‘খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা নিয়ে ফখরুল মিথ্যাচার করছেন’—আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের এমন অভিযোগের সমালোচনা করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ৪০১ ধারায় পরিষ্কার বলা আছে—সরকার, সরকার, সরকার। তার (সরকার) ক্ষমতা আছে শাস্তি মওকুফের, সাময়িকভাবে স্থগিতের। দণ্ড মাফ করে বিদেশে যাওয়ার ব্যবস্থা করার। মূল উদ্দেশ্য খালেদা জিয়াকে হত্যা করা।
৪ অক্টোবর বুধবার বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক পেশাজীবী কনভেনশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
‘তলে তলে আপস হয়ে গেছে’—আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্যের মর্মার্থ পরিষ্কার করার আহ্বান জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে এত বেশি তারা (সরকার) ভীত হয়েছে, এত বেশি হতবুদ্ধি হয়ে গেছে যে এখন তাদের সাধারণ সম্পাদক বলছেন, ভয় নাই, ভয় নাই, তলে তলে আপস হয়ে গেছে।’
‘আমরা আছি দিল্লি আছে, দিল্লি আছে আমরাও আছি’—ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্যের বিষয়ে ফখরুল বলেন, ‘আমার প্রশ্ন তার (ওবায়দুল কাদের) কাছে। তিনি কী বলতে চেয়েছেন? দিল্লি কি আপনাদের অপকর্মগুলো জানিয়ে দিয়েছে যে—এভাবেই করতেই থাকো, দরকার নাই নির্বাচনের। দিল্লি কি বাংলাদেশে জোর করেই নির্বাচন ঘোষণা করে দাও বলেছে। তাহলে সেটা পরিষ্কার করে বলেন।’
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তাহলে স্বীকার করলেন এখন পর্যন্ত ভয়ে ছিলেন। আপস হয়েছে কি হয়নি, সেটা আপনারা বললেন। আপনাদের মতো মিথ্যা কথা তো পৃথিবীতে কেউ বলতে পারে না। এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন যে আলোচনা হয়েছে। অথচ আলোচনা হয়নি। ছবি তোলার জন্য কীভাবে দৌড়াদৌড়ি করেছে, সেটা সবাই জানে।’
লন্ডনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্য অশ্লীল হলেও সেখানে কিছু সত্য বেরিয়ে এসেছে দাবি করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আজকের দখলদার অবৈধ প্রধানমন্ত্রী, লন্ডনে তিনি যে বক্তব্য রেখেছেন, তার সেই অশ্লীল, কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের মধ্যেও কয়েকটা সত্য কথা বেরিয়ে এসেছে। সেই সত্য কথার মধ্যে একটা কথা হচ্ছে—এই দেশে যা কিছু ঘটে, তার ইঙ্গিতেই ঘটে, তার নির্দেশেই ঘটে। দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের করে দেওয়ার ব্যাপারে তিনি যে বক্তব্য রেখেছেন, সেখান থেকে এটা স্পষ্ট এই দেশে বিচার বিভাগের কোনো প্রয়োজন নাই, এই দেশে ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের সিদ্ধান্তের কোনো প্রয়োজন নাই, তার সিদ্ধান্তই হচ্ছে সিদ্ধান্ত। পুরো বিষয়টাই হচ্ছে একটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, ভয়ংকর রকমের একটা ঔদ্ধত্য এবং একটি ধারণা যে এ দেশটি হচ্ছে আমার পৈতৃক সম্পত্তি। আমি ছাড়া এখানে আর কেউ নেই। আজকে শেখ হাসিনা অদ্বিতীয় হয়ে গেছেন। উনি ছাড়া আর কেউ নাই।’
ফখরুল বলেন, ‘দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার এই মুমূর্ষু অবস্থায় যারা এই ধরনের উক্তি করে, যারা এই ধরনের রসিকতা করে, তাদের জনগণ ধিক্কার দিচ্ছে। খালেদা জিয়া আমাদের কাছে অনুপ্রেরণা, আমাদের বাতিঘর। আজকে তিনি মৃত্যুশয্যায় বলা যেতে পারে। তিনি পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন যে গণতন্ত্রের প্রশ্নে কোনো আপস নেই। কোনো শর্ত মেনে নিয়ে আমি কোথাও যাব না।’
ফখরুল আরও বলেন, ‘আমরা একটা ভয়াবহ দানবীয় ফ্যাসিস্টের পাল্লায় পড়েছি। সংবিধানে আছে রং হেডেড পারসন নির্বাচনে বৈধ নয়। তাকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই ধরনের রং হেডেড পারসন আমাদের শাসন করছে। এরা অবৈধ, এদের কোনো বৈধতা নেই। এরা নির্বাচিত হয়নি। এরা সংবিধানকে অবৈধভাবে বিকৃত করে জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে।’
বিএনপি সচেতনভাবেই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছে জানিয়ে সরকারের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, ‘মোদ্দা কথা একটাই—আমরা গত দুই বছর ধরে রাস্তায় আন্দোলন করছি। ইতিমধ্যে আমাদের ২২ জনের প্রাণ গেছে। আমরা রোডমার্চ করছি, সমাবেশ করছি, মিছিল করছি, সমাবেশ করছি, অনশন করছি। সচেতনভাবে আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। তার অর্থ এই নয় শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ওপরে যদি কেউ আঘাত করে, আমরা সেই আঘাতের প্রত্যাঘাত করব না।’
সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী। কনভেনশনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরসহ আরও অনেকে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন।
ঠিকানা/এনআই