১৯১৬ সালে তৈরি করা হয় এমএ চিদাম্বরাম স্টেডিয়ামটি। শতবর্ষের পুরোনো এই মাঠটি উপমহাদেশের আদর্শ স্পিন সহায়ক বলেই পরিচিত। ইডেন গার্ডেনের পর ভারতের দ্বিতীয় প্রাচীন এই মাঠেই ঘুরে দাঁড়ানোর ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা মুখ থুবড়ে পড়েন কিউইদের গতির সামনে। ৯ উইকেটে ২৪৫ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের লক্ষ্য দাঁড়াল ২৪৬ রানের।
টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৭৬ রান করে ফর্মে ফেরার আভাস দিয়েছিলেন লিটন। এই ম্যাচেও তার ব্যাটের ওপর ভরসা করেছিলেন বাংলার সব সমর্থক। তবে সেই আশায় গুড়ে বালি। ম্যাচের প্রথম বল থেকে আগ্রাসী ব্যাটিং করতে চেয়েছিলেন লিটন দাস। ট্রেন্ট বোল্টের করা ডেলিভারিটি ছিল পায়ের ওপর। ক্রিজ ছেড়ে কয়েক পা এগিয়ে ফ্লিক করেন লিটন। ফাইন লেগে সহজ ক্যাচ মুঠোয় জমান ম্যাট হেনরি। গোল্ডেন ডাকের তেতো স্বাদ নিয়ে মাঠ ছাড়েন লিটন।
প্রথম বলেই লিটনকে হারানোর পর ক্রিজে আসেন মেহেদী হাসান মিরাজ। দ্বিতীয় উইকেটে প্রতিরোধে গড়ার চেষ্ট করেন তানজিদকে নিয়ে। গড়ে তোলেন ৪০ রানের জুটি। কিন্তু লোকি ফার্গুসনের বলে ধরাশায়ী হন তানজিদ তামিম। ১৭ বলে ১৬ রান করে আবারও ব্যর্থ হয়ে ফিরলেন তামিম। বিশ্বকাপের তিন ম্যাচে তার রানের পরিসংখ্যান ৫, ১, ১৬।
প্রতিরোধ গড়ে তুলেও বেশি সময় টিকে থাকতে পারলেন না মিরাজ। লোকি ফার্গুসনের দ্বিতীয় শিকার হন তিনি। ১২তম ওভারে মিরাজ আউট হন ৪৬ বলে ৩০ রান করে। ৪টি চার মেরেছেন তিনি। মিরাজের উইকেট হারানোর ধাক্কা সামলানোর আগেই সাজঘরের পথ ধরেন নাজমুল হাসান শান্ত। তিন বলের ব্যবধানে ৫৬ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ।
মাত্র ৮ বল ক্রিজে ছিলেন শান্ত। তাতে মন খুলে ব্যাটিং করতে পারলেন কই। গ্লেন ফিলিপসকে বোলিংয়ে আনার প্রথম বলেই কনওয়ের কাছে ক্যাচ তুলে দেন শান্ত। বিদায় নেন ৮ বলে ৭ রান করে। এই ম্যাচেও আক্রমণে এসে প্রথম বলেই উইকেট তুলে নেন গ্লেন ফিলিপস। মূলত ব্যাটিংয়ের জন্য পরিচিত এই অলরাউন্ডারের অফ স্পিনে বাজিমাত করার খ্যাতি আছে। সে কারণে তাকে বলা হয় ‘গোল্ডেন আর্ম’।
চাপে পড়ে যাওয়া বাংলাদেশকে টেনে তোলার দায়িত্ব নেন দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসান। তাদের ৯৬ রানের জুটিতে আশার প্রদীপ জ্বলে উঠেছিল ড্রেসিংরুমে। কিন্তু ৩০তম ওভারের পঞ্চম বলে ঘটে অঘটন।
সাকিব আগের বলটিতে ছক্কা মারেন। পরের বলেই আউট। লোকি ফার্গুসনের তৃতীয় শিকার হয়ে ৪০ রান করে ফিরে যান বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তাতে মুশফিকের সঙ্গে গড়া ৯৬ রানের জুটিটি ভেঙে যায়। ৫৬ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশের হাল ধরেছিল এ জুটি। ১৫২ রানে ৫ম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
সাকিব ফেরার কিছু সময় পরে ম্যাট হেনরির স্লোয়ারে বোকা বনে বোল্ড হয়ে ফেরেন মুশফিকও। তার ৬৬ রানের ইনিংসটিতে বাংলাদেশ আশা দেখছিল। ৭৫ বলের এই ইনিংসে ৬টি চার ও ২টি ছক্কা হাঁকান মুশফিক।
মুশফিকুর রহিমের বিদায়ের পর দ্রুত সাজঘরে ফিরে যান তাওহীদ হৃদয়। ২৫ বলে ১৩ রান করা হৃদয়কে ফেরান ট্রেন্ট বোল্ট। আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে ২০০ উইকেট শিকারের কীর্তি গড়েন বোল্ট। এরপর তাসকিনকে নিয়ে এগোনোর চেষ্টা করেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ৩৪ রানের জুটি গড়েন দুজন।
৪৫তম ওভারে স্যান্টনারের বলে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ারে সজোরে সুইপ খেলেছিলেন তাসকিন। তবে বল গিয়ে স্থান পায় মিচেলের হাতে। আর তাতেই আউট হয়ে ফিরতে হলো তাসকিনকে। বাংলাদেশের ৮ম উইকেটের পতন হলো ২১৪ রানে। ১৯ বলের ১৭ রানের ইনিংসটিতে দুটি ছক্কা হাঁকিয়েছেন তাসকিন।
সেখান থেকে বাংলাদেশকে আড়াইশর কাছে নিয়ে যান মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ২ চার ও ২ ছয়ে তার অপরাজিত ৪১ রানের ইনিংসে কিউইদের সামনে ২৪৬ রানের লক্ষ্য দিতে সমর্থ হয় বাংলাদেশ।
এবার বাংলাদেশের স্পিনারদের সামনে চ্যালেঞ্জ কিউইদের এই রানের মধ্যে বেঁধে রাখার।
ঠিকানা/এনআই