Thikana News
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

মূলধারার রাজনীতিতে গুরুত্ব বাড়ছে বাংলাদেশিদের

মূলধারার রাজনীতিতে গুরুত্ব বাড়ছে বাংলাদেশিদের সম্প্রতি বাংলাদেশের ৫২তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলের মেয়র এরিক এডাম বাংলাদেশী কমিউনিটির সম্মানে এক রিসিপশন পার্টিতে যোগ দেন -সংগৃহীত


নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী : নিউইয়র্কে বাংলাদেশি কমিউনিটি অনেক বড়। দিন দিন এর আকার বাড়ছেই। নিউইয়র্কের পাঁচ বরোতেই বাংলাদেশি ইমিগ্র্যান্ট ও সিটিজেনরা রয়েছেন। নিউইয়র্ক স্টেটের বিভিন্ন কাউন্টিতে বাংলাদেশিরা আছেন। এ কারণে মূলধারায় বাংলাদেশিদের গুরুত্বও বাড়ছে। যদিও ঠিক কতজন বাংলাদেশি এখানে বাস করেন, এর সঠিক সংখ্যা জানা নেই। একেকজন একেক রকম সংখ্যা বলে থাকেন। তবে সিটি অফিসের এক কর্মকর্তা বলেছেন, এক লাখ বাংলাদেশি এই সিটিতে বাস করেন। বাংলাদেশিরা এখানে নিজ নিজ অবস্থান তৈরি করার চেষ্টা করছেন। অনেকেই ভালো অবস্থান তৈরি করেছেন। বাংলাদেশি কমিউনিটির দুটি শ্রেণি আছে। একটি শ্রেণি কমিউনিটির সঙ্গে পুরোপুরি সম্পৃক্ত। তারা বাংলাদেশিদের যেকোনো ভালো কাজে এবং বিপদ-আপদে পাশে থাকার চেষ্টা করে। অন্য শ্রেণিটি নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত। তারা লেখাপড়া শেষ করে তাদের মতো চাকরি করছে এবং মূলধারার সঙ্গে মিশছে। চাকরির বাইরে তারা বাংলাদেশি কমিউনিটিতে তেমন আসছে না। বলা যায়, কমিউনিটি থেকে তারা অনেকটাই বিচ্ছিন্ন্ন। ফলে নিউইয়র্কে কত সংখ্যক ইমিগ্র্যান্ট বাংলাদেশি আছেন, তার সঠিক পরিসংখ্যান জানা সম্ভব হচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কমিউনিটির অনেক নেতা আছেন, যারা বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে জড়িত কিন্তু তারা তাদের সন্তানদের কমিউনিটিতে আনছেন না। আর নতুন প্রজন্মও কমিউনিটিতে আসতে আগ্রহী নয়। নতুন প্রজন্মের যাদের এ দেশে জন্ম অথবা ছোটবেলায় বাবা-মায়ের সঙ্গে এসেছেন; তারা এখানে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া শেষ করে চাকরিতে যোগ দেন। তারা কমিউনিটির মানুষের সঙ্গে নানা কারণেই মিশছেন না বা মিশতে চাইছেন না। নতুন প্রজন্মকে সামনে আনার জন্য কমিউনিটির কিছু নেতা চেষ্টা করছেন, তবে তারা সব সময় পারছেন না। যারা কমিউনিটির নেতা ছিলেন কিংবা আছেন, এর মধ্যে বেশ কয়েকজনের সন্তান এ দেশে লেখাপড়া করলেও কমিউনিটিতে এসেছেন এবং কমিউনিটির জন্য কাজ করছেন। এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হানিফ-কন্যা শাহানা হানিফ। তিনি নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। মোহাম্মদ এন মজুমদারের অ্যাটর্নি পুত্র রাশেদ মজুমদার কমিউনিটির বিভিন্ন প্রোগ্রামের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন। কমিউনিটির অতি পরিচিত মুখ মাজেদা উদ্দিন ও মাফ মিজবাহর মেয়েও এই কমিউনিটিতে আছেন। তৈয়বুর রহমানের পুত্রও আছেন। তবে নতুন প্রজন্মের বেশির ভাগই নিজেদের মতো থাকতে চান। তারা কমিউনিটি থেকে দূরে থাকতে চান। তাদের অনেকেই মনে করেন, কমিউনিটিতে তারা যেমন পরিবেশ চান, তেমনটা পাচ্ছেন না। তারা এমন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছেন না।
একটি সূত্র জানায়, বাবা-মা দুজনই কমিউনিটির পরিচিতি মুখ। তাদের সন্তানও একজন নির্বাচিত প্রতিনিধি। তিনি নির্বাচিত প্রতিনিধি হলেও বাংলাদেশি কমিউনিটির সবার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছেন না। তার মাকে বলেছেন, তিনি অনেকটাই হাঁপিয়ে উঠেছেন। তিনি চেয়েছিলেন, কমিউনিটির জন্য কাজ করতে কিন্তু পরিস্থিতি তার অনুকূলে নয়। কমিউনিটির মানুষের কাছ থেকে যথাযথ সম্মান না পাওয়ায় তিনি এখন অনেকটাই নিজের গণ্ডিতে থাকতে পছন্দ করেন।
আশার কথা হচ্ছে, নতুন প্রজন্মের কিছু মানুষ কমিউনিটিতে আসতে শুরু করেছেন। সংখ্যাটা বাড়াতে হলে তাদের জন্য আরো জায়গা করে দিতে হবে বলে মনে করছেন কমিউনিটির কয়েকজন নেতা। তারা বলেছেন, অবশ্যই নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে আনতে হবে। কারণ নতুন প্রজন্ম যদি না আসে, তাহলে মূলধারায় নেতৃত্ব তৈরি করা সম্ভব হবে না। তারা এখানে লেখাপড়া করছে, ভালো চাকরি করছে। বেশ সম্মানজনক বেতন পাচ্ছে। কিন্তু তারা কমিউনিটি থেকে নানা কারণেই দূরে। তাদের দূরে রাখা যাবে না। তারা যত বেশি এগিয়ে আসবে এবং বিভিন্ন পদে নির্বাচনে অংশ নেবে, ততই জয়ের সংখ্যা বাড়বে। বিজয়ীরা মূলধারায় নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কথা বলার সুযোগ পাবে। আস্তে আস্তে আমাদের ভোকাল বাড়বে।
নিউইয়র্ক ছাড়াও জর্জিয়া, পেনসিলভানিয়া, কানেক্টিকাট, নিউজার্সিসহ বিভিন্ন স্টেটে হাতে গোনা কিছু বাংলাদেশি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন এবং তাদের অনেকে জয়লাভ করে দায়িত্ব পালন করছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশিদের গুরুত্ব আরো বাড়াতে হলে, অবশ্যই তাদেরকে মেইন স্ট্রিমের সঙ্গে আরো বেশি কাজ করতে হবে। নির্বাচিত প্রতিনিধি হতে হবে। অ্যাটর্নি সোমা সায়ীদ জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে বাংলাদেশিদের মুখ উজ্জ্বল করেছেন।
এদিকে নতুন প্রজন্মের অনেক তরুণ-তরুণী নীরবে কাজ করছেন। তারা কমিউনিটির সঙ্গে সম্পর্ক না রাখলেও মেইন স্ট্রিমে ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন। তারা নিজেদের চেষ্টায় বেশ ভালো করছেন এবং গুরুত্বপূর্ণ পদে যোগ দিচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্যামাইকায় একটি রাস্তার নামকরণ লিটল বাংলাদেশ করা, জ্যাকসন হাইটসে ৭৩ স্ট্রিট বাংলাদেশ স্ট্রিট হওয়া, ব্রঙ্কসে একটি রাস্তার নাম বাংলাবাজার ওয়ে হওয়া, ব্রুকলিনে একটি রাস্তার নামকরণ বাংলাদেশের নামে হওয়া- এগুলো সবই বাংলাদেশিদের অর্জন। চলতি বছরের ৩০ মার্চ বিকেলে বাংলাদেশের পতাকা নিউইয়র্ক সিটির মেয়রের উত্তোলন করাও একটি সাফল্যজনক উদ্যোগ। পাশাপাশি নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের রেজুলেশন পাস এবং রমজান মাসকে বিশেষ মাস হিসেবে রেজুলেশন পাসও উল্লেখযোগ্য সাফল্য। এ ধরনের আরো সাফল্যের জন্য নবীন-প্রবীণ বাংলাদেশিদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশিরা ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন পেশায় সম্পৃক্ত হয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছেন। বাংলাদেশিরা আস্তে আস্তে প্রমাণ করছেন, তারা মূলধারার রাজনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশিদের গুরুত্ব বাড়তে থাকায় মেইন স্ট্রিমের নেতারাও বুঝতে পারছেন, বাংলাদেশি কমিউনিটি একটি শক্তিশালী কমিউনিটি। তাই তারা বাংলাদেশিদের গুরুত্ব দিচ্ছেন। নিউইয়র্কের ইউএস সিনেটর ও সিনেটে মেজরিটি লিডার চাক শ্যুমার বাংলাদেশিদের বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। তিনি যত অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন, এর সব কটিতেই বাংলাদেশিদের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেছেন, এ দেশের অর্থনীতিতে বাংলাদেশিরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। কংগ্রেসমেন গ্রেগরি মিক্স, কংগ্রেসওমেন গ্রেস মেং, আলেকজান্দ্রিয়া ওয়াকাইসও, ইলহান ওমর, জন লু, স্টেট অ্যাসেম্বলিওমেন জেসিকা রামোস, জেসিকা গঞ্জালেস, জেনিফার রাজকুমার, কুইন্স ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি মেলিন্ডা কার্টজ, কুইন্স বরো প্রেসিডেন্ট ডনোভ্যান রিচার্ড, নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর লুইস সেপুলভিদা, নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামস, নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোচুলসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বাংলাদেশি কমিউনিটির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আসছেন। তারা বাংলাদেশিদের এগিয়ে যাওয়ার কথা তুলে ধরছেন। অর্থনীতিতে অবদানের কথা বলছেন। পাশাপাশি তারা সম্মান জানাচ্ছেন। বাংলাদেশিদের মধ্যে যারা বিশেষ অবদান রাখছেন এবং কমিউনিটির জন্য কাজ করছেন, তাদের কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রোক্লেমেশন দেওয়া হচ্ছে।
সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামস এবার তার বাসায় ইফতার পার্টি না করে পাঁচ বরোতে পাঁচটি ইফতার পার্টিতে যোগ দিয়েছেন। ইফতার পার্টিগুলোতে বাংলাদেশি নেতাদের সঙ্গে সৌহার্দ্য ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। তিনি বাংলাদেশি ইমিগ্র্যান্ট কমিউনিটিকে উৎসাহিত করছেন। তাদের অবদানের কথা বলছেন। মেয়র এবার তার গ্রেসি ম্যানশনে ইফতার পার্টির আয়োজন না করলেও ঈদ পুনর্মিলনীর আয়োজন করছেন। সেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। পাশাপাশি তিনি এবার বাংলাদেশি হ্যারিটেজ মানথের উৎসব করেছেন তার বাসভবনে। মার্চে এই অনুষ্ঠান হয়। অন্যদিকে কুইন্স বরো প্রেসিডেন্টও বাংলাদেশি কমিউনিটির জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠান করছেন। অর্থাৎ দিন যত যাচ্ছে, মূলধারায় বাংলাদেশিদের গুরুত্ব তত বাড়ছে।

কমেন্ট বক্স