প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৪ অক্টোবর দেশে ফিরবেন। দেশে ফেরার পরেই আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ চূড়ান্ত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হল, সরকার কি বিরোধী দলগুলোকে নির্বাচনে আনার জন্য কোনো উদ্যোগ নেবেন কিনা? প্রতিবার নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। ২০১৪ সালে তিনি বেগম খালেদা জিয়াকে গণভবনে চায়ের দাওয়াত দিয়েছিলেন। বেগম খালেদা জিয়া সেই চায়ের দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করেন। আর ২০১৮ নির্বাচনে ড. কামাল হোসেন যখন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করতে চান তখন সেই আলাপের ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাদা আলাদা ভাবে তিনি বৈঠক করেন এবং এই বৈঠকের মাধ্যমেই সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালে। এবার যদিও এখন পর্যন্ত সরকারের সঙ্গে সংলাপের কোন সম্ভাবনা দেখছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তবে বিভিন্ন মহল মনে করছেন, এখনো চমকের অনেক কিছু বাকি আছে। প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলে এই ব্যাপারে একটি উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। নির্বাচনের আগে তিনি সকল রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে আহ্বান জানাবেন এবং সকল দলকে অংশগ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করবেন। কারণ আন্তর্জাতিকভাবে তিনি প্রমাণ করতে চাইবেন যে, সরকার একটি অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে আন্তরিক এবং সকল রাজনৈতিক দলকে নিয়ে এই নির্বাচন করার ব্যাপারে আগ্রহী। এই প্রমাণের জন্য প্রধানমন্ত্রী কি উদ্যোগ নেন সেটি দেখার বিষয়।
নির্বাচনকালীন সরকারের ব্যাপারেও এক ধরনের অস্পষ্টতা রয়েছে। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে থাকা সকল রাজনৈতিক দলকে নিয়ে একটি নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের কথা বলেছিলেন এবং সেই সরকারে বিএনপিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সহ আরও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় দেওয়ারও প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু সেই সময় বিএনপি ওই প্রস্তাবে রাজি হয়নি। বরং তারা নির্বাচন বর্জনের পথে হাঁটে। তারপরও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন সরকারে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদেরকে রেখেছিলেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে অবশ্য তিনি কোনো নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করেননি। বরং যে সরকার ছিল সেই সরকারই নির্বাচনকালীন সরকারে পরিণত হয়েছিল। এবার প্রধানমন্ত্রী কি করবেন?
ইতিমধ্যে একটি সংবাদ সম্মেলনে তিনি সংসদে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে একটি নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের ইঙ্গিত করেছেন। তবে তা চূড়ান্ত নয়। বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছেন, প্রধানমন্ত্রী দেশে ফেরার পর আসলে নির্বাচনকালীন সরকারের ব্যাপারটি চূড়ান্ত হবে। এটি নির্ভর করবে নির্বাচনে কারা অংশগ্রহণ করছে, কিভাবে নির্বাচন হচ্ছে তার ওপর। এখন পর্যন্ত নির্বাচনকালীন সরকারের ব্যাপারে সরকারের লোকজনই ধোঁয়াশার মধ্যে আছেন। তারা মনে করছেন, আগামী নির্বাচনে নির্বাচনকালীন সরকার কিভাবে হবে এটি চূড়ান্ত করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কিছুটা বিভ্রান্ত। তাদের কেউ কেউ মার্কিন সমালোচনা করছেন আবার কেউ কেউ এই ভিসা নীতি বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব কিভাবে বিএনপির বিপক্ষে তা যুক্তি তর্ক দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করছেন। তবে এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক কৌশল রয়েছে। তিনি ইতিমধ্যে এ সম্পর্কে কিছু কিছু বার্তা দিয়েছেন। তিনি যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন তেমনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসম্যানদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো রাখার জন্য যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য তিনি কথা বলছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে তিনি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কংগ্রেসম্যানদের সাথেও কথা বলেছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এই বিষয়টি এখন পর্যন্ত গণমাধ্যমে আসেনি। সবকিছু মিলিয়ে মার্কিন নীতি কি হবে আগামী নির্বাচনের আগে তা প্রধানমন্ত্রী আসার পরেই পরিষ্কার হবে। আর এই সমস্ত বিষয়গুলো পরিষ্কার হলেই আগামী নির্বাচন কিভাবে হবে এবং নির্বাচনে বিরোধী দলের আন্দোলন, বাধা কিভাবে সরকার অতিক্রম করবে ইত্যাদি বিষয়গুলো চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে।
ঠিকানা/এসআর