Thikana News
১৯ অক্টোবর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪


 

আইএমএফের ঋণ নিয়ে দুশ্চিন্তায় বাংলাদেশ

আইএমএফের ঋণ নিয়ে দুশ্চিন্তায় বাংলাদেশ


আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের বিষয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কারণ সংস্থাটির দেওয়া শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী খেলাপি ঋণ কমানোর কথা বলা হলেও উল্টো বেড়েছে। কাক্সিক্ষত রাজস্ব আদায় করতে পারেনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এ ছাড়া ঋণের সুদহার, ডলার বাজার ও আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে অস্থির পরিস্থিতি বিরাজমান। এর সঙ্গে বাড়তি শঙ্কা তৈরি করেছে শ্রীলঙ্কার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি স্থগিত হওয়ার খবর। রাজস্ব আহরণে ব্যর্থতার কারণ দেখিয়ে দেশটির ঋণ আটকে দিয়েছে আইএমএফ।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, আইএমএফের ঋণ কর্মসূচি থেকে ছিটকে গেলে বড় বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে দেশের অর্থনীতি। কারণ সংস্থাটির ওপর নির্ভর করছে অন্যান্য দাতাগোষ্ঠীর অন্তত ১০ বিলিয়ন ডলারের ঋণ সহায়তা। বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকাসহ যেসব দাতাগোষ্ঠী ইতিমধ্যে ঋণ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তাও আটকে যেতে পারে। এসব সংস্থা আইএমএফের ঋণ কর্মসূচিকে অনেকাংশে স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে বিবেচনা করে। এ অবস্থায় বিরাট দুশ্চিন্তায় পড়েছে বাংলাদেশ।
আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির আওতায় দ্বিতীয় কিস্তির অর্থছাড়ের আগে শর্ত বাস্তবায়নের বিষয়গুলো পর্যালোচনা করতে বর্তমানে সংস্থাটির একটি দল বাংলাদেশে অবস্থান করছে। তারা সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও বিভাগের সঙ্গে আলোচনায় বাংলাদেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য হলো বাংলাদেশের নিট রিজার্ভ এখন ১৭ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। এটি যদি ধারাবাহিকভাবে কমতে কমতে ১০ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে, তাহলে তা খুব দ্রুত ফুরিয়ে যাবে। এ অবস্থায় রিজার্ভ পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানোর কোনো বিকল্প নেই। একই সঙ্গে লাগামহীন খেলাপি ঋণ ও ব্যাংক-ব্যবস্থার সুশাসন নিশ্চিতে ব্যর্থতার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাখ্যা দাবি করেছে তারা।
ঋণের শর্ত অনুযায়ী, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সেপ্টেম্বরে ২৫ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার মজুদ রাখার কথা ছিল। কিন্তু বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ আছে মাত্র ২১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার। আর নিট বা প্রকৃত রিজার্ভ রয়েছে ১৮ বিলিয়নের নিচে। এ ছাড়া শর্ত ছিল সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার ১০ শতাংশের নিচে থাকতে হবে। কিন্তু এ শর্তও পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমানে সরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ রয়েছে ২৫ দশমিক ০১ শতাংশ। অন্যদিকে রাজস্ব আহরণের কাক্সিক্ষত শর্তও পূরণ করতে পারেনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এনবিআরকে ৩ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেয় আইএমএফ। আলোচ্য সময়ে এনবিআর রাজস্ব আহরণ করেছে ৩ লাখ ৩১ হাজার ৫০২ কোটি টাকা। জানা গেছে, রাজস্ব ও রিজার্ভের লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ দেশকে ঋণ ছাড় করে না আইএমএফ। একই কারণে শ্রীলঙ্কাকে দেওয়া ঋণ প্রতিশ্রুতি স্থগিত করেছে সংস্থাটি।
এদিকে আইএমএফ বলেছে, স্বল্প ও মধ্য আয়ের দেশগুলোর মধ্যে অনেক দেশের ব্যাংক খাত এখন চাপের সম্মুখীন। বৈশ্বিক পরিস্থিতিও এখন আর্থিক দিক থেকে উল্লেখযোগ্য ঝুঁকির মুখে। এ ঝুঁকির কারণে আগামীতে আর্থিক খাতে বড় ধাক্কা আসতে পারে। ধাক্কা মোকাবিলার জন্য এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে। আইএমএফের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। আইএমএফের প্রতিবেদনে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে কিছু বলা না হলেও নিম্ন আয়ের দেশগুলো সম্পর্কে যে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, সেগুলো বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
আইএমএফ চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে। এর তিন দিন পর প্রথম কিস্তিতে ছাড় করে ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার। আগামী নভেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তির প্রায় ৭০ কোটি ডলার ছাড় করার কথা রয়েছে। ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থছাড়ের আগে তাদের দেওয়া শর্ত বাস্তবায়নের অর্থগতি পর্যবেক্ষণেই ঢাকায় আসে আইএমএফ মিশন। ২০২৬ সাল পর্যন্ত সাড়ে তিন বছরে মোট সাত কিস্তিতে পুরো অর্থ দেওয়ার কথা আইএমএফের। এই ঋণ নিতে ছোট-বড় ৩৮টি শর্ত পূরণ করতে হবে বাংলাদেশকে। এসব শর্ত পূরণে ব্যর্থতার কারণে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড় নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, আইএমএফ ঋণ অনুমোদনের সময় আমাদের কিছু শর্ত দিয়েছিল। এর মধ্যে বেশ কিছু শর্ত পূরণ করা হয়েছে। দু-একটি জায়গায় ব্যর্থতা আছে। রিজার্ভ কিছু কম আছে। রাজস্ব আহরণ কম হয়েছে। তবে অনেক কিছু বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ব্যাংকগুলোর আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন প্রকাশের কথা ছিল, কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকাশ করেছে। বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ হিসাবায়ন করা হচ্ছে। এ ছাড়া মুদ্রাবাজারে নির্ধারিত বিনিময় হার প্রবর্তন করা হয়েছে। সুদহারের নতুন নিয়ম চালু করা হয়েছে। তাদের দেওয়া যেসব শর্ত অর্জন হয়েছে তা জানিয়েছি আর যেগুলো অর্জন হয়নি, তা কেন হয়নি তাও জানানো হয়েছে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, এই মুহূর্তে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখতে আমাদের স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশকে অবশ্যই আইএমএফ থেকে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি, বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য উৎস থেকে সহায়তা পাওয়াসহ সম্ভাব্য সব বিকল্পের খোঁজ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, দেশে সামনে একটি নির্বাচন আছে এবং এটি স্বাভাবিক নির্বাচন নয়, কারণ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আগামী দিনগুলোতে অনেক অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে। সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যেন অন্তত ১৫ বিলিয়ন ডলারের নিচে না নামে।

কমেন্ট বক্স