Thikana News
২২ নভেম্বর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

২৮ অক্টোবর বা তারপর কী হতে পারে?

২৮ অক্টোবর বা তারপর কী হতে পারে?
মফিজুল হুসাইন

২৮ অক্টোবর বিএনপি একটি মহাসমাবেশ ডেকেছে তাদের এক দফা, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ আদায়ের লক্ষ্যে। একই দিন একই দাবিতে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে সমাবেশ ডেকেছে জামায়াতে ইসলামীও। কোনো সন্দেহ নেই, ওইদিন প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করবেন না, এমনকি তাদেরকে রাস্তায় বসে থাকতেও দেবেন না। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগও এই দিনে পাল্টা সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে। তবে ওইদিন কিছু মানুষের হতাহতের ঘটনা, একটি সামরিক তৎপরতা, ২৮ অক্টোবরের এক সপ্তাহের মধ্যে সরকারের বিরুদ্ধে বহুমুখী আন্তর্জাতিক চাপ, সরকারের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বন্ধুদের কাছে সাহায্য প্রত্যাশা, একটা আপস ফর্মুলা এবং তার সূত্র ধরে একটা সংলাপ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

২০০৬ সালের পর থেকে বিএনপি অত্যাচারিত হতে হতে ‘ডু অর ডাই’ সীমানায় এসে ২৮ অক্টোবর একটি মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করবে। দলটির নেতাদের চেয়ে কর্মীরা বেশি প্রত্যয়ী। কারণ তাদের পেছনে দেয়াল, আর সরার জায়গা নেই। সে ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব পরিস্থিতি শান্ত রাখতে চাইলেও সব নিয়ন্ত্রণে থাকবে, সে নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবে না। কারণ কর্মীরা মনে করে, রাস্তায় নেমে শুধু স্লোগান দিলেই দাবি আদায় হবে না। আর যদি পুলিশ বা আওয়ামী লীগ কর্মীরা অতি উৎসাহী হয়ে ওদের প্রতিহত করার চেষ্টা করে, তাহলে সংঘর্ষ ও হতাহত অনিবার্য। এই হতাহতের পরিমাণ অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেলে ২০০৬ সালের এক-এগারোর পুনরাবৃত্তি দেখা যেতেও পারে, যেখানে মইন উদ্দীনরা মাইনাস টু ফর্মুলা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিল।

যদি সরকার অনমনীয় অবস্থান থেকে না সরে যায়, তাহলে আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিমাদের আরেক দফা গোলা সরকারের ওপর নিক্ষিপ্ত হবে। আমেরিকা প্রধানমন্ত্রীর অর্থ জোগানদাতাদের অর্থাৎ কিছু ব্যবসায়ীর ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং অর্থ জব্দ করার ঘোষণা দিতে পারে এবং সেখানে প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের কেউ থাকলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। ইউরোপীয় ইউনিয়ন জিএসপি-সুবিধা বাতিল এবং ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়া অনুরূপ ব্যবস্থার ঘোষণা দিতে পারে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় সরকারবিরোধী কিছু মিডিয়া ক্যাম্পেইন এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে আরও সোচ্চার দেখা যেতে পারে।

সরকার ২০১৪ সালের পুনরাবৃত্তি করতে চাইলে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক মিত্রের সন্ধান করতে তাদেরকে আরও সক্রিয় দেখা যেতে পারে। সে সময়ের মিত্র জাতীয় পার্টি এবার এ সরকারের অধীনে আর নির্বাচন করতে চাইছে না, সে রকম একটা বক্তব্য জি এম কাদের সাহেব দিয়েছেন। আসলে আমেরিকা বা পশ্চিমারা যত বেশি চাপ সরকারের ওপর রাখবে, জাতীয় পার্টি তত দূরে সরে যাবে। সুতরাং শুধু মেনন, ইনু, দিলীপ বড়ুয়া ও মাইজভান্ডারী, তৃণমূল বিএনপি এবং বিএনএফ নিয়ে নির্বাচন করে হাস্যরসের পাত্র হতে সরকার নিশ্চয় চাইবে না। তাই মিত্রের সন্ধানে সরকার সক্রিয় থাকবে।

বর্তমান সরকারের কেউ কেউ ভারতের ওপর এখনো ভরসা রাখছে যে তারা যেকোনোভাবে হোক আমেরিকাকে ম্যানেজ করে নেবে, এমনকি যেনতেনভাবে একটি নির্বাচন করে ফেলতে পারলেও। তাদের এ প্রত্যাশা একেবারেই ভুল। আমেরিকার বাংলাদেশ মিশন বা প্রধানমন্ত্রীকে সরানো ভারতের সম্মতিতেই হচ্ছে। পেন্টাগনের পলিসি মেকাররা বর্তমান সরকারকে তাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করে,  যা এলিট ফোর্স র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা ছিল। সুতরাং, এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বাংলাদেশের বিশ্বস্ত বন্ধু ভারতের চাওয়া-পাওয়ার বিষয়টি অবজ্ঞা করে নেওয়া হবে, এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। ভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আগ্রহের বিষয় তাদের পূর্বাঞ্চলে সাতটি রাজ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনে মদদ দেওয়া বা ওইসব গেরিলাকে অস্ত্র, অর্থ ও ট্রেনিং দেওয়ার বিষয়টি। আমেরিকার মধ্যস্থতায় বা সরাসরি ভারতের সঙ্গে আলোচনায় সে বিষয়টি পরবর্তী সরকার গঠনপ্রত্যাশী বিএনপি যথার্থই আমলে নিয়ে তাদের ২৭ দফা রাষ্ট্র মেরামতের ঘোষণায় উল্লেখ করেছে যে তারা ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশের মাটিতে কোনো বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অভয়ারণ্য হতে দেবে না। ভারতের আরেকটি চাওয়া বাংলাদেশে ধর্মান্ধদের উত্থান। সে কারণে তারা জামায়াতে ইসলামীর মতো একটি শক্তিশালী সংগঠনকে রাজনীতির মাঠে সহযোগী হিসেবে পেয়েও দূরত্ব বজায় রেখে রাজনীতি করছে। এ ছাড়া ভারত বাংলাদেশের জনমতকে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। একসময় ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট খেলা হলে ৮০ শতাংশ মানুষ ভারতকে সমর্থন করত কিন্তু আজ ৮০ শতাংশ মানুষ পাকিস্তানকে সমর্থন করে। পরপর দুটি ম্যানুফ্যাকচারিং নির্বাচনকে সমর্থন দিয়ে ভারত সেই জনমত পরিবর্তনে ভূমিকা রেখেছে, সে উপলব্ধি তারা এখন করেছে। তাই তো ভারতের পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী বলছেন, ‘ভারতের বন্ধুত্ব বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে, কোনো একক দলের সঙ্গে নয়।’ অন্যদিকে ভারতের বাণিজ্যিক স্বার্থ আমেরিকার কাছে বাংলাদেশের চাইতে কয়েক গুণ বেশি। তারা বছরে ১৫৭-১৬০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করে আমেরিকায় কিন্তু বাংলাদেশে মাত্র ১৫-১৮ বিলিয়ন ডলার। তা ছাড়া আমেরিকার সঙ্গে টেকনোলজি বিনিময় ভারতের কাছে অতীব গুরুত্বপূর্ণ, যা তারা সম্প্রতি মোদির সফরে গিয়ে চুক্তি করে এসেছে।
সরকারের আরেক বন্ধু চীন কখনোই আমেরিকার কাজে বাধা দিতে সরাসরি আসবে না। তারা রাজনৈতিক সমর্থন ও ঋণ সহায়তা দিতে পারে। রাশিয়া সরাসরি বাধা না দিলেও পরোক্ষ বাধা দেওয়ার ইতিহাস রয়েছে। বাংলাদেশে যেহেতু সমরাঙ্গন নেই, সেহেতু রাজনৈতিক সমর্থন নিয়েই প্রধানমন্ত্রীকে সন্তুষ্ট থাকতে হবে। তবে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আমেরিকা ও ইউরোপের বিকল্প তারা কিছুতেই হতে পারবে না।

২৮ অক্টোবর বিএনপি কিছু করতে না পারলেও তারপর যে পারবে না, এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। বিএনপির নেতাকর্মীদের মনোবল আরও চাঙা হবে, যখন জামায়াতসহ ইসলামি দলগুলো মাঠে নামবে। সুতরাং রাজপথের চাপ, পশ্চিমাদের চাপ, দুর্বল অর্থনীতির চাপ এবং মিত্রহীনতা আওয়ামী লীগ সরকারকে দুর্বলতম স্থানে নিয়ে যেতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর দেশপ্রেম বা দেশের বৃহত্তর স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী হয়তো সমঝোতার একটা প্রস্তাব দিতেও পারেন, যা করেছিলেন বেগম জিয়া ১৯৯৬ সালে। তারপর একটা সুন্দর নির্বাচন।

-নিউইয়র্ক

কমেন্ট বক্স