Thikana News
১৯ অক্টোবর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪


 

রিজার্ভ নিয়ে সংকটের মুখে বাংলাদেশ

রিজার্ভ নিয়ে সংকটের মুখে বাংলাদেশ


বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে মহাসংকটে বাংলাদেশ। আমদানির লাগাম টেনেও রিজার্ভ ধরে রাখা যাচ্ছে না। অর্থপাচার ঠেকাতে এলসি যাচাই করে দেখা হচ্ছে। রেমিট্যান্স বাড়াতে নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিদেশ ভ্রমণে বিধিনিষেধ আরোপসহ ব্যয় কমানোর চতুর্মুখী পদক্ষেপ নিয়েও রিজার্ভের ক্ষয় রোধ করা যাচ্ছে না। বরং প্রতিদিনই কমছে। এমন পরিস্থিতিতে রিজার্ভের হিসাব নিয়ে চলছে একধরনের লুকোচুরি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে এখন যে প্রকৃত রিজার্ভ আছে, তা দিয়ে শুধু তিন মাসের আমদানি খরচ মেটানো যাবে, অন্য কোনো খরচ নয়। সাধারণত একটি দেশের ন্যূনতম তিন মাসের আমদানি খরচের সমান রিজার্ভ থাকতে হয়। সেই হিসাবে বাংলাদেশ এখন শেষ প্রান্তে রয়েছে। একটি দেশের অর্থনীতির অন্যতম সূচকই হলো বৈদেশিক মুদ্রার এই রিজার্ভ। অন্যদিকে আইএমএফের ঋণ নিয়েও দুশ্চিন্তা বেড়েছে। কারণ সংস্থাটির আরোপিত শর্ত পূরণ না হওয়ায় ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি আটকে যেতে পারে। অন্যান্য দাতাগোষ্ঠীও আইএমএফকে অনুসরণ করতে পারে। বিদেশি সহায়তা বন্ধ হয়ে গেলে রিজার্ভ বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে পৌঁছে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেওয়া তথ্যে বলা হচ্ছে, বর্তমানে দেশের রিজার্ভ ২৭ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। এই পরিমাণ নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, এর পরিমাণ আরও কম। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বলা হচ্ছে, আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী রিজার্ভ এখন ২০ বিলিয়ন ডলারের ঘরে। অর্থাৎ ২ হাজার ৯০ কোটি ডলার। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশ্বস্ত সূত্র বলছে, প্রকৃত রিজার্ভ এখন ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের কম।
২০২১ সালের ২৪ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৪ হাজার ৮০০ কোটি বা ৪৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি। সেই রিজার্ভ এখন কমে হয়েছে ২ হাজার ৬৭৪ কোটি (২৬ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন) ডলার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী, রিজার্ভ বর্তমানে ২ হাজার ৯০ কোটি (২০ দশমিক ৯০ বিলিয়ন) ডলার।
এর বাইরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের আরেকটি হিসাব রয়েছে, যা শুধু আইএমএফকে দেওয়া হয়। প্রকাশ করা হয় না। আইএমএফ সূত্রে জানা গেছে, সেই হিসাবে দেশের প্রকৃত রিজার্ভ এখন প্রায় ১ হাজার ৭০০ কোটি বা ১৭ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত দুই বছরে প্রতি মাসেই রিজার্ভ গড়ে ১০০ কোটি বা এক বিলিয়ন ডলার করে কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের পক্ষে সরকারি ঋণের কিস্তি, সেবা মাশুল, ফি পরিশোধ করার পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর কাছে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করা ছাড়াও সরকারি বিভিন্ন আমদানির জন্য ব্যাংকগুলোকে ডলার দিচ্ছে। এতে করে রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে তিন বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিক্রি করে ১৩ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে বিক্রি করেছে ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশকে দেওয়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের শর্ত ছিল গত জুনে প্রকৃত রিজার্ভ ২ হাজার ৪৪৬ কোটি ডলার, গত সেপ্টেম্বরে ২ হাজার ৫৩০ ডলার এবং আগামী ডিসেম্বরে ২ হাজার ৬৮০ ডলারে রাখতে হবে। কিন্তু শর্ত অনুযায়ী রিজার্ভ রাখতে পারছে না বাংলাদেশ ব্যাংক। আইএমএফের দেওয়া হিসাবপদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী, রিজার্ভ থেকে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দায়, ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রা ক্লিয়ারিং হিসাবে থাকা অর্থ ও স্পেশাল ড্রয়িং রাইট (এসডিআর) হিসেবে থাকা ডলার বাদ দেওয়ার পর পাওয়া যায় প্রকৃত রিজার্ভের হিসাব। সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, আইএমএফের পদ্ধতি অনুযায়ী রিজার্ভ নেই বাংলাদেশের। বর্তমানে আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে রয়েছে। এই দলের আলোচনার অন্যতম প্রধান বিষয় হচ্ছে রিজার্ভের পতন ঠেকানোসহ শর্ত পূরণ পরিস্থিতি পর্যালোচনা।
সাধারণত ব্যাংকগুলোতে ডলার আসে প্রবাসী ও রফতানি আয়, ফ্রিল্যান্সারদের আয়, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ঋণ ও অনুদানসহ বিদেশি বিভিন্ন আয়। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে সীমার বেশি ডলার মজুদ হলে ব্যাংকগুলো তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বিক্রি করে দেয়। এ ছাড়া সরকারি বিভিন্ন ঋণ, অনুদান, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে কর্মরতদের আয় সরাসরি যুক্ত হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে। তখন রিজার্ভ বাড়ে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, প্রবাসী আয় ও রফতানি আয় আগের চেয়ে কমে গেছে। এমনকি বিদেশি ঋণের ছাড়, প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগেও নেই কোনো সুখবর। বলা চলে, ডলারের সব উৎসে চলছে ভাটার টান। অন্যদিকে বিদেশি ঋণের সুদাসল পরিশোধ করতে হচ্ছে আগের চেয়ে বেশি। এ ঋণে সুদের হারও এখন বেশি। অর্থাৎ ডলার আসছে কম কিন্তু পরিশোধ করতে হচ্ছে বেশি। এমন পরিস্থিতি রিজার্ভ সংকটের চাপকে আরও অসহনীয় করে তুলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ এক বছরের ব্যবধানে রিজার্ভ কমেছে ১০ বিলিয়ন ডলার।
এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বোর্ড অব ট্রাস্টির সদস্য ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে রিজার্ভের পরিমাণ যা বলা হচ্ছে, সেটাও দেশের অর্থনীতির জন্য বিপৎসংকেত। এই মুহূর্তে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার যে মজুদ আছে, তা তিন মাসের আমদানি মূল্যেরও কম হয়ে যায়। নিঃসন্দেহে অর্থনীতির জন্য এই পরিমাণ মজুদ একটা বিপৎসংকেত। তিনি মনে করেন, রিজার্ভ কমে যাওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী পণ্য আমদানি করা সম্ভব হচ্ছে না।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, দেশে কত বৈদেশিক মুদ্রা ঢুকছে এবং কত মুদ্রা বেরিয়ে যাচ্ছে, তার হিসাব রিজার্ভ দিয়ে মিলছে না। লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি তৈরি হওয়ায় রিজার্ভ হ্রাস পাচ্ছে। এখন যে রিজার্ভ আছে, তা বিপজ্জনক পর্যায়ে না গেলেও উদ্বেগজনক পর্যায়ে। তিনি বলেন, প্রতি মাসে এক বিলিয়ন ডলার কমছে। এই অবস্থায় চললে একসময় ফুরিয়ে যাবে। তিনি জানান, এই হিসাব বেশ কিছুদিন ধরে ঋণাত্মক। এর অর্থ হলো, আমাদের জানার বাইরে কিছু একটা ঘটছে। তিনি দাবি করেন, দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ১৮ বিলিয়ন ডলারের নিচে।




 

কমেন্ট বক্স