নিউইয়র্ক সিটি ছেড়ে অনেক মানুষই বাফেলোতে পাড়ি জমাচ্ছেন। সেখানে গিয়ে তারা বাসাবাড়ি কিনছেন, চাকরিবাকরি নিচ্ছেন। কেউ কেউ গাড়ি চালাচ্ছেন। বেশির ভাগ মানুষই সেখানে যাওয়ার পর ভালো আছেন। তবে সেখানে যাওয়ার পর কিছু কিছু দম্পতির সংসারজীবনে কলহ বাড়ছে। কলহ এতটাই বাড়ছে যে তারা একসঙ্গে থাকতে পর্যন্ত চাইছেন না। তারা চাইছেন বিচ্ছেদ। অনেকেই অতিষ্ঠ হয়ে বিচ্ছেদের পথ বেছে নিচ্ছেন। যেসব নারী ডিভোর্স দিতে চাইছেন বা ডিভোর্স দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন, তারা স্বামীর বাড়ি ও সম্পদের মালিকানা চাইছেন না, তারা চাইছেন মুক্তি। দাম্পত্য কলহ নিরসনের পাশাপাশি নিজের শান্তির জন্য ডিভোর্সেই মুক্তি মিলবে বলে আশা করছেন তারা। এ জন্য আইনজীবীদের শরণাপন্ন হচ্ছেন।
এ ব্যাপারে অ্যাটর্নি জান্নাতুল মাওয়া রুমা বলেন, বাফেলোতে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে দিন দিন ডিভোর্সের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। প্রতিদিনই সেখান থেকে একাধিক কল পাই যে তারা ডিভোর্স দিতে চান। যারা ডিভোর্স দিতে চান, তাদের মধ্যে নারীর সংখ্যাই বেশি। ডিভোর্স দেওয়ার মূল কারণ হিসেবে তারা বলছেন, স্বামীর সঙ্গে বনিবনা হচ্ছে না। সন্তানদের নিয়ে স্বামীর সঙ্গে একই বাড়িতে থাকা আর সম্ভব হচ্ছে না। দাম্পত্য কলহ এতটাই বেড়েছে যে তারা ভীষণ কঠিন সময় পার করছেন। স্বামীর কাছ থেকে যথাযথ সম্মান না পাওয়ার কারণে তারা মনে করছেন, একই ছাদের নিচে দিনের পর দিন না কাটিয়ে ডিভোর্স দিলে মুক্তি মিলবে ও শান্তি পাবেন।
অ্যাটর্নি রুমা আরও বলেন, বাফেলোতে থাকা যেসব নারী স্বামীকে ডিভোর্স দিতে চান, তারা স্বামীকে ডিভোর্স দিলে সম্পত্তি পাবেন না, এটা জানেন। তার পরও তাদের কাছে জানতে চাই, কেন তারা ডিভোর্স দিতে চান এবং সম্পত্তি চান না। তখন তারা বলেন, সম্পত্তি লাগবে না, কোনো অর্থও লাগবে না। যত দ্রুত সম্ভব বিবাহবন্ধন থেকে মুক্তি পেতে চান।
এর কারণ কী হতে পারে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি রুমা বলেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দাম্পত্য কলহ চরম পর্যায়ে রয়েছে। মানিয়ে নেওয়ার ও মেনে নেওয়ার সহনশীলতা মানুষের মধ্যে কমে এসেছে। সেখানে জীবনযাত্রার ব্যয় কম বলে একজন নারী চাইলে তার স্বামীর কাছ থেকে আলাদা হওয়ার চিন্তা করতে পারছেন এবং তিনি কাজ করলে নিজেই একটি বাসাবাড়ি কিনতে পারবেন। সেই সঙ্গে তিনি নিজের আয়ে ভালো চলতে পারবেন, সেটাও হতে পারে। নিউইয়র্ক সিটিতে কিন্তু এ রকম সমস্যা বা দাম্পত্য কলহ অনেক ঘরেই আছে। সেখানে চাইলেও নারীরা ডিভোর্স দিতে পারছেন না সহজে। কারণ তিনি স্বামীকে ডিভোর্স দেওয়ার পর একা কোথায় গিয়ে বাসা ভাড়া নেবেন, সেই চিন্তা আগে করতে হয়। এখানে একটি বাসা ভাড়া করে জীবনযাপন করা অনেক ব্যয়সাধ্য ব্যাপার। একজনের আয়ে এখানে সংসার চালানো কঠিন। এ কারণে চাইলেও অনেকেই সংসার ছাড়তে পারেন না। তার পরও নিউইয়র্কেও যে ডিভোর্স হচ্ছে না, তা কিন্তু নয়। এখানেও হচ্ছে, তবে সংখ্যাটা আতঙ্কিত হওয়ার মতো নয়। এখানে বেশির ভাগ মানুষ চেষ্টা করেন সংসারে ঝামেলা থাকলেও তা মেনে নেওয়ার ও মানিয়ে নেওয়ার। যখন দেখেন আর সহ্য করা যাচ্ছে না, কেবল তখনই বিচ্ছেদের কথা চিন্তা করেন।