ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার বালুকদর গ্রামের এক গৃহবধূ ঢাকায় তার স্বামীর কাছে যাওয়ার উদ্দেশ্যে গত সোমবার (১৬ অক্টোবর) সকালে বাড়ি থেকে তার বৃদ্ধ নানার সঙ্গে বের হন। দুপুরের দিকে শম্ভুগঞ্জ এলাকায় তার নানা ভুল করে ঢাকার গাড়িতে না উঠিয়ে তাকে হালুয়াঘাটগামী এক বাসে তুলে দেন।
গৃহবধূর স্বামী তাকে ফোন করে জানতে চান, এখন তিনি কোথায় আছেন। কিন্তু তিনি না বলতে পারায় বাসের হেলপারকে মোবাইল দিতে বলেন। হেলপারের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, তিনি ঢাকার বাসে না উঠে ভুলে হালুয়াঘাটের বাসে উঠেছেন। পরে বাসের ড্রাইভার গৃহবধূকে হালুয়াঘাট বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে ঢাকাগামী বাসে তুলে দেওয়ার আশ্বাস দেন। বিকেল তিনটায় বাসের হেলপার ওই নারীকে বাসস্ট্যান্ডে এক দোকানের সামনে দাঁড় করিয়ে অন্য বাসে তুলে দেওয়ার জন্য সামনে যান।
এ সময় অন্য এক বয়স্ক নারী জানতে চান, তিনি কোথায় যাবেন। সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন হালুয়াঘাট উপজেলার গোবরাকুড়া এলাকার আব্দুল কাদিরের পুত্র ইমাম বাসের ড্রাইভার জাহাঙ্গীর আলম (৩১)। সে ঘটনাটি শুনে ওই নারীর পিছু নেয়। যে বাসে করে ওই গৃহবধূ হালুয়াঘাটে এসেছিলেন, সেই বাসের ড্রাইভার তাকে ঢাকাগামী এক বাসে উঠিয়ে দেন। সুযোগ বুঝে সেই বাসে উঠে পড়ে জাহাঙ্গীর আলম।
সে ওই নারীর সরলতার সুযোগ নিয়ে তাকে বুঝিয়ে বলে, এই বাসে গেলে ঢাকা যেতে গভীর রাত হয়ে যাবে। সে যেন তার বাসে ঢাকায় যায়। তার বাস রিজার্ভ করা আছে এবং ধারা বাজার এলাকায় রাখা। রাত আটটার মধ্যেই ঢাকা নিয়ে যাবে।
ওই নারী সরল বিশ্বাসে তার সঙ্গে ধারা বাজার মুরগি মহল এলাকায় নেমে পড়েন। তারপর জাহাঙ্গীর আলম ওই নারীকে নিয়ে মুরগি মহলের পাশে নির্জন স্থানে রাখা ‘ঢাকা মেট্রো ব- ১৪-৯৬৫৮’ ইমাম বাসে বসতে বলেন।
বিকেল আনুমানিক পাঁচটার দিকে ড্রাইভার জাহাঙ্গীর বাসের দরজা বন্ধ করে ওই নারীকে ধর্ষণ করে। চিৎকার করলে গলা চেপে ধরে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। ধর্ষণের পর সে নারীকে বাসে রেখে বাহির থেকে দরজা বন্ধ করে চলে যায়। এক ঘণ্টা পর আবারো জাহাঙ্গীর ফিরে এসে ওই গৃহবধূকে ফুসলে বিয়ে করবে বলে প্রলোভন দেখায়। রাত ১০টায় জাহাঙ্গীর আলম ইটভাটার রিজার্ভ যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয় এবং ভোরে নারায়ণগঞ্জে পৌঁছায়।
১৭ অক্টোবর সকালে পুনরায় ওই নারীসহ বাস নিয়ে সে হালুয়াঘাটের উদ্দেশে রওনা হয়। বেলা তিনটায় হালুয়াঘাট উপজেলার নাগলা বাজার পৌঁছে বাসের হেলপার ফয়সালকে জাহাঙ্গীর আলম বলে, এই মহিলাকে বিয়ে করেছি, সে তোর নতুন ভাবি। তাকে বাড়িতে নিয়ে যা। আমি রাতে আসব। পরে জাহাঙ্গীর আলম রাতে হেলপার ফয়সালদের বাড়িতে এসে একই পরিচয় দেয় এবং ওই নারীর সঙ্গে রাতযাপন করে দ্বিতীয়বার ধর্ষণ করে।
১৮ অক্টোবর পৌর শহরের পাগলপাড়া এলাকায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে বাসা ভাড়া নেয় এবং তৃতীয়বার ধর্ষণ করে। পরে ওই নারীকে বাসায় রেখে জাহাঙ্গীর সেখান থেকে চলে যায়। অন্যদিকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না ধর্ষণের শিকার গৃহবধূ। পরে সুযোগ বুঝে ১৯ অক্টোবর রাতে ধর্ষণের শিকার গৃহবধূ তার বাবাকে মোবাইলে বিষয়টি জানান। তার বাবা হালুয়াঘাট থানা পুলিশকে ঘটনাটি জানালে তাৎক্ষণিক থানা পুলিশ গৃহবধূকে পাগলপাড়ার ভাড়া বাসা থেকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। পাশাপাশি অভিযান চালিয়ে সেই ইমাম বাসসহ ধর্ষক জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তার করে।
২০ অক্টোবর শুক্রবার সকালে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান হালুয়াঘাট সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আহসান হাবিব।
হালুয়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন চন্দ্র রায় বলেন, এ ঘটনায় হালুয়াঘাট থানায় শুক্রবার সকালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে জাহাঙ্গীর আলমকে আসামি করে থানায় একটি মামলা করেছেন ধর্ষণের শিকার ওই নারী। শুক্রবার দুপুরে আসামিকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। গৃহবধূকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ঠিকানা/এনআই