মডেল নোবেল বা ওপাড়ে গিয়ে গান গাইয়ে মাত করা নোবেল ছাড়া আর কোন নোবেল আছে আমাদের? ঘোষণার আগে, নোবেল পাওয়া ক’জনকে চিনি আমরা? বিশেষ করে সাহিত্যে। বেশিরভাগ বছরই সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার ঘোষণার পরে আমরা মুখ-ঠোঁট বাকিয়ে বলে উঠি, এইডা কে বা কিডা? সালমান রুশদি, মুকারামি, কাফকার মতো কয়েকজনকে আমরা অনেকেই চিনতাম না। বা নামও শুনিনি। বিশ্বের সাহিত্য ভাণ্ডারের সঙ্গে আমাদের সংযোগই বা কদ্দূর?
বহু বছর আগে কবি রবীন্দ্রনাথ, আর অনেক বছর পর অমর্ত্য সেন, ড. ইউনূসই আমাদের নোবেল লরিয়েট। এরপরও আমরা কি আমাদের দৈন্যদশা বুঝি? না বুঝলেও বুঝিয়ে দেই কতো কিছু। গালমন্দও করি। বিশেষ করে শান্তিতে নোবেল জয়ী বাংলার কৃতিসন্তান ড. ইউনূসকে আমরা দুস্কৃতকারী বানাতেও ছাড়িনি। পদ্মা সেতু থেকে টুস করে ফেলে দিয়ে চুবিয়ে আনার কথাও কি বাদ গেছে?
তাকে নোবেল দেয়া ঠিক হয়নি বলেও মন্তব্য আছে দেশে। আবার দিলোই যখন, অর্থনীতির লোককে শান্তিতে দিল কেন? শান্তির কী করেছেন তিনি? বড় সজ্জন শিক্ষিত মার্জিত হিসেবে প্রচারিত আওয়ামী লীগের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফের কথা মনে আছে তো? ২০১২ সালের ১০ মে তিনি বলেছিলেন, বিশ্বের কিছু দেশ আছে, যেখানে গিয়ে চিপস্, স্যান্ডউইচ আর হোয়াইট ওয়াইন খেলে জনপ্রিয়তা বাড়ে, সময়মতো নোবেল প্রাইজও পাওয়া যায়! খুব মার্জিত কথা বলে গেছেন তিনি?
সৈয়দ আশরাফ মারা গেছেন বছর পাঁচেক হয়। আর ওবায়েদুল কাদের মরে মরে করেও বেঁচে গেছেন। নোংরা কথার জন্য বেশি দোষী করা হয় ওবায়দুল কাদেরকে। সৈয়দ আশরাফ পরিমাণে কথা কম বলতেন। কাদের সেই তুলনায় বেশি বলেন। কথার বোম ফাটান। কথার ধার-ভার কাছাকাছি ধাঁচেরই। মান্যবররা কতো দেশে যান। চিপস্, স্যান্ডউইচ, হোয়াইট ওয়াইন খেয়ে-খাইয়ে নোবেল প্রাইজ নিয়ে আসা যায় না? নোবেলের চেয়ে লবিতে লবিতে সেল্ফি তোলাও কম কষ্টের?
নইলে নোংরা কথা বলার কোটায় নোবেলের একটি ক্যাটাগরি ঠিক করার লবিংয়ের কথা কি ভাবা যায়? ওই কোটা নিশ্চিৎ হলে প্রতিবছর আমাদের নোবেল নিশ্চিৎ হবে। রাজনীতিকরা সেটি পাবেন অনায়াসেই। কোনো আবেদন বা প্রস্তাবও লাগতে না পারে। নোবেল কমিটিই খুঁজে নেবে আমাদের যারা তলে তলে, খেলা হবে- ধরনের বাত করা নেতাদের। প্রতিপক্ষের কোমর ভাঙা, মাজা ভাঙার বচন দেন। বলতে বলতে এখন এসে বলেছেন, লাফালাফি করলে রাশিয়া থেকে আনা ইউরেনিয়াম বিরোধীদলের নেতাদের মাথায় ঢেলে দেয়ার কথা। অথচ জানি না, ইউরেনিয়াম আর গান পাউডার এক জিনিস নয়। গান পাউডার গরম করে, ইউরেনিয়াম করে ঠাণ্ডা। বেশি কথা বললে সব কিছু বন্ধ করে দেয়ার হুমকি তো আছেই। খাওয়ার খোটার সঙ্গে ধমকের এই রসায়ন আমাদের কোথায় নিয়ে ঠকাতে পারে? বাতকে বাত বললেও ক’দিন পর গুদাম থেকে ৩ কেজি ইউরেনিয়াম লোপাট, কারওয়ানবাজারে আলুর গুদাম থেকে ২ কেজি ইউরেনিয়াম জব্দ বা কক্সবাজারে ইউরেনিয়ামের বিনিময়ে ইয়াবা আমদানীর মতো খবর দেখলে কী করার থাকবে? নাকি ইউরেনিয়ামের সহজলভ্যতার স্বীকৃতি হিসেবে নোবেলের আশা জাগবে?
লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট; ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন, ঢাকা।