Thikana News
১৯ অক্টোবর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪


 

খেলাপির পাশাপাশি বাড়ছে ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ

খেলাপির পাশাপাশি বাড়ছে ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ


আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ঋণ নেওয়ার শর্ত অনুযায়ী সম্প্রতি ব্যাংক খাতের ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ তুলে ধরার জন্য বলা হয় বাংলাদেশ ব্যাংককে। খেলাপি ঋণের পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের মধ্যে রয়েছে পুনঃ তফসিল করা ঋণ, অবলোপন করা ঋণের পুনর্গঠিত অংশ ও আদালতের আদেশে শ্রেণিকৃত নয় এমন ঋণ। সংস্থাটির এমন শর্তের কারণ হলো ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ আড়াল করে রাখতে বেশ কিছু কৌশলের আশ্রয় নিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ঋণ শ্রেণিকরণের ক্ষমতা ব্যাংকগুলোর হাতে ছেড়ে দেওয়া। এ ছাড়া খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিল, অবলোপন এবং ঋণ পুনর্গঠনের মতো পদ্ধতিতেও বড় ছাড় দেওয়া হয়েছে। গত বছরের জুলাইয়ে জারিকৃত নীতিমালায় এসব ছাড় দেওয়া হয়। নতুন নীতিমালায় ডাউন পেমেন্টের হার কমিয়ে বকেয়ার আড়াই থেকে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। আগে ১০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ডাউন পেমেন্ট বা এককালীন জমা দিতে হতো। আবার আগে কোনো ঋণ একবারে সর্বোচ্চ তিন বছরের জন্য পুনঃ তফসিল করা যেত। এখন ৫০০ কোটি টাকার বেশি ঋণ প্রথম দুই দফা আট বছর করে ১৬ বছর, তৃতীয় দফায় সাত বছর এবং চতুর্থ দফায় ছয় বছরের জন্য পুনঃ তফসিল করা যাবে। এভাবে পুনঃ তফসিলের পর নতুন ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে ‘সমঝোতার অঙ্ক’ জমা দেওয়ার শর্তও শিথিল করা হয়েছে।
আইএমএফের শর্ত পরিপালনে ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের হিসাব প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে খেলাপি ঋণের পাশাপাশি অন্যান্য তথ্য যোগ হয়ে ব্যাংক খাতে ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ার তথ্য সামনে এসেছে। গত জুন শেষে প্রায় সাড়ে চার লাখ কোটি টাকায় ঠেকেছে এ মানের ঋণ। পুনর্গঠনকৃত ঋণের হিসাব ছাড়াই বিপদগ্রস্ত ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে রয়েছে খেলাপি, পুনঃ তফসিল ও অবলোপনকৃত ঋণ। প্রকৃত হিসাব পাওয়া গেলে এ অঙ্ক পাঁচ লাখ কোটি টাকায় পৌঁছানোর আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সাল শেষে ব্যাংক খাতের মোট ঋণের ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা বা ২৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ ছিল ঝুঁকিপূর্ণ সম্পত্তি। ছয় মাসের ব্যবধানে এ অঙ্ক ৫৬ হাজার কোটি টাকা বেড়ে গেছে। গত জুন শেষে এটি দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকায়। এর মধ্যে রয়েছে খেলাপি ঋণ ১ লাখ ৫৬ হাজার কোটি এবং পুনঃ তফসিল ও অবলোপনকৃত ঋণ ২ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। তবে ঋণের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই কিছু ঋণ পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় মেয়াদ বাড়িয়ে নেওয়া হয়েছে। এ তথ্য প্রকাশ করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। এ খাতের ঋণকেও বিপদগ্রস্ত ঋণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় বলে জানিয়েছেন ব্যাংকাররা। সাধারণত বড় অঙ্কের ঋণের ক্ষেত্রে এ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়। এ অঙ্ক যোগ হলে ব্যাংক খাতে ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের পরিমাণ কমবেশি পাঁচ লাখ কোটি টাকা হবে বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র।
তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০২৩ সালের জুন শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৪০ কোটি টাকা। বছরের শুরুতে এ অঙ্ক ছিল ১ লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। এ ছাড়া ঋণ পুনঃ তফসিলের পরিমাণও বাড়ছে। ২০২২ সাল শেষে খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিলের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা। গত বছরের শেষ প্রান্তিকে রেকর্ড ১৭ হাজার কোটি টাকা পুনঃ তফসিল করা হয়। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে এ প্রবণতা কিছুটা কমে আসে। প্রথম তিন মাসে পুনঃ তফসিল হয় তিন হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি ঋণ। তবে পরের তিন মাসে ফের পুনঃ তফসিলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় ব্যাংকগুলো। কারণ এ প্রান্তিকে দেশের ইতিহাসে খেলাপি ঋণ রেকর্ড গড়ে দেড় লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রের তথ্যমতে, চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি পরিমাণে ঋণ পুনঃ তফসিল হয়েছে। অর্থাৎ বছরের প্রথম ছয় মাসে ১৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ পুনঃ তফসিল হয়েছে। অন্যথায় খেলাপি ঋণের অঙ্ক দাঁড়াত ১ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। তবে এ তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এদিকে ২৩ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন, ২০২৩ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। নতুন ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন অনুসারে তিনটি কারণে কাউকে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হিসেবে গণ্য করা যাবে। দুই মাসের মধ্যে অর্থ পরিশোধ না করলে ঋণখেলাপির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলাও করা যাবে। তিনি বিদেশ যেতে পারবেন না, ট্রেড লাইসেন্সও নিষেধাজ্ঞা থাকবে। সার্বিক বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ বিতরণে তদারকি বাড়ানোর পরিবর্তে খেলাপিদের একটার পর একটা সুবিধা দিচ্ছে। তাই তারা বেপরোয়া। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের যে পরিসংখ্যান দিচ্ছে, এটি আন্তর্জাতিক মানের নয়। কারণ এখানে অনেক তথ্য থাকে না। আবার খেলাপি কম দেখাতে অনেক তথ্য যোগ করা হয় না। ঋণ পুনঃ তফসিল, পুনর্গঠন ও রাইট অফ করা তথ্য দেওয়া হয় না। পাশাপাশি বিশেষ ছাড় দিয়ে খেলাপি ঋণ কম দেখানো হয় শুধু আর্থিক প্রতিবেদন ভালো দেখানোর জন্য, যা কখনোই মানসম্পন্ন বলা যাবে না।
 

কমেন্ট বক্স