অতীতের শ্রীলঙ্কা হলে হয়তো একটা আশা থাকলেও থাকতে পারত। একসময়ের তারকায় ঠাসা দলটা পরিবর্তনের মধ্যে থাকায় দলে এমন কেউ ছিলেন না যাকে ঘিরে ৪২৯ রান করে জেতার স্বপ্ন দেখতে পারে লঙ্কান সমর্থকেরা। পাহাড়সমান রান তাড়ায় হারের ব্যবধান কমানোর জন্য যতটুকু চেষ্টা করার করে গেছেন লঙ্কান ব্যাটাররা। ৩২৬ রানে থেমে শেষটায় শ্রীলঙ্কার হার ১০২ রানে।
দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে জিততে হলে রানের পাহাড় টপকাতে হতো শ্রীলঙ্কাকে। শুরু থেকে তাই কাউকে না কাউকে মেরে খেলতেই হতো। পাথুম নিশাঙ্কা চাপটা নিতে পারলেন না, কোনো রান ছাড়াই দ্বিতীয় ওভারে ফিরলেন মারকো ইয়েনসেনের বলে বোল্ড হয়ে। প্রবল চাপে পিষ্ট শ্রীলঙ্কা।
দলের বড় হার এড়ানোর লড়াইয়ে শুরুতে লড়লেন কুশল মেন্ডিস। ২৫ বলে তুলে নিলেন ফিফটি। প্রোটিয়া পেসারদের জবাবটা দিচ্ছিলেন একাই। ৮ ছক্কা আর ৪ চারে ৪২ বলে ৭৬ করার পর হার মানতে হলো মেন্ডিসকে। কাগিসো রাবাদার বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিলেন হেনরিখ ক্লাসেনকে। শ্রীলঙ্কার ক্ষুদ্র স্বপ্নের ইতি সেখানেই। চারিথ আসালাঙ্কা ৭৯ ও অধিনায়ক দাসুন শানাকার ৬৮ রানে লঙ্কানদের হারের ব্যবধানটাই কমেছে শুধু।
রানপ্রসবা এই ম্যাচটা ঢুকে গেছে বিশ্বকাপের ইতিহাসের বইয়ে। যেমন এক ইনিংসে বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বোচ্চ ৪২৮ রানের ইনিংস তো আছেই। বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এক ইনিংসে তিন সেঞ্চুরির সঙ্গে বিশ্বকাপে দ্রুততম সেঞ্চুরির কীর্তিও হয়েছে এই ম্যাচে। ৪৯ বলে বিশ্বকাপের দ্রুততম সেঞ্চুরির মালিক এখন থেকে এইডেন মার্করাম। পাশাপাশি দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কা মিলে এই ম্যাচে রান তুলেছে ৭৫৪, যা বিশ্বকাপে এক ম্যাচে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১৯ বিশ্বকাপে নটিংহ্যামে বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া মিলে এক ম্যাচে রান হয়েছিল ৭১৪।
টস হেরে দক্ষিণ আফ্রিকা এত রান করবে, শুরুতে অবশ্য এমনটা বোঝা যায়নি। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই দিলশান মাদুশাঙ্কার বলে ৮ রানে এলবিডব্লিউর ফাঁদে প্রোটিয়া অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা।
শ্রীলঙ্কান বোলারদের মুখের হাসি শেষ বাভুমা ফেরার পরেই। কুইন্টন ডি কক ও রাসি ফন ডার ডুসেন তুলে নিলেন লঙ্কান বোলারদের পেটানোর গুরুভার। দ্বিতীয় উইকেটজুটিতে ১৭৪ বলে ২০৪ রান তুললেন দুজনে। পাল্লা দিয়ে করলেন রান। প্রথম সেঞ্চুরিটা পেলেন ওপেনিংয়ে নামা ডি ককই। ৮৩ বলে ১২ চার ও ৩ ছক্কায় পেলেন শেষ বিশ্বকাপে নিজের প্রথম শতক। ক্যারিয়ারের ১৮তম সেঞ্চুরিকে বড় করা হয়নি ডি ককের। ফিরেছেন পরের বলেই, ঠিক ১০০ করে। লম্বা সময় পর এই জুটি ভেঙেছেন ‘বেবি মালিঙ্গা’ মাথিসা পাথিরানা।
ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরিকে বড় করতে পারেননি ফন ডার ডুসেনও। ১০৩ বলে সেঞ্চুরি করা ডুসেন থেমেছেন ১০৮ রানে। ১৩ চার ও ২ ছক্কায় সাজানো তার ইনিংস। ফেরার আগে এইডেন মার্করামের সঙ্গে চতুর্থ উইকেটে ৬০ রানের জুটি গড়ে গেছেন ডুসেন।
দুই সেঞ্চুরিয়ানকে ফিরিয়ে স্বস্তিতে থাকার সুযোগই পায়নি শ্রীলঙ্কা। লঙ্কান বোলারদের উড়িয়ে দিয়েছেন এইডেন মার্করাম। গড়েছেন বিশ্বকাপে দ্রুততম শতকের কীর্তি। ৩৪ বলে ফিফটি পাওয়া মার্করাম পরের ৫০ করেছেন মাত্র ১৫ বলে। বিশ্বকাপের প্রথম ও ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি মার্করাম তুলেছেন মাত্র ৪৯ বলে। বিশ্বকাপে আগের দ্রুততম সেঞ্চুরিটি ছিল আয়ারল্যান্ডের কেভিন ও’ব্রায়ানের। ২০১১ বিশ্বকাপে বেঙ্গালুরুতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫০ বলে সেঞ্চুরি তুলেছিলেন আইরিশ ব্যাটার। দ্রুততম সেঞ্চুরির কীর্তি গড়ে ৫৪ বলে ১০৬ রানে থেমেছেন মার্করাম। ১৯৬.৩ স্ট্রাইকরেটে ১৪ চার ও ৩ ছক্কা প্রোটিয়া ব্যাটারের। শেষ দিকে ২১ বলে ৩৯ রান করে লঙ্কানদের নাভিশ্বাস আরও বাড়িয়েছেন ডেভিড মিলার।
তিন ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরি পেলেও ম্যান অব দ্য ম্যাচ সেই মার্করামই।
ঠিকানা/এনআই