বোর্ডিং পাস না দিয়ে সময়ক্ষেপণ করা হয় বলে আরকান আলী অভিযোগ করেন।  
আরকান আলী আরো অভিযোগ করেন- ওই নারী কর্মকর্তা তার সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করেন। এমনকী তাকে মধ্য আঙুল প্রদর্শন করেন। বিষয়টি অপমানজনক মনে করে নারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন আরকান আলী। আর এতেই বাধে যত বিপত্তি। আরকান আলী জানান, এমিরেটসের নারী কর্মকর্তার হয়রানির প্রতিবাদে তিনি এয়ারপোর্টের ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এয়ারপোর্ট ম্যাজিস্ট্রেট তার অভিযোগ গ্রহণও করেন। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যে পাল্টে যায় দৃশ্যপট। এয়ারপোর্টের কতিপয় কর্মকর্তা ও কর্মচারি সংঘবদ্ধ হয়ে ম্যাজিস্ট্রের সঙ্গে দেখা করেন। এরপর ওই ম্যাজিস্ট্রেট আরকান আলীর লিখিত অভিযোগের কোনো সুরাহা না করে বরং ওই নারী কর্মকর্তাকে দিয়ে ইভটিজিংয়ের অভিযোগ করিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মির্জা ইমাম উদ্দিন প্রবাসী আরকান আলীকে ৩০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডাদেশ দেন। মামলা নম্বর ৩৯/২৩। ধারা ১৮৬০ এর ৫০৯ দণ্ডবিধি। 
আরকান আলী অভিযোগ করেন, তিনি ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। কিন্তু তাকে ফোন করতে দেওয়া হয়নি। এমনকী তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়। তিনি আইনি সহায়তা চাইলে তাকে সে সুযোগও দেওয়া হয়নি। তার সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হয়েছে। নিরূপায় হয়ে তিনি ৩০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। তাকে আটকে রাখার কারণে এমিরেটসের ফ্লাইটও ধরতে পারেননি তিনি। চার ঘণ্টা পরে আরেকটি ফ্লাইটে ঢাকা ত্যাগ করেন আরকান আলী। আর এজন্য তাকে গচ্চা দিতে হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। 
আরকান আলী জানান, এয়ারপোর্ট ম্যাজিস্ট্রেট তার কাছে সাদা কাগজে স্বাক্ষর রেখেছেন। তিনি আশঙ্কা করছেন, তার নামে আরো খারাপ কিছু লিখে নিতে পারে সাদা কাগজে। তিনি বলেন, আর কখনো দেশে যাব না। সরকার প্রবাসীদের অধিকার রক্ষার কথা বলে। অথচ একজন বাংলাদেশি আমেরিকান হিসাবে তার কাছে নিষ্ঠুর আচরণ করা হয়েছে। ‘আমি একপ্রকার প্রাণ নিয়ে ফিরে এসেছি। আমি এর বিচার চাই’ বলেন আরকান আলী। 
এদিকে নিউইয়র্কে ফিরে ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে অভিযোগ দায়ের করেছেন আরকান আলী। এছাড়া তিনি নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেটের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে অভিযোগ দায়ের করবেন বলে জানিয়েছেন। 

কমেন্ট বক্স