Thikana News
১৯ অক্টোবর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪


 

সরকারের সামনে এখন ৩ চ্যালেঞ্জ

সরকারের সামনে এখন ৩ চ্যালেঞ্জ


দুয়ারে কড়া নাড়ছে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। নভেম্বর মাসেই জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারের সামনে তিনটি বড় চ্যালেঞ্জ। এগুলো হলো খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা, রেমিট্যান্স বাড়ানো এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমানো। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত এই তিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে না পারলে নির্বাচনের আগে টালমাটাল পরিস্থিতিতে পড়বে সরকার।
চলতি অক্টোবর মাসের শুরুতেই বেশ কয়েকটি ঘটনা সরকারকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। গত এপ্রিল, মে ও জুন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৪ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা। ভোটের আগে এমন তথ্য সরকারের জন্য ইতিবাচক নয়। এদিকে দেশে দীর্ঘ সময় ধরে ডলার সংকট চলছে, এরই মধ্যে রেমিট্যান্স-প্রবাহ নিম্নমুখী হচ্ছে, যা গত ৪১ মাসের মধ্যে এখন সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। তা ছাড়া নিত্যপণ্যের পাগলা ঘোড়ার লাগাম টানতে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে কড়া নির্দেশনা দেওয়ার পরও তা অনিয়ন্ত্রিত রয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ কষ্টে আছে, এটি সরকারের প্রায় সব মন্ত্রী জানেন, অন্তত তিনজন মন্ত্রী মানুষের এই কষ্টের কথা প্রকাশ্যে স্বীকারও করেছেন। কিন্তু বাজার অনিয়ন্ত্রিতই থাকছে। সরকারও আন্তরিকভাবে চাচ্ছে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে কিন্তু পারছে না। এই অনিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতির মধ্যেই ১ অক্টোবর থেকে আবার বেড়েছে গ্যাসের মূল্য। অর্থাৎ মূল্য বৃদ্ধির কোনো ইচ্ছা না থাকলেও সরকার বাধ্য হচ্ছে।
অক্টোবরের শুরুতে খেলাপি ঋণ অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ব্যাংকিং খাতে করপোরেট সুশাসনের অভাব দৃশ্যমান, যার কারণে খেলাপি ঋণের এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তথ্য বলছে, গত এপ্রিল, মে ও জুন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৪ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা। দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এ বছরের জুন পর্যন্ত ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ১০ দশমিক ১১ শতাংশ। ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে মোট বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৪২ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা। সরকারের কড়া নির্দেশ থাকার পরও খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা যায়নি, বরং বৃদ্ধির প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। এই মুহূর্তে খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ করা সরকারের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া সর্বশেষ তথ্য বলছে, সদ্য সমাপ্ত সেপ্টেম্বর মাসে প্রবাসীরা ১৩৪ কোটি ৩৬ লাখ ৬০ হাজার ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১০৯.৫০ টাকা ধরে ১৪ হাজার ৭১২ কোটি টাকা) পাঠিয়েছেন দেশে। এটি গত ৪১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স। এর আগে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে এসেছিল ১০৯ কোটি ২৯ লাখ ৬০ হাজার ডলার। এরপর সেপ্টেম্বরের আগে আর কোনো মাসে এত কম রেমিট্যান্স আসেনি। ডলার সংকটের মধ্যে রেমিট্যান্সের এই চিত্র দেশের জন্য ইতিবাচক নয় বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদেরা। তাদের প্রশ্ন, গত দুই বছরে কাজের জন্য দেশের বাইরে গেছেন ২০ লাখ কর্মী, দেশের বাইরে যখন প্রবাসী বাড়ছে, তখন রেমিট্যান্স দিনকে দিন কমছে কেন? তারা হুন্ডির মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠানোর পথ বন্ধ করতে সরকারকে পরামর্শ দিলেও সরকার তা খুব একটা আমলে নেয়নি। এর ফলে নির্বাচনের ঠিক আগে অর্থনীতির এমন নেতিবাচক তথ্যের মুখোমুখি হতে হচ্ছে সরকারকে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটানো এখন সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, ২০২০ সালে করোনার কারণে হুন্ডি বন্ধ থাকায় ব্যাংকিং চ্যানেলে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল। এখন হুন্ডি বন্ধ করার চ্যালেঞ্জ নিতে পারলে রেমিট্যান্সের বর্তমান নেতিবাচক চিত্র পাল্টে যাবে।
অন্যদিকে দেশে পাগলা ঘোড়ার গতিতে বেড়ে চলা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার আন্তরিক হলেও সিন্ডিকেটের কারণে পেরে উঠছে না। সরকারের শীর্ষ মহল থেকে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে নির্দেশনা দেওয়া হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বাজারে গিয়ে মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করছে। মানুষ প্রশ্ন করছে, কে বেশি শক্তিশালীÑসিন্ডিকেট না সরকার? মানুষের এই প্রশ্নের সরাসরি কোনো উত্তরদাতা না থাকলেও তাদের কিছু আন্দাজ অনুমান আছে। কেউ কেউ মনে করেন, সিন্ডিকেটের সঙ্গে শক্তিমান একধরনের দুষ্টচক্র জড়িয়ে আছে। ফলে দ্রব্যমূল্য ইস্যুতে নির্বাচনের আগে মানুষকে ইতিবাচক ধারণায় ফিরিয়ে আনা সরকারের জন্য আরেক চ্যালেঞ্জ।
দেশের অর্থনীতির এ পরিস্থিতির উন্নতিতে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংককে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক সংকট নিরসনে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ জরুরি। কারণ মূল্যস্ফীতি নিয়ে মানুষের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ মুদ্রানীতির যথাযথ বাস্তবায়ন এবং নতুন করে টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। অন্যদিকে মূল্যস্ফীতির চাপ, ডলারের বাজারে অস্থিতিশীলতা এবং লাগামহীন খেলাপি ঋণ এখন অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে সবার আগে মূল্যস্ফীতি কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। তার মতে, মূল্যস্ফীতি কমাতে পারলে এমনিতেই ডলারের বাজার স্থিতিশীল হয়ে যাবে। সার্বিক বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, রেমিট্যান্স বাড়াতে স্বল্প মেয়াদে কোনো উদ্যোগ সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে বিনিময় হার নিয়ে যে সমস্যা রয়েছে, তা দূর করতে হবে। বাজারভিত্তিক বিনিময় হার কার্যকর হলে হুন্ডি কমবে, এতে রেমিট্যান্স বাড়তে পারে। মধ্য এশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ উন্নত দেশে কর্মী পাঠাতে পারলে রেমিট্যান্সের পরিমাণ বাড়বে। খেলাপি ঋণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে আইনি পদক্ষেপ জোরদার করা ছাড়া তেমন কিছুই করার নেই। এ ক্ষেত্রে আদালতের দীর্ঘসূত্রতা রোধে কাজ করতে হবে। একই সঙ্গে খেলাপিদের জামানত বাজেয়াপ্ত করতে হবে।
 

কমেন্ট বক্স