‘মেনোপজ’ বা রজঃবন্ধ হওয়ার আগের অবস্থা হল ‘পেরিমেনোপজ’। আর এই সময়ে ‘হট ফ্লাশেস’, মেজাজের ওঠা-নামাসহ নানান সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে চোখে শুষ্কতার রোগও হয়।
সাধারণত বয়স চল্লিশের কাছাকাছি গেলে এই রোগের লক্ষণ দেখা দিলেও, না জানার কারণে বয়স পঞ্চাশে গিয়ে সমস্যায় ভুগতে হয়।
“এই সমস্যা হওয়ার শতকরা নব্বইভাগ কারণ হল - চোখের পাতার তেল গ্রন্থির কার্যকারিতা হারানো। চোখের পানির জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই তেল প্রয়োজনের তুলনায় কম বা ঘনভাবে নিঃসরণ হয়। যে কারণে চোখের তরলভাব বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। ফলে চোখের উপরিভাগ খুব তাড়াতাড়ি শুষ্ক হয়ে যায়” – ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এভাবেই ব্যাখ্যা করেন যুক্তরাষ্ট্রের নেব্রাস্কা’র চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. শ্যারল চ্যাপম্যান।
চোখের শুষ্কতার কারণে দেখা দেয়- ঝাপসা দেখা, মনে হয় চোখে কিছু পড়েছে সেজন্য খচখচ করে, আলো সহ্য করতে না পারা, জ্বালা করা ও চোখ লালচে হওয়া। মনোপজের সময়ে হরমোনের নানান পরিবর্তনের ফলে নারীদের মাঝে এই সমস্যা দেখা দিলেও বর্তমানে নানান বয়সিদের মাঝেও চোখের শুষ্কতা রোগ দেখা দিচ্ছে।
এর প্রধান কারণ হিসেবে অতিরিক্ত ‘স্ক্রিন টাইম’- অর্থাৎ মোবাইল ফোন, টেলিভিশন বা ল্যাপটপ এই ধরনের যন্ত্রের পর্দার দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকাকে দায়ী করেন ডা. চ্যাপম্যান। এছাড়া বায়ু দূষণ, ঘরে এসি ছাড়ার কারণে শুষ্ক আবহাওয়া, কিছু রোগ যেমন- ডায়াবেটিস, ‘অটোইমিউন সিস্টেম’ ও থাইরয়েডের সমস্যা থেকেও হতে পারে ‘ড্রাই আই ডিজিজি’।
বিভিন্ন ধরনের ওষুধ যেমন- ‘অ্যান্টিহিস্টামিন’, ‘অ্যান্টিডিপ্রেশন’, ‘ডিকনজাস্টেন্স’ বা নাক বন্ধ হলে যে ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা হয়, ব্লাড প্র্রেশারের ওষুধ, ব্রণ নিরামণে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণেও চোখে শুষ্কভাব হতে পারে।
সৌন্দর্য বৃদ্ধি জন্য ‘বোটোক্স ইঞ্জেকশন’ নেওয়ার কারণেও চোখের সাধারণ পানির মাত্রা কমে।
চোখ শুকানোর সমস্যা রোধ করতে
‘ড্রাই আই ডিজিজ’ সাধাণত ধীরে ধীরে হয় আর সমস্যা পুরোপুরি দেখা না দেওয়ার আগ পর্যন্ত বোঝা যায় না। তাই সময় থাকতে চোখের পাতার যত্ন নিতে হবে যাতে তেল নিঃসরণ প্রক্রিয়া ঠিক থাকে।
ডা. চ্যাপম্যান পরামর্শ দেন যে, “প্রতিদিন দাঁত মাজার মতো চোখের পাতারও নিয়মিত যত্ন নিতে হবে। চোখের পাতার সুস্থতা বজায় রাখতে পারলে এই রোগের হাত থেকে বাঁচা সম্ভব হয়।”
এজন্য করণীয় হল-
নিয়মিত চোখের পাতা ও চোখ পরিষ্কার করা যাতে তেল এবং ব্যাক্টেরিয়া জমতে না পারে। এজন্য চিকিৎসকের পরামর্শে চোখের পাতা পরিষ্কারের দ্রবণ ব্যবহার করা যায়।
কুসুম গরমভাপ দেওয়া যাতে চোখের পাতা নমনীয় থাকে ও তেল নিঃসরণ ঠিক মতো হয়। ফলে চোখে তরলভাব বজায় থাকবে।
গরমভাপের সঙ্গে চোখের পাতা আলতোভাবে মালিশ করার মাধ্যমে তেল নিঃসরণ বাড়ানো যায়।
চোখের মেইকআপ ভালো মতো পরিষ্কার করা। শক্তিশালী কোনো পরিষ্কারক চোখের আশপাশে ব্যবহার না করা।
চোখের শুষ্কতার সমস্যা দেখা দিলে করণীয়
দৃষ্টিশক্তি কমা, চোখে সংক্রমণ ও চোখের মনি ক্ষতিগ্রস্ত হয় শুষ্কতার সমস্যা থেকে।
ডা. চ্যাপম্যান বলেন, চোখ শুকানোর রোগ একটি দীর্ঘকালীন সমস্যা। সাধারণত এর কোনো সমাধানও নেই।
তবে সমস্যা কমাতে বা ধীর করতে চোখের সার্বিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হবে। চোখের চিকিৎসক এজন্য ভালো উপদেশ দিতে পারবেন। কৃত্রিম দ্রবণ বা ‘আই ড্রপ’ ব্যবহার, ওষুধ গ্রহণ ও কিছু ক্ষেত্রে বন্ধ থাকা চোখের পাতার তেল গ্রন্থির চিকিৎসা নিতে হতে পারে।
ঠিকানা/এসআর