গাজা যেন এখন এক মৃত্যুপুরী। হামাসের হামলার জবাব দিতে অবরুদ্ধ গাজায় ইতিহাসের সবচাইতে ভয়াবহ বিমান হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। লাশের পর লাশে আর জায়গায় কুলোচ্ছে না। এখন তাই একের পর এক লাশ স্তুপ করে শুধু জমা করে রাখা হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যারা কাজ করছেন কাজ করতে যেয়ে পরিচিত স্বজনের বা প্রিয়জনের লাশ পেয়ে যাচ্ছেন। কান্নায়, আহাজারিতে এক হৃদয়বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হচ্ছে সেখানে।
তিন দিন পার হয়ে যাওয়ার পরও তাদের এই বিমান হামলা থামছে না। মুহুর্মুহু হামলায় রক্তাক্ত পুরো গাজা। নিহতের সংখ্যা এরই মধ্যে সাড়ে সাতশ ছাড়িয়েছে। আহত হয়েছে আরও কয়েক হাজার মানুষ। মানুষ প্রাণের ভয়ে ছুটে চলেছে। বাড়িঘর ছেড়ে স্কুল বা সড়কে আশ্রয় নিচ্ছে কয়েক লাখ মানুষ। পরিস্থিতি এমন যে বলা হচ্ছে, গত ৭৫ বছরের ইতিহাসে গাজায় এমন ভয়াবহ বিমান হামলা চালায়নি ইসরায়েল।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার সকালে ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনির স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। জবাবে পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েল। চলমান সংঘাতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৯০০ ইসরায়েলি নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। অন্যদিকে, গাজায় প্রায় সাড়ে সাতশ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। উভয় পক্ষে আহত হয়েছেন হাজারো ব্যক্তি।
হামাসের হামলার পরপরই তাদের ওপর চরম প্রতিশোধ নেয়ার কথা জানায় ইসরায়েল সরকার। সেই অঙ্গীকার বাস্তবে রূপ দিতে গাজায় একের পর বিমান হামলা চালাচ্ছ ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। ২৩ লাখ মানুষের এই অঞ্চলকে চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছে ইসরায়েলি সেনারা। অবরোধের অংশ হিসেবে খাবার থেকে শুরু করে পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস সবকিছু বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। জাতিসংঘ গাজায় পূর্ণ অবরোধের নিন্দা জানালেও সেইদিকে কর্ণপাত করছে না নেতানিয়াহু সরকার। এমনকি মঙ্গলবার রাতে সবকিছু বন্ধ করে দিয়ে বিমান হামলা আরও জোরদার করে তারা।
মঙ্গলবার এক এক্সবার্তায় ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় গণহারে গাজা ত্যাগের পরিমাণ বেড়েছে। ফলে গাজা ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নেওয়া মানুষের সংখ্যা এক লাখ ৮০ হাজারে দাঁড়িয়েছে। এই সংখ্যা সামনে আরও বাড়বে। তাদের মধ্যে এক লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ জন ইউএনআরডব্লিউএর স্কুলগুলোয় আশ্রয় নিয়েছে। তাদের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি থেকে খাবার দেয়া হচ্ছে।
আলা আবু তাইর নামে এক ফিলিস্তিনি বলেছেন, অনেক মানুষ শহিদ হয়েছে। এখনো অনেকে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা। অনেক হয় আহত নয়তো নিহত হয়েছে। গাজার কোনো জায়গা নিরাপদ নয়। তারা সবখানে হামলা করছে।
রাদওয়ান আবু আল-কাস নামে আরেক ফিলিস্তিনি বলেছেন, তারা পুরো অঞ্চল বিমান হামলায় গুঁড়িয়ে দিয়েছে।
ঠিকানা/এসআর


ঠিকানা অনলাইন


